মোগল ঐতিহ্যে ঈদ উদযাপনের অপেক্ষায় ঢাকা

ঈদের আগে রাজধানী ঢাকা এমনিতেই ফাঁকা হয়ে যায়। এবারের টানা নয় দিনের ছুটি ও সুশৃঙ্খলভাবে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা থাকায় অনেকেই আগেভাগেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন। ফলে রাতজাগা চঞ্চল এই নগরী ধীরেই শান্ত রূপ ধরতে শুরু করেছে।
অবশ্য অফিস-আদালত ছুটি হলেও ঢাকার স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেকেই ঝামেলা এড়াতে রাজধানীতেই থেকে যান। তাদের কাছে বাইতুল মোকাররম কিংবা জাতীয় ইদগাহে নামাজের কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো অপরিচিত মানুষগুলোই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য আপন হয়ে ওঠে। আর তাই তো নামাজ শেষে বুক মিলিয়ে ভাগ করে নেন নিজেদের খুশিগুলো।
গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবারই প্রথম ঈদ। ঢাকার হাজার বছরের ইতিহাস ফের মনে করিয়ে দিতে নতুন বাংলাদেশের মুখপাত্ররা এবার ফিরে যেতে চাইছেন প্রাচীন মোগল ঐতিহ্যে। মোগল সম্রাজ্যে ঈদ উদযাপনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঈদ মিছিল৷
ইতিহাসবিদদের মতে, মোগল সম্রাটদের এই মিছিল গিয়ে জড়ো হতো ঈদের নামাজে। মোগলদের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এবার ঢাকায় ঈদ উদযাপনে থাকবে মিছিল। ব্যান্ডপার্টি, ঘোড়ার গাড়ি, ঢোল, বাজনাসহ নানা আয়োজনে ঈদ উদযাপন করবে ঢাকাবাসী। এছাড়াও রাজধানীর ইদগাহ এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত হচ্ছে মানুষকে বরণ করে নেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর কবে উদ্যাপিত হবে, তা জানা যাবে আগামীকাল রোববার। দেশের আকাশে যদি ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে পরদিন সোমবার সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর যদি না দেখা যায়, তাহলে তার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ঈদ উদযাপিত হবে।
ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন ইদগাহ ও মসজিদগুলো ঈদের নামাজের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানিয়েছে, এবার জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর আবহাওয়া খারাপ থাকলে জাতীয় ঈদগাহের পরিবর্তে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে এবার প্রথমবারের মতো আয়োজন হবে পবিত্র ইদুল ফিতরের নামাজ। মোগল আমলের মতো ঈদের উৎসবকে আড়ম্বরপূর্ণ করতে জামাতের পর ঈদ মেলা এবং ঈদ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। অতিথি আপ্যায়নে থাকবে মিষ্টিসহ নানা খাবারের আয়োজন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে ঈদের নামাজের পর সকাল ৯টায় ঈদ মিছিল শুরু হবে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও প্রধান সড়ক হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হবে এই আনন্দ মিছিল। মিছিলে থাকবে ঈদ মোবারক লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড।
এদিকে ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের ছুটি রাজধানীতে কাটাবেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। রাজধানীতে থেকে যাওয়া এসব মানুষের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি সেরেছে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড (শিশু মেলা) ও হাতিরঝিল দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়।
এছাড়া প্রস্তুত রয়েছে রাজধানীর অদূরের ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক। রয়েছে বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী আহসান মঞ্জিল, বলধা গার্ডেন, শিশুপার্ক ও রমনা উদ্যান। এসব বিনোদন কেন্দ্রে চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ।
ঈদের ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা করছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।