একাত্তর এবং চব্বিশ আলাদা কিছু নয়: মির্জা আব্বাসের মন্তব্যের জবাবে নাহিদ ইসলাম

একাত্তর এবং চব্বিশ আলাদা কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনিসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। '২৪ পরবর্তী দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা যারা বলে, তারা একাত্তরের স্বাধীনতাকে খাটো করছে'– বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনিসিপি) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা মনে করি একাত্তর এবং চব্বিশ আলাদা কিছু নয়, বরং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই একাত্তরের স্পিরিট পুনর্জীবিত হয়েছে। একাত্তরে আমরা যেটি চেয়েছিলাম, সেটি ৫৪ বছরে অর্জিত হতে পারেনি বিধায় একটি ফ্যাসিবাদ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চেপে বসেছিল। তাই আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়েছিল। ফলে আমরা একাত্তরের যে সাম্যের কথা বলা হয়েছিল, চব্বিশেও কিন্তু সেই বৈষম্যহীন সমাজের কথাই আমরা বলছি। ফলে যারা একে আসলে পরস্পরবিরোধী বা মুখোমুখিভাবে দাঁড় করাতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ এবং আমরা মনে করি তারা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে—এই যে ছাত্রজনতার বিজয়কে—প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি।'
নাহিদ বলেন, 'একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।'
তিনি বলেন, 'সংস্কার এবং বিচারবিহীন নির্বাচন যদি দেওয়া হয় এবং কেবল কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পুরোনো সংবিধান এবং পুরোনো বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, এবং আমরা মনে করি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের ৪৭-এর আজাদির লড়াই— এই সবকিছুর ভিতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ এবং সম্ভাবনা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। আমরা কেবল ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যাতে সেই সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে না দিই।'
নাহিদ বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এক ধরনের নির্বাচনকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিচার এবং সংস্কারের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে, অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনর্বাসনের জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি এই সবকিছুকেই প্রতিহত করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।'
তিনি বলেন, 'আমরা আজকের এই স্বাধীনতা দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচার এবং অধিকারের জন্য। সেই উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম থেকে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এর ধারাবাহিকতায় আমাদের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান। আমরা মনে করি যে আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং বারবার যেটি বেহাত হয়েছে এবং আমাদের জনগণকে বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, আমাদের যাতে সামনের দিনগুলোতে আর রক্ত দিতে না হয় জনগণের, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা আজকের দিনে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যে গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছি যুগ যুগ ধরে, এবং ২০২৪ সালেও আমাদেরকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে লড়াই করতে হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান করতে হয়েছে, আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে এবং আমাদের শাসন কাঠামো আমাদের যে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার জন্য সেগুলো আবার সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করতে। যেখানে মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং মানুষকে বারবার আর রাস্তায় নামতে হবে না।'
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এই যে নতুন তরুণরা নেমে এসেছে, নতুন সময়ের যে বার্তা, সেই সময়ের বার্তাকে তারা ধারণ করতে পারছে না। এবং আমরা মনে করি বাংলাদেশে বর্তমানে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি যে দাবি তুলেছে, অর্থাৎ বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন, আমরা মনে করি ঠিক সেই পথেই গেলে জাতির একটি উত্তরণ ঘটবে গণতন্ত্রের পথে।'
৫ই আগস্টের আগে এবং পরে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যে কোন ফাটল ধরেছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, 'আমরা মনে করি যে জাতীয় ঐক্যের যে সুযোগ এবং ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, আমরা এখনো সেই ভিত্তিতেই আছি। কিন্তু এখন হয়ত বিভিন্ন দলের অ্যাজেন্ডা আলাদা হচ্ছে। তবে আমরা যদি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাই, দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।'