এপ্রিলে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান?

দেড় দশকেরও বেশি সময়ের যুক্তরাজ্য-বাস শেষে কবে বাংলাদেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান?
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রশ্ন বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারেকের দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই শেষ হওয়ার পর এ জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে সব ধরনের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং সব মামলায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষে আজ (২০ মার্চ) ঢাকার একটি আদালত তারেককে ঘুষ গ্রহণের মামলা থেকে খালাস দিয়েছে, যা তার দেশে ফেরার পথে শেষ বাধাটিও দূর করেছে।
এরমধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার কয়েকদিন পর তারেকও দেশে ফিরতে পারেন।
বুধবার (১৯ মার্চ) লন্ডনে নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছু দিন পরে হয়তো তিনি [তারেক রহমান] দেশে ফিরবেন। একসাথে দুই জন অবশ্যই যাবেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি।'
মালেক বলেন, খালেদা জিয়া এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন। 'আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম ঈদ করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এখন তিনি ঈদের পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন।'
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তার বড় ছেলের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। সেখানে ঈদের ছুটি কাটিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মা ও ছেলে দুজনে একসঙ্গে ফিরবেন বলে জল্পনা থাকলেও বিএনপি নেতারা এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তারেক যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'তারেক রহমান তার নিরাপত্তার বিষয়সহ সবকিছু বিবেচনা করে দেশে ফিরবেন।'
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত সক্রিয় তারেকের প্রত্যাবর্তন এখন বহুল প্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দীর্ঘ লন্ডনবাস
সেনা-সমর্থিত এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একাধিক দুর্নীতির মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন তারেক।
দেশ ছাড়ার সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলের নেতৃত্বের ভূমিকায় ফেরেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) তারেক বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তার রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে বিকল্প শক্তির কেন্দ্র হিসেবে দেখা হত।
তবে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ভাগ্য বদলে যায়।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিন পাওয়ার পর তারেক লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন।
খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেকের বিরুদ্ধে এক-এগারো সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৮৫টি মামলা দায়ের করেছিল।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এক-এগারো সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারেকের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৪-৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিছু বড় মামলার মধ্যে রয়েছে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পত্তির মামলা, সিঙ্গাপুর মানি লন্ডারিং মামলা, নড়াইলে মানহানির মামলা এবং ঢাকার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।'
'এই ছয়টি মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আপিল বিভাগ সবগুলোই তার পক্ষে রায় দিয়েছেন।'
জাকির হোসেন আরও বলেন, 'এই ছয়টি মামলা বাদে ৫ আগস্টের পর অন্যান্য মামলার অভিযোগপত্র খারিজ করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো হয় হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিলেন অথবা স্থগিত করেছিলেন। বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা এই মামলাগুলিতে নাশকতা, চাঁদাবাজি এবং মানহানির অভিযোগ ছিল।'
সর্বশেষ ঢাকার একটি আদালত আজ (২০ মার্চ) বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবাহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় তারেক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন।
২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়। মামলাটিতে ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারেক ও বাবরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চাজশিট দাখিল করে দুদক। পরে ওই বছর ১৪ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকেই তারেকের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা চলছে, তবে বিএনপি নেতারা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তারেকের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তার প্রত্যাবর্তন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ঈদুল ফিতরের পরপরই হোক বা আরও পরে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে তার পুনরাবির্ভাব পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।