খুলনায় ক্লাব দখল করে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়, উচ্ছেদ করল ‘ছাত্র-জনতা’

খুলনা মহানগরের শান্তিধাম মোড়ে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ক্লাব দখল করে নিজেদের কার্যালয় বানিয়েছিল রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)। তবে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ক্লাবটি দখলমুক্ত করেছে স্থানীয় 'ছাত্র-জনতা'। এসময় সংঘর্ষে দুইপক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
পুলিশ জানায়, এনসিপি সমর্থিত 'ছাত্র-জনতা' ওই ক্লাবটি দখল মুক্ত করতে গেলে প্রথমে সেখানে থেকে তাদের পিটিয়ে বের করে দেন গণ অধিকার পরিষদের নেতারা। পরে আরও বেশি সংখ্যায় ফিরে এসে ছাত্ররা ক্লাব পুনরুদ্ধার করেন। এই সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ক্লাবের দখল ছেড়ে পালিয়ে যান।
খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন জানান, সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে পুলিশ ক্লাব ভবনটি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এটি গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন ভবন এবং দ্রুত তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহরের পরিত্যক্ত গণপূর্ত বিভাগের ওই ভবনটি ২০১০ সালে নিজেদের নামে বরাদ্দ নেয় পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র। এরপর ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। তবে গত ২৭ জানুয়ারি গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করে দখলে নেন। পরে সেখানে 'গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়' লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেন।
দখলদারের অভিযোগে সেদিন রাতেই সংগঠনটির খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলামকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে তিনি সেখানে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে কার্যালয়ে তারাবিহর নামাজ আদায়ের সময় ছাত্ররা হামলা চালিয়ে আমাদের বের করে দেয়। এতে আমিসহ ১০ জন আহত হয়েছি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম (বাপ্পী) বলেন, খুলনার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চবিথী ক্লাব—যা ছিল এলাকার সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে গণ অধিকার পরিষদের নামে কিছু চাঁদাবাজ ও দখলদার গোষ্ঠী এটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। তারা ক্লাবকে নিজেদের আস্তানায় পরিণত করে স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিল।
সাজিদুল ইসলাম আরও বলেন, এলাকাবাসী বারবার প্রতিবাদ জানালেও চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য থামেনি। তাই 'ছাত্র-জনতা' দখলদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাব দখলমুক্ত করতে গেলে তারা স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা 'ছাত্র-জনতা'র ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। একপর্যায়ে দখলদাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে এক ফেসবুক পোস্টে নিন্দা জানান গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি লেখেন, খুলনায় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসন যদি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।