মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের ভিডিও অপসারণ চেয়ে আইনি নোটিশ

প্রচলিত আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে 'আমরাও মানুষ' ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর বোন, পরিবারের সদস্যদের জবাবদিহিতামূলক সাক্ষাৎকারের সব ভিডিও অপসারণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে নোটিশে দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ই-মেইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সচিব; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব; বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় বলা আছে, (১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তদ্সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। (২) উপধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করা হইলে উক্ত লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বৎসর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।'
কিন্তু আইনে স্পষ্ট বিধান সত্ত্বেও স্পর্শকাতর এই ঘটনায় মাগুররা ভিকটিম শিশুর ছবি, ভিডিও ও তার পরিচয় শনাক্তকরণের তথ্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিগত ৯ মার্চ এ বিষয়ে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বেশকিছু আদেশ প্রদান করেন। সেসব আদেশে শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সকল বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা মোতাবেক সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধানিষেধ সত্ত্বেও তা (১৪ ধারা) ভঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
আদালত মন্তব্য করেন, 'শিশুটির বোনও একজন শিশু। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ১৪ ধারা অমান্যে যে শাস্তি হতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করতে হবে।'
তাই আদালত তার অপর আদেশে, ভুক্তভোগী শিশু ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এজন্য ঢাকা ও মাগুর জেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে আদেশ দেওয়া হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, 'অথচ আইনের বিধি-নিষেধ এবং হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও যশোরের এক নারী বাইকার কর্তৃক পরিচালিত আমরাও মানুষ নামক ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও ধারণের মাধ্যমে শিশুটির বড় বোনের কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে চাওয়া ও ঘটনার সত্য-মিথ্যা বিষয়ে জবাবদিহিতামূলক ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই নারী কনটেন্ট ক্রিয়েটর একই ঘটনায় একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয় এবং তা দেখে উৎসুক জনতাও ভিডিও ধারণে উৎসাহী হয়ে পড়ে। যার মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারটিকে নতুন করে ভিকটিমাইজ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।'
নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব ভিডিওসহ শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়, এমন সব ভিডিও এবং পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে 'আমরাও মানুষ' ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার ও শিশুটির পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের অনুরোধ করা হয়।
পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য দেশে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে নোটিশদাতা উপযুক্ত আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।