মাগুরায় শিশুধর্ষণ: দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর ভুক্তভোগীর শারিরীক অবস্থার অবনতি

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আজ (১২ মার্চ) সকালে শিশুটি দুবার 'কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট' (আকর্ষিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে বলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
সিএমএইচে তার চিকিৎসার তদারকির দায়িত্বে থাকা মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, 'তার (শিশুটি) অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। সে এখন জটিল পরিস্থিতির সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আজ সকাল আটটার দিকে প্রথমবার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসায় তার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। পরে দ্বিতীয়বার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। সেবারও চিকিৎসায় তা ফিরে আসে।'
তিনি আরও বলেন, 'তার মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থায় আছে। তার গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ৩। মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে কোনো ব্যক্তির চেতনার মাত্রা হলো জিসিএস। মানুষের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৫। জিসিএস ৩ অবস্থাকে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়।'
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, 'ঘটনার সময় শিশুটিকে যখন ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়, তখন তার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। পরদিন বেলা ১১টায় হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত এই অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন না পেয়ে মস্তিষ্কের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিলে মস্তিষ্কের এত ক্ষতি হতো না।'
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাতে ভুক্তভোগী আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে তার বোনের শ্বশুর, যাকে তার ছেলের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে তার মা হাসপাতালে আসেন এবং বিকেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় তাকে ঢামেক হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। তার চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এই বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, গাইনি ও অবস্টেট্রিক্স, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি, অ্যানেসথেসিয়া, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, ইউরোলজি এবং থোরাসিক সার্জারির বিশেষজ্ঞসহ আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।
এদিকে, মাগুরার একটি আদালত মামলার চার আসামিকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। আসামিরা হলেন- ভুক্তভোগীর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪২); তার বোনের স্বামী সজিব শেখ (১৮); শাশুড়ি জাহেদা খাতুন (৪৫); এবং ভাশুর রাতুল শেখ (২০)।
নিরাপত্তাজনিত কারণে রোববার (৯ মার্চ) আসামিদের আদালতে হাজির করতে না পারায় গভীর রাতে শুনানি শুরু হয়।