দীর্ঘ ১ যুগ পর ৭ এপ্রিল আংশিকভাবে চালু হচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

দীর্ঘ এক যুগের প্রতীক্ষার পর অবশেষে আংশিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আগামী ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে, আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করা হবে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর ১২টায় হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আন্তঃবিভাগীয় স্বাস্থ্যসেবা চালুকরণ সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান হাসপাতাল চালুর ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, 'যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করতে হবে। এর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবা পেতে কোনো ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।'
প্রথম ধাপে দুটি বিভাগ চালু, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগ
সভায় জানানো হয়, প্রথম ধাপে হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করা হবে। ৭ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রতিটি ইউনিটে ১০০ জন করে মোট ২০০ রোগী ভর্তি নেওয়া হবে।
পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে অন্যান্য বিভাগ চালু করে হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হবে। চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে প্রয়োজনীয় লোকবল, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আনোয়ারুল কবীর বলেন, 'আমাদের কাছে যদি খুব দ্রুত সবকিছু সম্পন্ন করার প্রত্যাশা করা হয়, তবে তা বাস্তবসম্মত হবে না। আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি।'
তিনি আরও জানান, 'হাসপাতাল চালুর অগ্রগতি তদারকি করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
১৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি হাসপাতাল
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালুর দাবি দীর্ঘদিনের।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৫০০ শয্যার এ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের সময় ও বাজেট বারবার বাড়ানো হয়। তবুও ১৩ বছরেও এটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়নি।
হাসপাতালটি চালুর দাবিতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই ৭ এপ্রিল হাসপাতালের দুটি বিভাগ চালু করা হচ্ছে।
শুধু বহির্বিভাগ চালু থাকায় দুর্ভোগ
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে বহির্বিভাগ চালু করা হয়। তবে সেখানে রোগী ভর্তি বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।
ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যেতে হতো। এতে রোগী ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন।
২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) অস্থায়ীভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, দুটি চারতলা হোস্টেল, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ডরমিটরি, মসজিদসহ বেশ কয়েকটি ভবন হস্তান্তর করা হয়।
তবে হাসপাতালের সেবা চালু না থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যেতে হয়। এতে তাদের অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি বাড়ে।