ঋণ পুনঃতফসিলের মেয়াদ বাড়ল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, ‘এক্সিট’ সুবিধা নিলেই খেলাপি তালিকা থেকে মুক্তি
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মেয়াদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠন করতে পারবেন তারা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পূর্বেঘোষিত ৩০ জুনের পরিবর্তে এই সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষ ঋণ পুনর্গঠনের সময়ও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের সার্কুলার মোতাবেক চলতি বছর জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া ছিল। নতুন সার্কুলার মোতাবেক তা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
এক্সিট সুবিধা শিথিল
ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তি দিয়ে 'এক্সিট' সুবিধার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঋণগ্রহীতার এক্সিটের মেয়াদ চার বছর বছর হলেও সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে খেলাপি হিসেবেই গণ্য করা হতো। এই সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা কিস্তিতে বা এককালীন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পেতেন, কিন্তু তাতে তার লোন স্ট্যাটাসের কোনো পরিবর্তন হতো না।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এই নিয়মে পরিবর্তন এনেছে।
এখন থেকে কোনো ঋণগ্রহীতা এক্সিট সুবিধা নিলে ঋণ পুনঃতফসিলের মতোই তার লোন স্ট্যাটাসও পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ ওই ঋণগ্রহীতা আর খেলাপিদের তালিকায় থাকবেন না।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের শৃঙ্খলা কঠোর করেছে।
নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, আগে এক্সিট সুবিধা নেওয়া অনেক ঋণগ্রহীতা চার বছর পর একবারে পুরো টাকা পরিশোধ করতেন। এখন থেকে আর তা করা যাবে না।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতাকে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং বার্ষিক পরিশোধের পরিমাণ বকেয়া ঋণের ২০ শতাংশের নিচে হতে পারবে না। যদি কোনো ঋণগ্রহীতা যেকোনো একটি ত্রৈমাসিকের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তবে আবার তার নাম খেলাপির তালিকায় যাবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, নতুন এক্সিট সুবিধার আওতায় থাকা ঋণগ্রহীতারা নতুন করে কোনো ফান্ডেড লোন পাবেন না, তবে তারা ঋণপত্র (এলসি) খোলার মতো নন-ফান্ডেড সুবিধাগুলো পাবেন।
সোমবার টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল আলম খান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, এই প্রচেষ্টা ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সারকুলারের আওতায় নিয়মিত গ্রাহকরাও তাদের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো এই প্রজ্ঞাপনকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক এক্সিট পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে। সার্বিকভাবে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।'
