২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩৫ শতাংশ

পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৩৫ শতাংশ হারে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২.১৪ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে ১.৯৬, ৪.৪৮ ও ৪.৮৬ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে যা ছিল যথাক্রমে ৫.৮৭, ৪.৪৭ ও ৪.৬২ শতাংশ। চার প্রান্তিকের সম্মিলিত হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থির মূল্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩.৬৯ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪,৪০১ বিলিয়ন টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩,১৭৭ বিলিয়ন টাকা।
খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কৃষিখাতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.০১ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪.১১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ০.৬২, ৪.০৯ ও ৪.০২ শতাংশ; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ০.৭৬, ১.২৫ ও ২.৪২ শতাংশ।
সে তুলনায়, শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো হয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১.০৮ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন কোয়ার্টারে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৭.৭৮, ১.০৪ ও ৪.৫৫ শতাংশ, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২.৪৪, ৭.১০ ও ৬.৯১ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৯৬ শতাংশ, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩.৬১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫.৫২, ৭.১০ ও ৪.৩১ শতাংশ, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২.৪১, ৩.৭৮ ও ৫.৮৮ শতাংশ।
'অর্থনীতির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছর ছিল বিপর্যয়কর'
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, সামগ্রিক তথ্য অনুযায়ী পুরো অর্থবছরের (২০২৪–২৫) প্রবৃদ্ধির হার সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় কম হবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তিনি বলেন, "বার্ষিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক অনুমান ছিল ৩.৯৭ শতাংশ, কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেটিতে পৌঁছানো এখন আর সম্ভব বলে মনে হয় না।" তিনি আরও যোগ করেন, "এটি হবে কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, যদিও ২০২০ সালের মহামারি্র বছরের তুলনায় সামান্য ভালো।"
ড. জাহিদ হোসেন অর্থবছর ২০২৪–২৫-কে অর্থনীতির জন্য "বিপর্যয়কর বছর" হিসেবে বর্ণনা করেন।
তার ভাষায়, "রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আন্দোলন ও অনিশ্চয়তা সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আঘাত হেনেছে। যেমনভাবে কোভিড স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এ বছর রাজপথের সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা ব্যবসা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সেবাখাতকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।"
তিনি জানান, ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবহন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
"শিল্পখাতের দুর্বলতা মূলত রপ্তানিমুখী শিল্পে মন্দার কারণেই দেখা গেছে। অন্যদিকে কৃষিখাত তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে, বিশেষ করে বোরো মৌসুমের ভালো ফলনে কৃষিতে ৩.০১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে," বলেন তিনি।
ড. জাহিদ আরও বলেন, "সামগ্রিকভাবে, এ বছরের মন্থর জিডিপি প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্নের সম্মিলিত প্রভাবের প্রতিফলন।"