২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও কঠোর মুদ্রানীতি ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক
মুদ্রাস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই–ডিসেম্বর) কঠোর বা সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির ধারা অব্যাহত রাখতে পারে।
গতকাল (২৯ জুলাই) প্রকাশিত 'মুদ্রানীতি পর্যালোচনা ২০২৪-২৫' প্রতিবেদনে এমন আভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এই কঠোর অবস্থানের ফলে নীতিগত সুদের হার ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহে তেমন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
নতুন মুদ্রানীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণে রূপরেখা তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের মুদ্রানীতি হবে 'নিয়মরক্ষার মুদ্রানীতি' — যেখানে নীতিগত সুদহার ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে।
তারা বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত সুদহার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকলেও, জুলাইয়ের ঘোষণায় নীতিগত বড় কোনো পরিবর্তন থাকছে না। মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতি এখনও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক খাতের চাপ এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার মতো বড় কিছু সামষ্টিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সহায়তা করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসি' (সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি) গ্রহণের পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এই ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখতে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধজুড়েই কঠোর মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাহিদা ও সরবরাহ উভয় দিক সামাল দিতে কেবল মুদ্রানীতি নয়, সহায়ক রাজস্বনীতিরও প্রয়োজন রয়েছে।
নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, অর্থনৈতিক নীতির সুসমন্বয়ের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে।
