আগস্ট থেকে নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের আবেদন নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী আগস্ট মাসে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের।
টিবিএসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে গভর্নর মনসুর নিশ্চিত করেছেন, এর আগে যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল, তারাও নতুন করে আবেদন করতে পারবে। তিনি বলেন, 'আমরা আবেদনগুলো যাচাই করে দ্রুতই বাছাইয়ে প্রক্রিয়ায় চলে যাব।'
ঠিক কতগুলো লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে না জানালেও গভর্নর ইঙ্গিত দিয়েছেন, আবেদনের গুণগত মানের ওপরই চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ভর করবে। 'খুব বেশি লাইসেন্স হবে না। ধাপে ধাপে আমরা এগোব।'
তিনি বলেন, সম্ভাব্য ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনাকারীদের ২-৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সক্ষমতা থাকতে হবে। 'ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে সফল হতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিকাশকে মুনাফা করতে ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। নগদকেও হয়তো ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।'
ক্ষুদ্রঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ন্যানো লোন বিতরণ করতে পারবে না। 'এর জন্য তাদের ডিজিটাল ব্যাংক সাবসিডিয়ারি করতে হবে অথবা আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে।'
এখন এমএফএসগুলো ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। তবে গভর্নর ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে সেটা ১ লাখ, দেড় লাখ বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাপ্ত সক্ষমতা, বিনিয়োগ ও দক্ষতা থাকতে হবে।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক 'ডিজিটাল ব্যাংক' গঠনের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করে। পরে একই বছরের ২১ জুন থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। এই সময়ে ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে আটটি প্রাথমিক অনুমোদন পায় এবং দুটি ব্যাংক লেটার অভ কনসেন্ট (এলওসি) পায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত করে।
পরে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া পর্যালোচনার ঘোষণা দেন।
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে লেটার অভ ইনটেন্ট (এলওআই) পাওয়া কড়ি ডিজিটাল চূড়ান্ত লাইসেন্স নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে ব্যর্থ হয়।
কড়ি ডিজিটালের একজন স্পনসর আনিস এ খান টিবিএসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এক মাস আগে ফি-সহ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি।'
আনিস খানের ভাষ্যমতে, ২০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ৭২ কোটি টাকা প্রযুক্তি সহায়তা হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতের অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের
বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছে। সেই সময় ৫২ আবেদনকারীর মধ্য থেকে বেছে নগদ ও কড়ি-কে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
'বাংলাদেশ: কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্পষ্টতা দেশের বেসরকারি খাতের অগ্রগতির বড় বাধা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'চুক্তি ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।'
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান—ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ) এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে প্রতিবেদনটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি স্বেচ্ছাচারী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে, যেখানে 'কিছু আবেদনকারীকে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত লাইসেন্স দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আর অন্যদের একটি অস্পষ্ট "ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো" দেওয়া হয়েছে।'