বন্দরের কাজ শিখে নিলে ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের বহু বন্দর চালাবে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস

বাংলাদেশ যদি ২০৩১ সালের মধ্যে বন্দর পরিচালনার কাজ শিখে ফেলতে পারে, তাহলে ২০৩৬ সাল নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু বন্দর পরিচালনা করবে বাংলাদেশিরা—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আযহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি '৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি, তবে পরবর্তী পাঁচ বছরে—অর্থাৎ '৩৬ সালের মধ্যে—এই কোম্পানিগুলো [বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী বিদেশ কোম্পানি] বিশ্বের যেসব দেশে বন্দর পরিচালনা করে, সেসবের বহু বন্দরই পরিচালনা করবে বাংলাদেশিরা।'
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি পরিচালকদের দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। বর্তমানে এই হৃদপিণ্ড অতি দুর্বল। এই অবস্থায় রাখলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য এই হৃদপিণ্ডকে বড়, মজবুত ও সুঠাম করতে হবে। আর তা করতে হলে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, অভিজ্ঞদের সাহায্য নিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'যাদের আমরা বন্দর ব্যবস্থাপনায় আনছি, তারা যেসব দেশে কাজ করছেন, সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব বা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি।'
ড. ইউনূস আরও বলেন, 'আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা—বিশ্বজুড়ে তারা বন্দর পরিচালনা করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত দ্রুত সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া।'
ভাষণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা ও অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনায় নেওয়া উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে, তাদের প্রতিহত করুন।'
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, 'এটা সম্ভব না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব দূর হবে না। অর্থনৈতিক সংকট কাটবে না।'
তিনি বলেন, '[ভবিষ্যতে] আপনারা যে বন্দরেই যাবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অনেকেই উপরে ওঠার সুযোগ পাবেন। তাদের নিজেদের প্রয়োজনে তারা [বিদেশিরা] আমাদের চাকরি দেবে।'
তিনি বলেন, 'আগে যেকোনো জাহাজে উঠলেই দেখা যেত, নাবিক চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের। বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে, ভবিষ্যতে আমরা যে বন্দরে যাই না কেন, দেখব সেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট আর বরিশালের—অর্থাৎ বাংলাদেশের—লোকেরা রয়েছেন।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বন্দর আধুনিক হলে তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই নয়, বরং নেপাল, ভুটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, 'কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্ন বন্দরকেন্দ্রিক কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। এই এলাকায় গড়ে উঠবে বহু শিল্পাঞ্চল। শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য ও তার দক্ষ ব্যবহারের কারণে গড়ে উঠবে আরেকটি নতুন শিল্প—আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্রে মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প। এটি সৃষ্টি করবে আরেকটি নতুন জগৎ।'
ভাষণে এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ও জানান। তিনি জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে।