রপ্তানি বাড়াতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণে ভর্তুকি বাড়ানোর তাগিদ

রপ্তানি বাড়াতে কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে আগামী বাজেটে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে— প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় ও কর বেয়াত দিতে হবে।
'কৃষিতে বাজেট ২০২৫-২৬ টেকসই প্রবৃদ্ধির রুপরেখা' শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ শনিবার (৩ মে) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে কৃষকরাই সরাসরি উপকৃত হন। তাই কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের উন্নয়ন করতে হবে আমাদের। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে বর্তমানে ফসল সংগ্রহের পর ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, মাছ ভাজা, শুকনা শাকসবজি, ফলের জুস, দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য অঞ্চলভিক্তিক বিশেষ প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল গঠন করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, কৃষিপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা সুবিধা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও একসময় এই হার ২০ শতাংশ ছিল।
ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ভিয়েতনামে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ২০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকি রয়েছে , যার ফলে রপ্তানি গত এক দশকে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে তাদের।
পণ্য সংরক্ষণে সরকারের বাজেট সহায়তা দেয়ার কথা তুলে ধরে মিজানুর রহমান বলেন, সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। জেলা ও উপজেলায় আধুনিক হিমাগার নির্মাণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেল প্রবর্তন করে কাজ করতে হবে। কৃষক থেকে বাজার পর্যন্ত পণ্য পরবহনের ট্যাকিং সিস্টেম চালু করতে হবে। টমেটো, পেঁয়াজ, আম, লিচু ইত্যাদি পঁচনশীল মৌসুমি ফল ও সবজির নষ্ট হওয়া ঠেকাতে— ব্লাস্ট ফ্রিজিং সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি মো. আহসানুজ্জামান লিন্টু বলেন, কৃষকের ছেলেরা কিন্তু এখন কৃষিকাজ করতে চাচ্ছে না। তাই কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে দ্রুত। যখন ফসল তোলার মওসুম হয়— তখন শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। কৃষিপণ্যের দাম— কৃষকের কাছ থেকে সরে গেলেই বেড়ে যায়, তাই কৃষক যেন পণ্য সংরক্ষণ করতে পারে— সেজন্য সরকারকেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার টাকা লুট হয়েছে— অথচ কৃষক সহজে ঋণ পাচ্ছে না। কৃষক যেন সহজে ঋণ পায় সে ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। কৃষক যখন ফসল তুলবে, তখনও যেন ঋণ নিতে পারে— সেটাও চালু করা উচিৎ; কারণ টাকা না থাকায় তখন কম দামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য হন কৃষক। এ ঋণ দেয়া হলে কৃষকের জন্য তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশকে ভর্তুকি থেকে আস্তে আস্তে বের হতে হবে, গবেষণা ও উন্নয়নের অর্থ বেশি খরচ করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া উন্নত দেশ হওয়া যাবে না। আমাদের প্রন্তিক কৃষকের অবস্থান জেনে, তার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শ্রমিকের ন্যয্য মজুরি নিশ্চেত করতে হবে।
তিনি বলেন, খাদ্যর দাম স্থিতিশীল রাখতে ও ফুড নিরাপত্তা ধরে রাখতে— কৃষিতে আধুনিকায়ন করতে হবে। কৃষিতে নারী কর্মীর মূল্যয়ন করতে হবে। এ খাতে নজর রাখতে হবে। কারণ কৃষি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড।