রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করার খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে অসন্তোষ

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার লক্ষ্যে প্রণীত একটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আধুনিকীকরণ, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা এবং স্বাধীন পরিচালনার মাধ্যমে একে আরও টেকসই করা।
গেজেট জারি হওয়ার পর এই অধ্যাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করবে—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
তবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, খসড়াটি মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যেতে পারে। ফলে দুর্বল হয়ে যেতে পারে সংস্কার প্রক্রিয়া।
রাজস্ব সংস্কার কমিটি পৃথকীকরণের বিষয়ে যে সুপারিশ করেছে, তা খসড়ায় ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কিছু কয়েকজন কর্মকর্তা ও কমিটি সদস্য।
কর ও কাস্টমস ক্যাডারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, অর্থনীতি ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিংয়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারদের নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিটি।
কিন্তু খসড়ায় এই সুপারিশকে উপেক্ষা করায় নীতি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রশাসন ক্যাডারদের হাতেই থেকে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
রাজস্ব সংস্কার কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, যেভাবে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে রাজস্ব নীতির নিয়ন্ত্রণ কার্যত প্রশাসন ক্যাডারদের হাতেই চলে যাচ্ছে।
'এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। এর ফলে সেপারেশনের [পৃথকীকরণ] উদ্দেশ্য বাস্তবে পূরণ হবে না,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
কমিটির আরেক সদস্য মো. আমিনুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা পলিসির জন্য যেভাবে সুপারিশ করেছিলাম, সেভাবে আসেনি। আমরা বলেছিলাম ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডার ছাড়াও রাজস্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের পলিসি নির্ধারণে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখার জন্য। কিন্তু খসড়ায় এসব বাদ দেওয়া হয়েছে।'
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) উপ-সচিব এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা রেডওয়ান আহমেদ বলেন, '(প্রশাসন ক্যাডারের হাতে কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার কথা) যারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে কতটুকু ক্লিয়ার, বুঝতে পারছি না।'
তিনি আরও বলেন, 'কেবল খসড়া অনুমোদন হয়েছে, অর্গানোগ্রাম এখনও হয়নি। সেটি হলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।'
এদিকে আইআরডির যুগ্ম সচিব হুমায়ূন কবির বলেন, 'এনবিআরের চেয়ারম্যানই সব করেছেন। খসড়া প্রণয়নে অন্যদের ভূমিকা নেই।'
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আইআরডির সচিবের দায়িত্বেও রয়েছেন। তিনি গতকাল পর্যন্ত ওয়াশিংটনে ছিলেন। মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খসড়া অধ্যাদেশটি শীঘ্রই জারি করা হবে। কিন্তু অধ্যাদেশটি নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বাড়ছে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে।
এনবিআরের কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তারা গত শনিবার ও রোববার আলাদা সভায় তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তারা আগামী শনিবার বড় পরিসরে অর্থ উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছেন।