যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তুলা ব্যবসায়ীদের বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেবে সরকার

বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরকার তুলা ব্যবসায়ীদের বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা শুল্কমুক্ত ফাইবার আমদানি করতে পারেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইতিমধ্যেই বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পাঠানো এক চিঠির পর এ উদ্যোগ নেওয়া হলো। ওই চিঠিতে একটি মার্কিন কোম্পানির পক্ষে এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
একজন ঊর্ধ্বতন এনবিআর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ সংশোধনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কারণ কাজটিতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, যার মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি ভেটিংও আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। কর্মকর্তারা শনিবারও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।'
এই সুবিধা চালু হলে তুলা ব্যবসায়ী ও জিনাররা তুলা দ্রুত আমদানি করতে পারবেন। এতে লিড টাইম কমার পাশাপাশি তুলার দামও কমবে বলে জানান ওই এনবিআর কর্মকর্তা।
গত ২২ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দেওয়া এক চিঠিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি কারগিল ইন্ডিয়া বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত তুলা আমদানির জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা চেয়েছে।
চিঠিতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, 'দেশীয় চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত তুলা অন্য দেশে রপ্তানির অনুমতিও চাওয়া হয়েছে।'
গত ১১ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তর চিঠিটি গ্রহণ করে নীতিনির্ধারণী শাখায় পাঠিয়ে দেয়।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, 'আমদানি-রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করব, যাতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করতে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে।'
তিনি আরও বলেন, 'তুলা আমদানিতে আগে থেকেই শুল্ক নেই। তাই বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দিলে রাজস্ব আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, যদি না কোনো অপব্যবহার ঘটে।'
উপদেষ্টা জানান, সাধারণত সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে সাত দিনের মধ্যে অনুমোদন পেলে তিন মাসের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে, যা উপকারী হবে।
'তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—তুলা ব্যবসা ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা। এই সিন্ডিকেটের কারণেই আমরা নিম্নমানের তুলা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। তুলার দাম সহনীয় করতে হলে এই চক্র ভাঙতে হবে,' বলেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, 'আমরা যদি তুলা ১০ সেন্ট কম দামে কিনতে পারি, তাহলে আমাদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বাড়বে।'
তিনি আরও বলেন, সরকার তুলা জিনারদের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে, যাতে তারা ন্যায্যমূল্য পায় এবং তুলার পর্যাপ্ত ও সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তুলা প্রক্রিয়াকরণ করে তাকে তুলা জিনার বলা হয়। তারা বীজ ও অন্যান্য অপদ্রব্য থেকে তুলার ফাইবারকে পৃথক করে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, কৃষকরা যাতে ভর্তুকি সুবিধা পান ও তুলাচাষে আরও উৎসাহিত হন, সেজন্য সরকার তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
ঢাকার ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশ কটন জিনারস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুদান জিনিং কটন কোং লিমিটেড (সুদান) যৌথভাবে আয়োজন করে।
মার্কিন কোম্পানির চিঠিতে কী বলা হয়েছে?
মিনিয়াপলিসে অবস্থিত ১৬০ বছরের পুরোনো পারিবারিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কারগিল বিশ্বের ৭০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ১২৫টি বাজারে সেবা দিচ্ছে। কোম্পানিটি ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে।
চিঠিতে কারগিলের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গভর্নমেন্ট রিলেশনস-এর পরিচালক ধৃতিমান বিশ্বাস লিখেছেন 'আমরা বাংলাদেশে উচ্চমানের মার্কিন তুলার অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক। তবে অর্ডার দেওয়ার পর বাংলাদেশে তুলা পৌঁছাতে ১০০ দিনেরও বেশি সময় লেগে যায়।
'বর্তমান অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে, বন্দরগুলোতে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের আগে তুলা সংরক্ষণের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হোক। এসব ওয়্যারহাউস ব্যবহারের জন্য কোম্পানিগুলো নির্ধারিত চার্জ অনুযায়ী সরকার বা বেসরকারি সংস্থাকে মাসিক ভাড়া পরিশোধ করতে পারে।'
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় আমদানিকারক ও বস্ত্রশিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর অনুরোধের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই উচ্চমানের মার্কিন তুলা পেতে পারবে।
এছাড়া কাঁচামাল অবিলম্বে ছাড় করা সম্ভব হওয়ায় এলসি দ্রুত নগদায়ন করা যাবে। এতে এলসির সময় কমে আসবে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্যও উপকারী হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ছিল ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার, বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬.৮০ বিলিয়ন ডলার।