জন্মদিনে নিজেই ভক্তদের উপহার দিলেন দীপিকা

পারিবারিক পরিচয় বলে, সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। জাতীয় স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোন তার বাবা। তার দুই মেয়ে দীপিকা আর অনীশা। দুই মেয়েই খেলায় তুখোড়। হাতে তুলে নিলেই ব্যাডমিন্টন র্যাকেট যেন তাদের কথা শুনত! দশম শ্রেণিতে উঠেই স্বপ্ন বদলে গেল প্রকাশের বড় কন্যার। ঠিক করলেন, সবুজ কোর্ট নয়, রূপালি পর্দায় দাপিয়ে বেড়াবেন।

দীপিকার এই চাওয়ায় কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি প্রকাশ এবং তার স্ত্রী উজ্জ্বলা পাড়ুকোন। দীপিকাও ক্রমশ নিজেকে তৈরি করতে থাকেন অভিনয়ের জন্য। শুরু করেন মডেলিং। প্রথম সারির বিজ্ঞাপনের প্রচার মুখ ছিলেন তিনি। তবে অভিনয় দুনিয়ার নজর কাড়েন ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন দিয়ে। স্রেফ পাজামা-টপ পরা দীপিকার মুখের সারল্য, ঝলমলে হাসি ভাল লেগেছিল বলিউডের।
দীপিকা এরপরেই সুযোগ পান হিমেশ রেশমিয়ার মিউজিক ভিডিও 'নাম হ্যায় তেরা'-য় (২০০৬)। সেই তার প্রথম সাফল্য। যেখান থেকে তিনি এক লাফে শাহরুখ খানের বিপরীতে। ফারাহ খানের ছবি 'ওম শান্তি ওম'-এ। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন নায়িকা। আর পরিচালকের কাল ঘাম ছুটিয়েছিলেন! দীপিকা তখনও অভিনয়ের 'অ' জানতেন না। ফলে, প্রতি দৃশ্যে তিনি ফারাহর কাছে বকুনি খেতেন। তার শোধ তুলতেন সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। একেক সময় এতটাই জ্বালাতেন যে ফারাহর মনে হত, এখনই বের করে দেন দীপিকাকে সেট থেকে! পরে তারাই খুব ভাল বন্ধু হয়ে ওঠেন।

রাতারাতি জনপ্রিয়। পরের বছরে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা। 'বাচনা অ্যায় হাসিনো'য় রণবীর কাপুরের বিপরীতে তিনি। ছবি সুপার ফ্লপ। দীপিকার অভিনয় নিয়েও হয় সমালোচনা। এ দিকে 'দীপবীর' জুটি সুপার হিট! ওই সময় থেকেই রণবীরের সঙ্গে প্রেম অভিনেত্রীর।
তবে সে সময় প্রেমের পাশাপাশি অভিনয়েও মন দিয়েছেন 'মাস্তানি'। অনুপম খেরের অভিনয় শেখানোর স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ধীরে ধীরে তার অভিনয় ধারালো হয়েছে। তিনি রণবীরের প্রেমে ভেসেছেন।
দীপিকা তখনও জানতেন না, জীবন তাকে কী দিতে চলেছে? একের পর এক ছবিতে কাজ আর প্রেম। ভেবেছিলেন এমনি করেই বুঝি দিন কাটবে। হঠাৎই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন বলিউডের 'ক্যাসানোভা'! দীপিকার চোখে সেই প্রথম অন্ধকার নেমেছিল। ছবির খারাপ ব্যবসা, অভিনয় নিয়ে কটুক্তি শুনেও যে মেয়ে ভেঙে পড়েননি সেই মেয়ের আত্মবিশ্বাস এবার খানখান।

টানা তিন মাস দীপিকা রোজ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। রোজ গুঁড়িয়ে গিয়েছেন। মানসিক দিক থেকে তিনি নাকি এতটাই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন যে তাকে খাটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন প্রকাশ-উজ্জ্বলা। যেন পালিয়ে না যেতে পারেন, যেন নিজেকে শেষ না করে দেন দীপিকা।
এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত একা ঘরে কাটাতেন। সারাক্ষণ কান্নাকাটি। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন মা-বাবা। আর আড়ালে চোখের পানি ফেলতেন তারা। দীপিকা পরে নিজেই জানিয়েছেন, ওই তিন মাস তিনি যেন অন্ধকার গুহায় বন্দি ছিলেন। যত চেষ্টা করেছেন আলোর মুখোমুখি হওয়ার, অন্ধকার যেন বেশি করে গ্রাস করত তাকে।
বলিউড ভেবেছিল, দীপিকা আর ফিরবেন না। মায়ানগরী ভুলে গিয়েছিল, তিনি খেলোয়াড়ের মেয়ে। জীবন তার কাছে ব্যাডমিন্টন কোর্টের মতোই। তাই প্রতিদিন নিজের ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলোকে জড়ো করেছেন। মনের জোরে তাদের জোড়া লাগিয়েছেন। শেষে এক দিন উঠে দাঁড়িয়েছেন। সেই দীপিকার চোখের তলায় গাঢ় কালি! খাওয়া-ঘুম বন্ধ, চেহারার জৌলুস উধাও। আবারও জোর করে হেসেছেন। ভাল ভেবেছেন। ভাল থাকার চেষ্টা করেছেন।

তারপরেই ২০১৩ সালে ফিরেন প্রবলভাবে। এক বছরে দুটো জনপ্রিয় ছবির নায়িকা তিনি। 'ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি' আর 'চেন্নাই এক্সপ্রেস'। প্রথম ছবির নায়ক সেই রণবীর কাপুর!
সাল ২০১৫। সঞ্জয় লীলা বানসালির 'গালিও কা রাসলীলা: রামলীলা'য় তিনি লীলা। রণবীর সিং হলেন রাম। এই ছবিতে দীপিকার অভিনয়ে থমকে গিয়েছিল গোটা ভারত। বাস্তবের 'লীলা' পেয়েছিলেন তার জীবনের 'রাম'কে। এই ভালবাসায় মন বসাতে অনেকগুলো বছর সময় লেগেছিল দীপিকার। তিনি ভালবাসায় বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। বিশ্বাস হারিয়েছিলেন মানুষের ওপর থেকেও।
দীপিকা জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষিত হতে হতে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছেন। শাহরুখ খানের সমান পারিশ্রমিক দাবি করতে পেরেছেন। পরিচালক সঞ্জয়ের একের পর এক ছবির জনপ্রিয় নায়িকা হয়েছেন। নিজে ছবি প্রযোজনাও করেছেন।
অতীতের ভয়, নিরাপত্তাহীনতা আজও তাড়া করে ফেরে দীপিকাকে। ঘরে-বরে থিতু হয়েও অভিনেত্রী মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন, তার হাতে আর ভাল চরিত্র নেই! তাকে আর কেউ নিত্য নতুন চরিত্রের জন্য ডাকছে না। অভিনয় ছেড়ে গেলে কী নিয়ে বাঁচবেন তিনি? তার যে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। অনেক কিছু দেওয়া বাকি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে।

আজ এই অভিনেত্রী ৩৬ বছরে পা রাখলেন। জন্মদিন উপলক্ষে নিজেই ভক্তদের দিয়েছেন উপহার- প্রকাশ করেছেন নিজের নতুন সিনেমা 'গেহরাইয়া'র একগুচ্ছ পোস্টার।
শকুন বাত্রার এই ছবিতে একেবারে অদেখা অবতারে ধরা দেবেন দীপিকা পাড়ুকোন। সম্পর্কের গভীরতার গল্প বলবে 'গেহরাইয়া'। 'কাপুর অ্যান্ড সনস' পরিচালকের এই ছবিতে দীপিকার চরিত্রের নাম আলিশা। দাম্পত্য ও পরকীয়ার বেড়াজালে আটকে থাকা আলিশার কাহিনি উঠে আসবে এই ছবিতে। কেমনভাবে সম্পর্কের পালটে যাওয়া সমীকরণ জটিলতা তৈরি করবে আলিশার জীবনে তুলে ধরবেন শকুন বাত্রা। ছবিতে জেনের চরিত্রে রয়েছেন সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, অন্যদিকে অনন্যা পাণ্ডেকে দেখা যাবে টিয়ার চরিত্রে। তাদের ক্যারেক্টর লুকের পোস্টারও সামনে এসেছে আজ।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস