চড়-কাণ্ডের পর ক্রিস রককে উইল স্মিথের চড় মারার সমর্থনে কঙ্গনার পুরনো পোস্ট ভাইরাল

২০২২ সালে অস্কারের মঞ্চে উইল স্মিথ চড় মেরেছিলেন ক্রিস রককে। স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেটকে নিয়ে রসিকতা করায় মঞ্চে উঠে সঞ্চালক রকের গালে চড় মারেন হলিউড তারকা। উইল স্মিথের এ কাজে সমর্থন দিয়েছিলেন বলিউড তারকা কঙ্গনা রানাওয়াত।
এখন চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সিআইএসএফ কনস্টেবলের হাতে চড় খাওয়ার পর যারা এ ঘটনায় সমর্থন দিয়েছেন, তাদের রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন কঙ্গনা। এর পরই আবার আলোচনায় উঠে এসেছে স্মিথকে সমর্থন দিয়ে করা অভিনেত্রীর সেই পুরনো পোস্ট।
২০২২ সালে ক্রিস রককে চড় মারার ঘটনায় অস্কার থেকে ১০ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছে স্মিথকে। এ তারকা নিজেও ক্ষমা চেয়েছিলেন। আর তার চড়-কাণ্ড নিয়ে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল মানুষ। ওই সময় কঙ্গনা এক ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে রককে স্মিথের চড় মারা ছবি শেয়ার করে লেখেন লেখেন, স্মিথের জায়গায় থাকলে তিনিও একই কাজ করতেন।
কঙ্গনার ইনস্টাগ্রামের স্টোরির যে স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে লেখা: 'কেউ যদি আমার মা বা বোনেদের অসুস্থতাকে একঝাঁক নির্বোধের সামনে হাসির খোরাক করে তোলে, তাহলে উইল স্মিথের মতো আমিও তাকে সপাটে চড় মারব। …একদম সঠিক কাজ। …আশা করি তিনি আমার লকআপ-এ (কঙ্গনা সঞ্চালিত রিয়েলিটি শো) আসবেন।'
কেন সেই পুরনো পোস্ট আবার ভাইরাল?
বিজেপির টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে জিতে দিল্লি যাওয়ার পথে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স-এর (সিআইএসএফ) কনস্টেবল কুলবিন্দর কউরের হাতে চড় খান কঙ্গনা। 'কৃষকদের অসম্মান' করার জন্য তিনি বলিউড তারকাকে চড় দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কৃষক বিক্ষোভের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া পাঞ্জাবের নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। সে কারণেই তার ওপর ক্ষোভ ছিল পাঞ্জাবের বাসিন্দা কুলবিন্দরের।
এরপরই কঙ্গনার পক্ষে-বিপক্ষে কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেছে গোটা ভারত। এ চড়-কাণ্ডে যারা কুলবিন্দরকে সমর্থন দিয়েছেন, তাদের রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী।
এক টুইট বার্তায় কঙ্গনা লিখেছেন, 'প্রত্যেক ধর্ষক, খুনি, চোরের অপরাধের নেপথ্যে জোরালো আবেগ, মনস্তাত্ত্বিক বা আর্থিক কারণ থাকে। বিনা কারণে কোনো অপরাধ ঘটে না। তবু অপরাধের জন্যই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়, জেলে পাঠানো হয়। আর আপনি যদি অপরাধীর অপরাধ করার নেপথ্যে থাকা জোরালো আবেগীয় যুক্তিকে সমর্থন দেন, তাহলে আপনিও এদেশের আইন লঙ্ঘন করছেন।'
তিনি আরও লেখেন, 'মনে রাখবেন, কেউ যদি একজন মানুসের অনুমতি ছাড়াই তার শরীর স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখান এবং সেটা যদি আপনি সমর্থন করেন, তাহলে বলতে হয়, ধর্ষণ বা খুনের মতো ঘটনাও আপনাকে বিচলিত করে না।' এরপর তিনি এরকম মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিদের ইয়োগা বা ধ্যান করা পরামর্শ দেন। নইলে জীবন তিক্ত হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন। ওই পোস্টে কঙ্গনা আরও লিখেছেন, 'দয়া করে এত বিদ্বেষ, ঘৃণা আর হিংসা পুষে রাখবেন না, নিজেকে মুক্ত করুন।'
কঙ্গনার টুইটের প্রতিক্রিয়া
কঙ্গনার এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। অনেকেই বলছেন, যে কঙ্গনা উইল স্মিথের চড় মারাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, সেই তিনিই আজ নিজে চড় খেয়ে হিংসামূলক প্রতিবাদের বিপক্ষে কথা বলছেন!
বিজেপি এমপির টুইটের প্রতিক্রিয়ায় এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'কঙ্গনা রানাওয়াতের মতে, উইল স্মিথ তার স্ত্রীকে রসিকতা করার জন্য যে-কাউইকে মারতে পারবেন, কিন্তু কঙ্গনা আরেকজনের মাকে "১০০ রুপিতে কেনা যায়" এবং তার কৃষক পিতার শিরশ্ছেদ করতে বললেও কেউ তাকে কিছু করতে পারবে না? এই হল ভন্ডামি সীমা…'
রেডিট-এও অনেকে কঙ্গনার পুরনো পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন: 'দারুণ। তার ভন্ডামি এবং ভিক্টিম মানসিকতার নিদর্শন, অথচ তিনি নিজেই কিন্তু দোষী।'
আরেকজন বলেছেন, 'আরে ভাই, হিপোক্রিসির সীমা আছে।' আরেকজন বলেছেন, 'কিন্তু একজন তারকার এ ধরনের কথা বলা উচিত নয়। তিনি (কুলবিন্দর) গরিব বলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে; তার (কঙ্গনা) বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে?'
পাঞ্জাবের কৃষক পরিবারের মেয়ে কুলবিন্দর কউর। ২০২০-২১ সালে কৃষক আন্দোলনেযোগ দিয়েছিলেন কুলবিন্দরের মা-ও। ওই সময় কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে কঙ্গনা বলেছিলেন, '১০০ রুপির' জন্য মহিলার ওই আন্দোলনে বসে আছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক্সে এক ওই পোস্টে এ বলিউড তারকা দাবি করেন, এক বয়স্ক নারী তাকে বলেছিলেন যে ১০০ রুপি দিলে তিনি 'আসবেন'—অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে আন্দোলন করবেন। এ মন্তব্যের কারণেই কঙ্গনার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কৃষককন্যা কুলবিন্দর।