ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে জমা পড়া ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য জন্য সার্চ কমিটিতে প্রস্তাব করা ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে (তালিকা দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন) এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে কারা এসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
নাম প্রকাশের আগে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সার্চ কমিটি। সোমবার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়।
৩২২ জনের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম সুপারিশ করার জন্য সার্চ কমিটির হাতে ১৫ কার্যদিবস সময় রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় ৬১ জন সাবেক সচিব, দুই সেনাপ্রধানসহ ১৮ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, দুই প্রধান বিচারপতিসহ ১৫ জন বিচারপতির নাম রয়েছে। এছাড়া, পুলিশের দুই মহাপরিদর্শক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের নাম রয়েছে তালিকায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাবিত বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক ধর্ম ও পানিসম্পদমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বর্তমান সভাপতি সুলতানা কামাল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জেআর মুদাসির হোসেন, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট আইজীবী ড. শাহদীন মালিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর, প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের (আরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন, বাংলা একাডেমির পরিচালক ও লেখক সেলিনা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম, লন্ডনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম এ হান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'যে পদ্ধতিতে নাম প্রকাশ হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই তালিকায় এমন অনেক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, যা খুবই অযৌক্তিক। নির্বাচন কমিশন গঠনের এমন প্রক্রিয়া বিশ্বে বিরল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রকাশিত ৩২২ জনের নামের তালিকার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। 'কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে ১০টি নাম জমা দেবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পূর্বঘোষণা দিয়ে করা প্রয়োজন।'
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রস্তাবিত নামগুলো জনগণকে জানানোর জন্য সার্চ কমিটি এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, কে কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে দলগুলো নাম প্রস্তাব করেছে, তাদের নাম বলে দিলে ইসির সম্ভাব্য কর্মকর্তাদের গায়ে ট্যাগ পড়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
'তালিকা চূড়ান্ত নয়। সার্চ কমিটি নিজে থেকেই যোগ্যদের খুঁজে বের করবে। প্রকাশিত তালিকার বাইরেও যে-কাউকে চূড়ান্ত করতে পারে। এটা কমিটির সিদ্ধান্ত,' বলেন তিনি।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, 'আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ইসি চূড়ান্ত করবেন।'
প্রখ্যাত আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, 'আমরা (বিশিষ্ট নাগরিকরা) পরামর্শ দিয়েছিলাম, যে দলগুলো যেসব নাম প্রস্তাব করেছে, তাদের নামও প্রকাশ করা উচিত। নামগুলো যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, যাদের কাছ থেকে সুবিধা পেতে পারে, এমন ব্যক্তিদের নামই যদি সব রাজনৈতিক দল দেয় তাহলে যোগ্য ইসি গঠন করা যাবে না।
তবে শাহদীন মালিক নাম প্রকাশের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেছেন যে, একেবারেই কিছু না হওয়ার চাইতে এটি মন্দের ভালো।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির গঠিত বর্তমান সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে নাম চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
নাম জমা দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠিও পাঠায় সার্চ কমিটি। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩২৯ জনের নাম জমা পড়ে কমিটিতে।
তবে ২০১২ ও ২০১৭ সালে গঠিত আগের সার্চ কমিটিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি সত্ত্বেও প্রস্তাবিত নামগুলো প্রকাশ করেনি।
আমন্ত্রিত নাগরিকরা সার্চ কমিটিকে সৎ, যোগ্য, সাহসী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের নির্বাচন করতে বলেন। নতুন ইসিতে নারী, সংখ্যালঘু ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের রাখার পরামর্শও দেন তারা।
প্রস্তাবিত নামের তালিকা দেখুন এখানে:










