আগামী দুই সপ্তাহে ঢাকার বাইরে বাড়বে করোনা সংক্রমণ

রাজধানীতে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল থাকলেও আগামী দুই সপ্তাহে ঢাকার বাইরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য সংক্রমণ হারের তুলনায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম বলে উল্লেখ করেছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।
ইন্সটিটিউট অভ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হুসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকায় সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল মনে হচ্ছে। এরইমধ্যে ঢাকায় অনেকেই সংক্রমিত হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় ও গ্রামে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ সংক্রমণ আরো বাড়বে।'
তবে এখন সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী টেস্ট হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এখন দিনে এক লাখের বেশি টেস্ট করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'দিনে এক লাখ স্যাম্পল টেস্ট করার সক্ষমতাও আমাদের আছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের সময় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাস্তায় রাস্তায় টেস্টের গাড়ি গিয়ে কোভিড টেস্ট করেছে। সেই মডেল ফলো করে এখন ভিড় যেখানে বেশি, সেখানে গাড়ি নিয়ে গিয়ে টেস্ট করতে হবে।'
১৫ জানুয়ারি ঢাকায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৬.০১ শতাংশ, যা ২২ জানুয়ারি বেড়ে ২৯.২৭%, ২৮ জানুয়ারি ২৯.৮৪% এবং ২৯ জানুয়ারিতে ৩০.০৩%-এ ঠেকে।
এদিকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে সংক্রমণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
১৫ জানুয়ারি রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১২ শতাংশ, যা ২২ জানুয়ারি বেড়ে ২৮.৭৯%, ২৮ জানুয়ারি ৭১.৪৫% এবং ২৯ জানুয়ারিতে ৬৩.২১%-এ ঠেকে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১৫ জানুয়ারির ১২.২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ জানুয়ারিতে ২৯.০৫%, ২৮ জানুয়ারি ৩৬.৮৬% এবং ২৯ জানুয়ারিতে ২৭.৭৭%-এ ঠেকে।
রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার রাত আটটা থেকে রাজশাহী জেলার সব বিপণিবিতান, শপিং মল, বিনোদনকেন্দ্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
রাজশাহীতে কোভিড সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা প্রশাসন শনিবার থেকে সূর্যাস্তের পর দোকানপাট, শপিংমল, বিনোদন স্পট, রেস্তোরাঁ এবং সমস্ত ব্যবসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার জন্য সার্কুলার জারি করেছে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতে ৮০ শতাংশ রোগী ছিলে রাজধানী ঢাকার।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৩৭৮ জনের করনয়া শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৩৭৯ জন ঢাকার। শুক্রবার পরীক্ষা তুলনামূলক কম হওয়ায় শনাক্তের সংখ্যাও কম।
চট্টগ্রামে মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫০০-র কম। কিন্তু শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ঘণ্টায় দুটি মৃত্যুসহ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৮৯৬-এ।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে শনাক্তের হার কিছুটা কমে হয়েছে ৩১.১০ শতাংশ।
কোভিডের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়। কিন্তু ডেল্টার ঢেউ শুরু হওয়ার পর জুলাই-আগস্ট থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যায়। ওই সময় বিশালসংখ্যক কোভিড রোগীর চাপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনার হাসপাতালগুলোর অবস্থা ভয়াবহ ছিল।
ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের তীব্রতা ডেল্টার চেয়ে কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ কম। প্রায় ৮০% কোভিড রোগী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে।
২০২০ সালের মার্চে প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ২৯৩২৯ জনের মৃত্যু এবং ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জন সংক্রমিত হয়েছে।