নতুন প্রজাতন্ত্র গঠনে নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন: নাহিদ ইসলাম

নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া 'সেকেন্ড রিপাবলিক' প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, 'পুরোনো সংবিধান এবং শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়।'
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার চার দিন পর এটি ছিল এনসিপির প্রথম কর্মসূচি। সকাল ৮টার দিকে দলটির নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেলেও একাধিকবার সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বারবার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে, এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করেছে। এ কারণেই এনসিপি 'সেকেন্ড রিপাবলিক' প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যা নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।
সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, পুরোনো সংবিধান ও শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। শুধু সরকার বদলালেই জনগণের প্রকৃত কল্যাণ আসবে না; বরং শাসন কাঠামো ও সংবিধান সংস্কার করাই হবে মূল পরিবর্তনের চাবিকাঠি। ২০২৪ সালের গণ-অভুত্থানের আত্মত্যাগ শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং প্রকৃত গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যেই হওয়া উচিত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে গণ-অভ্যুত্থান এবং গত ১৫ বছরে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আহ্বান জানিয়ে এসময় নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা এই বাংলার মাটিতে করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং গত ১৫ বছর ধরে নানা ধরনের জুলুম করেছে তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতে হবে। এই বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায়। বিচারের পর সংস্কার কার্যক্রম করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে আমাদের জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই।
এসময় তিনি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধানের বাস্তবতা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্বাস করি নতুন একটি সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে। তার ভিত্তিতে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি। একইসাথে সে গণপরিষদ নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন এমন প্রস্তাবনাও আমাদের আছে। অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশের জেলা এবং উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি তার কার্যক্রম বিস্তৃত করবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে জনগণ যে দাবি জানিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ন্যায়বিচারের পর জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অধীনে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
দলের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির এই মুহূর্তে প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে তার কার্যক্রম বিস্তৃত করা, তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করা। নিবন্ধন নিতে যে ধরনের শর্তাবলি পূরণ করা প্রয়োজন সে শর্তাবলি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করে আমরা নিবন্ধনের দিকে আগাবো। শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য শিগগিরি আবেদন করা হবে নির্বাচন কমিশনে। এ মাসের মধ্যে আমাদের যে গঠনতন্ত্রের কাজ সে কাজটি শুরু করব।
এর আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এনসিপির নেতারা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
এসময় সংগঠনটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন ছাড়াও নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, আব্দুল হান্নান মাসউদ, সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম, তাসনিম যারা, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।