সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচন ইস্যুতে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে: তারেক রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারকে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান । পাশাপাশি, আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, 'হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরইমধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্ত পিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে'।
তিনি বলেন, 'জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি আজ দেশের কৃষক, শ্রমিক, জনতা, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে—আপনারা আজ এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন—আপনাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান ও অনুরোধ জানাই'।
'যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও থেমে নেই। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচনের এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।'
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।'
'একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি বিশ্বাস করি আজ এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপর ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয় সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই', বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য, মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না'।
'সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনো মনে হয় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি', যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, 'সরকার যেখানে বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।'
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা সরাসরি গণ-অভ্যুত্থান আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না, বিএনপি পা দিতে পারে না'।
তিনি আরও বলেন, 'বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন'।
'সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র' স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এবারের বর্ধিত সভা করছে বিএনপি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ স্তরের সাড়ে ৩ হাজার নেতারা এই বর্ধিত সভায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।
প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। সাত বছর পর দলের কোনো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেন তিনি।