আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো: আসাদুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব কায়েম করা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, 'এ হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিতকে আঘাত করা হয়। ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে—- নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।'
আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এটি কোন বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশকে চোরাবালির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করানো হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র তথাকথিত বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে—- বাংলাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গুম-খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়ে— সেই রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, 'শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই মাসের মাথায় ঢাকার পিলখানায় দেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যা ইতিহাসের এক কালো দাগ। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত আনার লক্ষ্যে এই হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়। কোনো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নয়, সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়—- বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী কোনো সীমান্তরক্ষী বাহিনী না থাকে, তার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড।'
তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পিলখানায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও—- ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার লোক দেখানো চেষ্টা করা হয়। দরবার হলের কাছে র্যাবের একটি টহল দল থাকলেও, বিদ্রোহ দমনে তাদের পিলখানায় ঢুকতে দেয়া হয়নি।'
তিনি আরো বলেন, আমরা লজ্জিত, দুঃখিত সেই সব সন্তানদের প্রতি যারা পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ডে তাদের পিতামাতা হারিয়েছেন। স্বজনহারা এসব পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। যেদিন এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হবে—- সেদিন হয়তো স্বজনহারারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
দাবিগুলো হচ্ছে—
১) পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের স্বার্থে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা, অথবা তদন্ত টিম ভারত সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তিনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানে গিয়ে যাতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে— সে ব্যবস্থা নেওয়া। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা;
২) তৎকালীন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকসহ সন্দেহভাজনদের কার কী ভূমিকা ছিল তা উদঘাটন করা;
৩) শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ২৫ শে ফেব্রুয়ারিকে "শহীদ সেনা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করা;
৪) হত্যাকাণ্ডে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ছিল কিনা– তা অনুসন্ধান করা;
৫) তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ যেহেতু স্বপ্রণোদিত হয়ে— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন, সেহেতু অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সাবেক এই সেনাপ্রধানকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা;
৬) পিলখানা হত্যাকাণ্ড চলাকালে যারা বিডিআর সদর দপ্তরে সমবেত হয়ে—- সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে "বিডিআর জনতা ভাই ভাই" স্লোগান দিয়েছিল তাদের চিহ্নিত করা;
৭) হত্যাকাণ্ডে নিহত, আহত সামরিক/বেসামরিক ব্যক্তিদের নাম— বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে নামফলকে দৃশ্যমাণভাবে উল্লেখ করা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা;
৮) সেনাকুঞ্জে যেসব সেনাকর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার কারণে চাকুরি হারিয়েছিলেন তাদেরকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা;
৮) একইসঙ্গে বিডিআরের যেসব সদস্য পিলখানার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না, তাদেরও চাকুরিতে পুনঃর্বহাল করা;
৯) হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাকে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার দেওয়া;
১০) বর্তমান প্রজন্মের কাছে পিলখানার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এর প্রকৃত ইতিহাস অন্তর্ভূক্ত করা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে "ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ সরকার বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে" শীর্ষক এই ছায়া সংসদে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি'র বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজয়ী হয় তেজগাঁও কলেজের প্রতিযোগীরা।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিক, সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন ও সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।