৫ ঘণ্টা পর রেলপথ থেকে সরে গেলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মহাখালীতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরোধের পর রেলপথ থেকে সরে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে সরকার পদক্ষেপ নেবে—এমন আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন তারা।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডল মহাখালীতে সাংবাদিকদের বলেন, আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।
এর আগে আজ রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। পরে অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মন্ডল অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
রাত পৌনে ১০টার দিকে মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার জুনায়েদ জেহাদী বলেন, শিক্ষার্থীরা রেলপথ থেকে সরে গেছেন।
এর আগে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে মহাখালী রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
রেলওয়ের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মো. শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মহাখালী রেলপথ ব্লক করায় ১০-১২টি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে আছে। রাতের মধ্যে সমাধান না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে।'
এর আগে আজ বিকেলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাদাত হোসেন জানিয়েছিলেন, অবরোধের কারণে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অন্তত ছয়টি ট্রেন চলাচল বিলম্ব হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এর মধ্যে তিনটি ট্রেন তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এবং মহাখালীতে রেললাইনে আটকে আছে। আর আরও তিনটি ট্রেন কামালাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সময়মতো যাত্রা শুরু করতে পারেনি।'

যদি অবরোধ চলতে থাকে, তবে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে বলে আধা সামরিক বাহিনীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে রাত সাড়ে ৮টায় পাওয়া খবর অনুযায়ী, অবরোধের ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। একই চিত্র মৌচাক স্টেশনেও।
স্টেশনে আটকা পড়া আশিকুর রহমান নামে এক যাত্রী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ট্রেনটির ঢাকা পৌঁছানোর কথা ছিল। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ট্রেনটি প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে স্টেশনে আটকে আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সকালে যারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, তারা এখনও ঢাকা পৌঁছাতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে হাজার হাজার মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ হচ্ছে।'
'বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কী হবে? ছোটবেলায় জগন্নাথ কলেজ নিয়ে আন্দোলন দেখেছি। ফলস্বরূপ এটি জগন্নাথ কলেজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। কিন্তু মান কি বদলেছে? দেশে লাখ লাখ বেকার স্নাতক আছে', যোগ করেন তিনি।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
গত রাতে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা আজ সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গুলশান-মহাখালী সড়ক ও মহাখালী রেললাইন অবরোধ করবেন।
এ নিয়ে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের সামনের সড়ক বাঁশ দিয়ে অবরোধ করায় সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী গত পাঁচ দিন ধরে কলেজ গেটের সামনে অনশন করছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর অন্যরা স্যালাইন সাপোর্ট নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাইদ হাসান।
গত ২৯ জানুয়ারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের মহাখালী ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৩১ জানুয়ারি তারা আবারও সড়ক অবরোধ করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান এবং একটি অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠনের পাশাপাশি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করারও দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া, তারা সকল শিক্ষার্থীর জন্য হোস্টেল সুবিধা বা আবাসন খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও দাবি করেছেন।
তারা দাবি করেছেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে দুটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিষয় আইন এবং সাংবাদিকতা চালু করতে হবে।
তারা আরও দাবির মধ্যে রয়েছে– যোগ্য পিএইচডি-ধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মান বজায় রাখতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগারের জন্য টাকা ও জমি বরাদ্দ দেওয়া।