কারও ওপর এককভাবে নির্ভরশীলতা কমাতে ব্রিকস-এ যোগদানের ভাবনা: প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এককভাবে কারও ওপর যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয়, সেজন্যেই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুইজারল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার (২১ জুন) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বাংলাদেশ কেন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোটে যোগ দিতে চায়, তার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ব্রিকস-এ যোগ দিলে বাংলাদেশের কোনও সুবিধা হবে কি না।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ব্রিকসে আমরা যোগ দেব এই কারণে — ব্রিকস প্রথম যখন এটার প্রস্তুতি নেয়, তখন থেকেই আমরা এর সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। কিন্তু আমরা ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি। এখন আমরা চেয়েছি সেটার মেম্বার হতে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাচ্ছি যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও একটার ওপর যেন নির্ভরশীলতা না হয়। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যেন আমাদের অর্থ বিনিময়ের সুযোগটা থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি, আমার দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় করেই কিন্তু আমরা ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
সফরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকস জোটের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানানো হয়েছিল।
তখন রামাফোসা বলেছিলেন, আগস্টে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে মুচকি হেসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর নিতে বলছেন।'
পরে তিনি বলেন, 'এখানে আমরা দেখব যে বিকল্প কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল না, আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেন বিনিময় করতে পারি, কেনাবেচা যাতে যা লাগে করতে পারি, সেই পদক্ষেপও নেওয়া আছে। যখন এটা কার্যকর হয় তখন আপনারা এটা দেখতে পাবেন।'
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক জোট ব্রিক এর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিতে জোটের নাম হয় ব্রিকস। এই জোটের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা করে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক — এনডিবি।
এনডিবি'র সূচনাতেই বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল। তখন চীনের উদ্যোগে প্রস্তাবিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে (এআইআইবি) যোগদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার।
পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে বাংলাদেশকে এনডিবি'র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। ধাপে ধাপে আনুষ্ঠানিকতাগুলো শেষে ২০২১ সালের ২০ আগস্ট নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যোগদান অনুমোদিত হয়।
বাংলাদেশই ব্রিকস জোটের বাইরের প্রথম দেশ, যারা এই ব্যাংকের সদস্যপদ পেয়েছে। এবার মূল জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করল বাংলাদেশ।