ইমাম গ্রুপের এমডি, পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ইমাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি জারি করেছে আদালত। ১৮৭ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের দায়ের করা ঋণ খেলাপি মামলায় গত রোববার চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ইমাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলে (পরিচালক) আলী ইমামের বিরুদ্ধে পাঁচ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের তথ্যমতে, ২০১২ সালে ১৮৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে ইমাম গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে ন্যাশনাল ব্যাংক। ২০১৪ সালে অর্থঋণ মামলার রায়ের পর ওই বছরই আবার জারি মামলা করে ব্যাংক।
সোলেনামা মূলে রোববারের মধ্যে ঋণের ৫ কোটি টাকা পরিশোধের শর্ত ছিল। কিন্তু ঋণ গ্রহীতা অর্থাৎ ইমাম গ্রুপ শর্ত অনুযায়ী সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতের তথ্যমতে, ইমাম গ্রুপের মোহাম্মদ আলী বেশ কয়েকটি দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে গোপনে পালিয়ে আরব-আমিরাতে অবস্থান করছেন।
মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের ১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পাওনা আটকে গেছে, যার বেশিরভাগই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় ও চেক ডিজঅনার হওয়ায় গ্রুপটির বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৫ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া ১০টিরও বেশি চেক ডিজঅনার মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয় তার বিরুদ্ধে।
২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বেশিরভাগ ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এক দশকেও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১২-১৩ সালের দিকে তার বিরুদ্ধে একে একে মামলাগুলো দায়ের হতে থাকে।
নব্বইয়ের দশকে অবৈধ পথে পণ্য আমদানি করে ব্যবসার জন্য চট্টগ্রামে তিনি 'ব্ল্যাকার মোহাম্মদ আলী' নামে পরিচিতি পান। এর আগে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-টেরিবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতো তার মালিকানাধীন ইমাম ট্রেডার্স। পরে গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় গার্মেন্টস, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জমি কেনায়। ২০১০ সালের পর থেকে ভোগ্যপণ্য ও ভূমি ব্যবসায় লোকসান শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে যায়।