ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শতাব্দী প্রাচীন শুঁটকি মেলায় বন্ধ হলো বিনিময় প্রথা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে কয়েক শতাব্দী ধরে বসছে শুঁটকি মেলা। মূলত বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিন থেকে কুলিকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছের এ শুঁটকি মেলা বসে। দুইদিনব্যাপী এ মেলার বিশেষত্ব হলো 'বিনিময় প্রথা'। বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি নিতে পারেন ক্রেতারা। গেল বছরও বিনিময় প্রথায় শুঁটকি কেনাবেচা হয়েছে মেলায়।
তবে এবার শতাব্দী প্রাচীন বিনিময় প্রথা ভেঙে দেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। মূলত শুঁটকির দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন এবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, কয়েক শতাব্দী ধরে কুলিকুন্ডা গ্রামে নিয়মিত শুঁটকি মেলা বসছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন শুঁটকি নিয়ে। মেলার প্রথম দিনে ভোর থেকে কয়েক ঘণ্টা বিনিময় প্রথায় শুঁটকি কেনাবেচা হয়। এরপর চলে নগদ টাকায় বেচাকেনা। মূলত বিনিময় প্রথায় নিম্নবিত্তরাই মেলা থেকে শুঁটকি নিতেন। এবার পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কেনাবেচা বন্ধ থাকায় নগদ টাকা দিয়েই ক্রেতাদের কিনতে হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের নাটাই উত্তর এলাকার বাসিন্দা কাজী আরমান জানান, তিনি মানুষের কাছে কুলিকুন্ডা শুঁটকি মেলার কথা অনেক শুনেছেন। এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় আসেন তিনি। বাজারের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় শুঁটকি কিনতে পারেননি। তবে গরমের মধ্যেও মেলা নিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি।
কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, বিনিময় প্রথা শুধু ক্রেতাদের জন্য উপকারি মাধ্যমই ছিলো না, এটি মেলার ঐতিহ্য। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এবার সেটি ভঙে দিয়েছেন। প্রতিবছর প্রতীকী হলেও বিনিময় প্রথা চালু রাখার দাবি জানান তিনি।

নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের শুঁটকি বিক্রেতা রামেশ্ব দাস জানান, তিনি এই মেলার অনেক পুরনো ব্যবসায়ী। প্রতিবছরই মেলায় আসেন শুঁটকি নিয়ে। এবার কাঁচা মাছের দাম বাড়ায় শুঁটকির দাম অনেক বেড়েছে। তাই পণ্যের বিনিময়ে বিক্রি করে পোষাবেনা বলেই নগদ টাকায় শুঁটকি বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
এবারের মেলায় প্রায় দুইশ দোকান বসে। একেকটি দোকানে গড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার শুঁটকি কেনাবেচা হবে বলে আশা করেছিলেন দোকানিরা।

মূলত এ মেলায় হাওরাঞ্চলের দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি পাওয়া যায়। মেলায় প্রতি কেজি নাইল্লা মাছের শুঁটকি বিক্রি হয় ৬০০ টাকা, বোয়াল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি শুঁটকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং বাইম মাছের শুঁটকি কেনাবেচা হয় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। এছাড়া এ বছর সামুদ্রিক কিছু মাছের শুঁটকিও আনেন দোকানিরা।
তবে এ মেলায় শুধু শুঁটকিই নয়, গ্রামীণ-লোকজ নানা পণ্যের পসরাও সাজান দোকানিরা। শিশুদের জন্য থাকে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী; হরেক স্বাদের বাহারী খাবারও।