আবারও আসছে শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে বৃষ্টি
গত সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশেই বয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। শেষ দু'টা দিন রোদ উঠায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আবারও শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
তারা জানান, আগামী ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে ১৬ জানুয়ারি সকালের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের উপর হালকা (১০ মিলিমিটারের কম) বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং বৃষ্টিপাতের পর ১৬ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত দেশব্যাপী হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে। তবে বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিভাগের জেলাগুলোর পাশে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের অনেক জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পরে ১৬ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আবারও এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই সময় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা আবহাওয়া প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৬-২৩ জানুয়ারি রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও খুলনা বিভাগের (চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ) জেলাগুলোর সকালবেলার তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
বরিশাল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা বেশি ১৮ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৬-২২ জানুয়ারি দেশব্যাপী আবারও কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও এ মাসের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের ফলে আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে বলে জানান তিনি।
গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এবার শীত মৌসুম ফেব্রুয়ারি জুড়েই থাকতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও শীত বেশি অনুভূত হওয়ার প্রধান কারণ হলো জলাভূমি, খালবিল, নদীনালার পরিমাণ কমে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়ে যাওয়া। ঢাকায় আবহাওয়ার আচরণ হয়ে উঠছে সৌদি আরবের মরুভূমির মতো। মরুভূমি যেমন দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম ও রাতে তীব্র ঠান্ডা হয়- ঢাকায়ও তেমনটি হচ্ছে। কারণ, কংক্রিটের অবকাঠামো দিনের বেলায় দ্রুত সূর্যের তাপ শোষণ করে গরম হয়ে ওঠে এবং রাতে দ্রুত তাপ ছেড়ে দিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, 'পুরো জানুয়ারি মাসই শীত থাকবে। তবে বিগত কয়েক দিনের মতো এতো শীত অনুভূত হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে কুয়াশার ওপর।"
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেড়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, নিওমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতকালীন বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। গত মঙ্গলবার সারাদেশে শীতকালীন রোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজারের অধিক রোগী, মারা গেছেন দুইজন।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) প্রতিদিন ৩৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করছে, যাদের ৬০%-৭০%ই শিশু।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, 'হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় বয়স্ক এবং শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, ঢাকার বাইরে এখনো শীতের তীব্রতা বেশি, আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে।'
শুধু স্বাস্থ্যই নয়, দীর্ঘমেয়াদে ঠান্ডার প্রভাব কৃষির জন্যও উদ্বেগজনক।
কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, ধানের পাশাপাশি মাঠে থাকা আলুর চাষাবাদেও তীব্র শীতের প্রভাব পড়তে পারে। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো কোন সমস্যা হয়নি। তবে ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদী হলে তার প্রভাবে আলুর পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার আল মোজাহিদ সরকার বলেন, 'ঠান্ডাটা দীর্ঘ হলে আলুর ফলনের উপর প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য কৃষকদেরকে কিছু মেডিসিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা নষ্ট হওয়া বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ আর মাসখানেকের মধ্যে আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে।'
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশেই এখন বোরো ধানের বীজতলায় চারা বড় হচ্ছে, কোথাও কোথাও তা রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। এই অবস্থায় চারার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো রোপণের জন্য ০.৩৮ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, 'আমরা পরামর্শগুলো মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দিচ্ছি, তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।'
