সাড়ে ৭ মাস পর প্রাণ ফিরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে

ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী-সমর্থকদের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সাড়ে ৭ মাস পর সব ট্রেন থামতে যাচ্ছে এ স্টেশনে। আগামী ১৩ নভেম্বর স্টেশনটি চালু করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনের দিন থেকেই পূর্বাঞ্চল রেলপথে যাতায়াতকারী ট্রেনগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত যাত্রাবিরতি করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এতোদিন ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল রেলপথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী ৭টি আন্তঃনগর, ৭টি মেইল ও কয়েকটি লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি করে স্টেশনটিতে। প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে অন্তত ২ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬-২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ও জেলা গণগ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ২৬ মার্চ বিকেলে। স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সিগন্যালিং সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলায় ২৭ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সকল ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন না থামায় যাত্রীদের ট্রেনে করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী আখাউড়া ও আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হতো। গত ১২ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে তালশহর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান এক বাবা ও তার দুই ছেলে।
যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ অবসানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন দ্রুত সংস্কার করে সকল ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে নাগরিক সংগঠনগুলো। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মর্যাদা 'বি' ক্লাস থেকে 'ডি' ক্লাসে নামিয়ে ১৫ জুন থেকে তিনটি মেইল ও একটি কমিউটার এবং ১৬ জুন থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রারিবতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্টেশনের সংস্কার শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক মাস ধরেই চলছে সংস্কার কাজ। নতুন করে স্থাপন করা হচ্ছে সিগন্যালিং সিস্টেম।
সরেজমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া টিকিট কাউন্টার ও স্টেশন মাস্টারের কক্ষ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষগুলোর সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। নতুন সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া উঁচু করা হয়েছে প্ল্যাটফর্মও। উদ্বোধনের জন্য এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছা।

নিয়মিত ট্রেনযাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা সুমন রায় জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দুই ঘণ্টায় ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়া যায়। আর বাসে করে যানজট ঠেলে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন না থামার কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরেক যাত্রী আশিকুর রহমান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের জন্য ট্রেনে যাতায়াত করতে সুবিধা। কম খরচে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। রেলওয়ে স্টেশনটি আবার চালু হওয়ার মাধ্যমে যাত্রীদের সাড়ে ৭ মাস ধরে পোহানো অসহনীয় দুর্ভোগের অবসান হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন বলেন, "স্টেশনের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি ১০ নভেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষ হয়ে যাবে। ১৩ নভেম্বর স্টেশনটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উদ্বোধনের দিন থেকেই ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি শুরু হবে।"