সংক্রমণ মোকাবিলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল কাজে লাগানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে যা এ যাবতকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একদিনে দেশে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে করোনায় দেশে টানা সাত দিনে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েকদিন সংক্রমণ-মৃত্যু আরো বাড়বে। শুধু লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি করা যাবে না। সংক্রমণ মোকাবিলায় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ঈদের পর হঠাৎ করে উত্তরাঞ্চলীয় জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। সংক্রমণ হার ৬০% হওয়ায় গত ২৫ মে জেলাটিতে সাত দিনের লকডাউন জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে সেটি বাড়ানো হয়। লকডাউনে সেখানে গ্রাম কমিটি গঠন করে মানুষকে সচেতন করা, মাস্ক বিতরণ ও টেস্টের মাধ্যমে জেলায় সংক্রমণ কমিয়ে আনা গেছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ হার ১৫%।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'লকডাউন ঘোষণার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫০০ গ্রাম কমিটি গঠন করা হয়, তারা মানুষকে মাস্ক পরতে উদ্ধুদ্ধ করে। কেউ মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে বা কারো মাস্ক কেনার সামর্থ না থাকলে তাদের বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হতো। এছাড়া টেস্টের পরিমাণ অনেক বাড়ানো হয়। আম বাগানে গিয়েও অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছিলো। টেস্টে যারা পজিটিভ আসতো তাদের আইসোলেটেড করা হতো। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ ছাড়া অন্য কোন বাহিনী মাঠে ছিলো না, তবু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে'।
সংক্রমণ মোকাবিলায় ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউনে যারা বাইরে বের হচ্ছে তারা ঠিকমত মাস্ক পরছেনা। লকডাউনে প্রতিদিন অনেক মানুষকে জরিমানা বা গ্রেফতার করা হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখন সারাদেশে বিপুল পরিমাণ মাস্ক বিতরণ করতে হবে এবং টেস্ট বাড়াতে হবে। বাড়িতে কারো করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরিবারের সবাইকে বাড়িতেও মাস্ক পরে থাকতে হবে। স্থানীয় কমিউনিটি এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে পারবে। তাই কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা জরুরি বলে মনে করেন ড. আবু জামিল ফয়সাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যারা করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছেন তারা তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন যেহেতু শনাক্ত প্রতিদিন আট হাজারের বেশি হচ্ছে তাই তিন সপ্তাহ পর মৃত্যু আরো বেড়ে যেতে পারে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে সংক্রমণের হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে এবং এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউতে একটি বেডও খালি নেই। প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। এখনো জেনারেল বেডে রোগী ভর্তি নেয়া যাচ্ছে তবে এখন রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে শিগগিরই জেনারেল বেডও ভর্তি হয়ে যাবে'।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, 'লকডাউন কাজে লাগাতে চাইলে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়াতে হবে এবং কয়েক কোটি মাস্ক বিতরণ করতে হবে। তা না হলে মানুষ আক্রান্ত হয়ে ঘরে থেকে পরিবারের অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াবে'।