নতুন নতুন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ রোগী

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এতে লকডাউনের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে।
গতকালের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় দেশে ১৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা ৩৪ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৯ জন।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংএ রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
এসময় তিনি জানান, নতুন করে চারটি জেলার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে।
আগেরদিন নতুন ৯টি জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা জানানো হয়।
অথচ আইইডিসিআরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুরুর দিকে নতুন নতুন জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার হার ছিল ধীরগতির।
যেসব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ রোগী
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই তিনজন আক্রান্ত ব্যক্তি নারায়নগঞ্জ ও মাদারীপুরের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এরপর ২৩ মার্চ ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মাদারীপুর, কুমিল্লা, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা ও গাজীপুর এই সাতটি জেলায় মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর।
এরপর ৩ এপ্রিল নতুন করে দু'টি জেলায় - রংপুর ও কক্সবাজার - করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের তথ্য জানানো হয়।
৬ এপ্রিলের মধ্যে মোট ১৫টি জেলায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানানো হয়।
তালিকায় নতুন করে যোগ হয় জামালপুর, নরসিংদী, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা।
৯ এপ্রিলের মধ্যে জেলার সংখ্যা বিশ পার করে। তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয় কিশোরগঞ্জ, নীলফামারি, ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ।
এর পরদিনই আরও প্রায় ১০টি জেলায় শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ব্রাক্ষ্ণণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী ও বরগুনায় কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যায়।
রোববার আইইডিসিআর জানায় নতুন আরো চারটি জেলায় - ঝালকাঠি, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, লক্ষ্ণীপুর - শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি।
কেন নতুন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস আক্রান্ত রোগী
করোনাভাইরাস যেন দেশের বিভিন্ন স্থানে না ছড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তিন দফা বাড়িয়ে সেই ছুটির মেয়াদ নেয়া হয়েছে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত।
ছুটি শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা 'লকডাউন' ও জেলায় প্রবেশ বা সেখান থেক বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্তত ১৯টি জেলা কার্যত লকডাউন রয়েছে - অর্থাৎ সেসব জেলা থেকে বের হওয়া বা অন্য জেলা থেকে সেখানে প্রবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর আংশিক লকডাউন অবস্থায় রয়েছে ১৬টি জেলা।
তবু নতুন নতুন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
রোববার আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান নতুন করে চারটি জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই লকডাউনের মধ্যেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছেন।
"যাদের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা অথবা নারায়নগঞ্জ থেকে ঐ জেলাগুলোতে এসেছেন।"
শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও স্বীকার করেন যে নারায়নগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের গোপনে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের অনেকের কর্মস্থলই নারায়নগঞ্জ, কিন্তু মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোন কাজ না থাকায় তারা নিজ নিজ এলাকার দিকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কেউ কেউ আবার আশঙ্কা করেছেন যে নারায়ণগঞ্জে তারা যেখানে বসবাস করেন, সে বাড়িতে বা তার আশপাশে যদি কারো দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া তাহলে হয়তো সে এলাকা থেকে আর বের হতে পারবেন না।
সেজন্য তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান।
আবার আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেনের ধারণা যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় সামাজিকভাবে একঘরে করে দেবার প্রবণতা বাড়ছে বলে এটি নিয়ে মানুষের মনে এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে।
সে কারণে রোগ শনাক্ত হলে বা অনেক সময় উপসর্গ দেখা দিলেও মানুষের মধ্যে পালিয়ে অন্য কোনো এলাকায় চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।