মাসে ৫ হাজার ডলার আয় করে স্বয়ং ক্যারিও কি পারবে 'সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি'-র মতো জীবন-যাপন করতে?

"আমি জুতার পিছনে ৪০ হাজার ডলার খরচ করেছি। আর এদিকে আমার থাকার জায়গা নেই। আমি তো আক্ষরিক অর্থেই জুতার ভেতর বসবাস করা সেই রূপকথার বুড়ি হয়ে যাব।"
এই উক্তিতে 'সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি' চরিত্র ক্যারি ব্র্যাডশোর বিলাস-বহুল জীবনযাত্রা বেশ ভালোভাবেই ফুটে ওঠেছে। তবে এসব উক্তি এখনও বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। টিভি সিরিজে ক্যারিকে যেভাবে চলাফেরা করতে দেখা যায়, তার খরচ কি বাস্তবে যোগাতে পারত সে?
শুধু নামীদামী ব্র্যান্ডের ঈর্ষনীয় জুতা কালেকশন ও বিলাস-বহুল অ্যাপার্টমেন্টের পিছনেই সব খরচ করে না ক্যারি। সে নিয়মিত বাইরে খায়, পানির মতো ককটেল খায়, এবং ট্যাক্সিতে যাতায়াত করে।
'সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি' কিন্তু এক অর্থে আত্মজীবনীমূলক। ক্যারি হচ্ছে লেখক ক্যান্ডেস বুশনেলেরই 'অল্টার ইগো'।
সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই সময়কার কলামিস্ট ও লেখকরা কেমন উপার্জন করতেন তা নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন বুশনেল।
"নব্বইয়ের দশক মিডিয়ার জন্য বেশ ভালো সময় ছিল। আমি ভোগ ম্যাগাজিনে কাজ করেছি, কলাম লিখেছি এবং মাসে পাঁচ হাজার ডলারের মতো আয় করেছি। দ্য অবজারভার থেকে অবশ্য কম পেয়েছি। কিন্তু এতে আমার সমস্যা হতো না। চিন্তা করুন, এমন একটা সময় ছিল যখন ভ্যানিটি ফেয়ার ছয়টা লেখার জন্য বছরে আড়াই লাখ ডলারের চুক্তি দিত। তখন মানুষ লেখার মূল্য দিত। লেখালেখিকে 'সবাই পারে' বলে ভাবা হতো না। এখন কম্পিউটার চলে আসায় সবাইকেই কমবেশি লেখালেখি করতে হয়। সবার (লেখালেখি) করতে হয় দেখে আমরা ভাবি সবাই করতে পারে।"
ধারণা করা হয়, ক্যারির আয়ও বুশনেলের মতোই ছিল। কিন্তু বুশনেল আজকের লেখকদের তুলনায় তখন অনেক বেশি আয় করলেও, সে আয় দিয়েও ক্যারি চলতে পারবে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাজফিড সাংবাদিক জেম জ্যাকসনের মতে, বিলাস-বহুল জীবনযাত্রা ধরে রাখতে ক্যারি ব্র্যাডশকে অন্তত ১০ লাখ ডলারের ঋণে থাকতে হতো।
বই থেকে অনুমান করা হয়, ক্যারি মাসে চার হাজার ডলারের মতো আয় করে। এখান থেকে যদি আমরা আয়কর, বাসা ভাড়া (মাসপ্রতি দুই হাজার ডলারের মতো), ককটেলের জন্য ৪০০ ডলার, জুতার জন্য ৩০০ ও ট্যাক্সির জন্য ৩০ ডলার বাদ দেই তাহলে ক্যারির পক্ষে চলাফেরা করাটাই মুশকিল হয়ে ওঠবে।
বুশনেল নিজেই অবশ্য স্বীকার করেছেন, সেসময় নিউ ইয়র্কের মতো ব্যয়বহুল শহরে নিজের খরচ জোগাতে প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তার।
একটি নিবন্ধ থেকে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে কয়েক মাস চলতে পারতেন। মাঝে মাঝে টাকা ধার করেও চলতে হয়েছে তাকে। বাসা ভাড়া না জোগাতে পেরে উঠেছেন বন্ধুবান্ধবের বাসাতেও।
নব্বইয়ের দশকে কেমন আয় করতেন, বুশনেল সেই বর্ণনা দেওয়ার পর লেখকদের বর্তমান আয় আবার আলোচনায় এসেছে। গত তিন দশকে মুদ্রাস্ফীতি বাড়লেও লেখকদের বেতন কমেছে উল্টো গতিতে।
লেখক এবং কৌতুক অভিনেতা বিল শেফট বলেন, "বিশ বছর আগে প্রতি শব্দের জন্য তিন ডলার করে পেতেন লেখকরা। অনেকে এরচেয়ে বেশিও আয় করেছেন। কিন্তু আজকের দিনে প্রতি শব্দের জন্য এক ডলার পাওয়াটাও মুশকিল।"
বুশনেল নিজেও জড়িয়েছেন এই বিতর্কে। নিজের সংগ্রামের কথা স্বীকার করলেও ২০১৮ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ক্যারি একই সমস্যার মুখোমুখি হবে বলে মনে করেন না তিনি। অন্তত বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে না।
"বিশ বছর আগে মাসিক বাসা ভাড়া ছিল দুই থেকে তিন হাজার ডলারের মধ্যে। ক্যারি বছরে অবশ্যই ৬০ থেকে ৭০ হাজার ডলারের মতো আয় করত। যার মানে, সহজেই বাসা ভাড়া দিতে পারত সে। তার অ্যাপার্টমেন্ট ছোটই ছিল। বিল্ডিংয়ে লিফট বা দারোয়ান ছিল না। আমার অনেক বন্ধুই সেসময়ে এ ধরনের বাসায় থেকেছে," বলেন বুশনেল।
বাসা ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য থাকলেও, অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে থাকা ব্র্যান্ডের জামাকাপড় এবং জুতার খরচ বহন করতে পারত কি না ক্যারি, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
(এল পাইস থেকে অনূদিত)