Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 23, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 23, 2025
যেভাবে চারশ বছর পরও নিজের নাম রৌশন করে চলেছে চকবাজার

ফিচার

সালেহ শফিক
22 January, 2024, 03:00 pm
Last modified: 22 January, 2024, 03:10 pm

Related News

  • পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা: গভর্নর
  • ‘নিরাপত্তাঝুঁকিতে’ টাঙ্গাইলে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ
  • প্রস্তাবিত বাজেট ‘অকার্যকর, একতরফা’: বিএনপি
  • ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২৮ টাকা কমে ১৪০৩ টাকা
  • লোকসানের কারণে ২০২৪ সালের জন্য লভ্যাংশ দিতে পারছে না আইএফআইসি ব্যাংক

যেভাবে চারশ বছর পরও নিজের নাম রৌশন করে চলেছে চকবাজার

সালেহ শফিক
22 January, 2024, 03:00 pm
Last modified: 22 January, 2024, 03:10 pm

১৯০৪ সালে চকবাজারের চিত্র। ছবি: ফ্রিৎজ ক্যাপ

তিন থেকে সোয়া তিন লাখ টাকা প্রতি বর্গফুটের দাম। চকবাজারের চালু মার্কেটগুলোয় এর কমেও দোকানের পজেশন নিতে পারবেন তবে তা সামনের দিকে হবে না; আর বলাই বাহুল্য। খালি থাকা সাপেক্ষে। এখানকার ব্যাংকগুলোয় দিনে ২৫-৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। কেবল মৌলভীবাজারেই দিনে লেনদেন হয় হাজার কোটি টাকা। তাই আন্দাজ করা কঠিন নয়, পুরো তল্লাটে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়।

চকবাজার বলতে আমরা এখানে বুঝব উর্দু রোড থেকে সওয়ারিঘাট পর্যন্ত যার মাঝে ও আশপাশে আছে চকমোগলটুলি, চক সার্কুলার রোড, মৌলভীবাজার, মকিম কাটরা, বেগমবাজার, ছোট কাটরা, বড় কাটরা, চুড়িহাট্টা, চাম্পাতলী বা রহমতগঞ্জের ডালপট্টি। ঢাকা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদের সঙ্গে কথা বলে এ সীমানা স্থির করা হলো এই ভেবে যে সবগুলো জায়গা একই বৃত্তের মধ্যে এবং মোগলদের বাদশাহী বাজার বা চকবাজারকে মাঝখানে রেখেই বাকি জায়গাগুলোয় ব্যবসা ছড়িয়েছে।

মশলা থেকে কাইতন

মুদি মাল, কসমেটিকস, ইমিটেশন গয়না, মশলা, স্লেট-চক, ব্যাগ, জরী, ঘুড়ি, খেলনা, ছাতা, বাসন-কোসন, চকলেট, ওটস, আতর, বেত, ধর্মগ্রন্থ, কাইতন, আলকাতরা, জুতা, গোলাপজল ছিটানোর বোতল কিংবা শো-পিসের পাইকারি বাজার ওই চকবাজার। 'বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি' তকমার অধিকারী ঢাকা, যার ভালো নমুনা চকবাজার।

এর একেক গলিতে একেক পণ্যের সমাহার, মোড় ঘুরতেই পাওয়া যায় নতুন বাজার। মৌলভীবাজার যেমন কাঁচাবাজার, মশলা, তেল ও চিনির, চাম্পাতলী জুতার, চুড়ির জন্য চুড়িহাট্টা হালে প্লাস্টিকেরও, ইফতারির জন্য চক সার্কুলার রোড, শাহী মসজিদ বাজার বই-খাতা-বেত-আতর-জায়নামাজের। এ তালিকা সত্যি সুদীর্ঘ, যতটা পারা যায় বলবার চেষ্টা থাকবে।

চকবাজারে অনুষ্ঠান রাঙানোর উপকরণ। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

পুরোনো ঢাকার কথা উঠলে সূফী ভাইয়ের (ইতিহাসবিদ হাশেম সূফী) কথা মনে পড়ে প্রথমে। এবারও তেমনই হলো। রায়সাহেব বাজারের স্টার হোটেলে সূফী ভাইকে পেলাম রাত আটটা নাগাদ। পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইনের দিন বলে সারাদিনই সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে তাকে, কিছুটা ক্লান্ত ছিলেন। একটু জিরিয়ে নিতে দিলাম।

তারপর নিজেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন, 'আজকের বিষয় কি ঘুড্ডি ?' বিনীতভাবে বললাম, 'জি না, চকবাজার।'

এরপর আর নীরব রইলেন না। বলে চললেন সূফী ভাই, 'যেটা এখন জেলখানা, সেখানে সুলতানি আমলে দুর্গ বানিয়েছিল পাঠানরা। সে দুর্গ থেকে ঘুড়িও ওড়ানো হতো, উদ্দেশ্য কিন্তু খেলা ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল গোয়েন্দাগিরি। ঘুড়ির রং, লেজের ধরন, ঘুড়ির গড়ন দিয়ে সংবাদ দেওয়া-নেওয়া করা হতো কোথায় কত সৈন্য মওজুদ, কারা আসছে, কারা যাচ্ছে ইত্যাদি। সেই দুর্গেই থেকেছেন সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ, যিনি বাংলার দখল নিতে এসেছিলেন। আকবর বাদশাও বাংলাকে পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে পারেননি। শেষে তা পেরেছিলেন আকবরের ছেলে জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খান চিশতি।'

ইসলাম খানের বাদশাহী বাজার

ইসলাম খানের বহরে সেনাসংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের বেশি। এছাড়া খিদমতগার, মশালচী, পাচক, মাহুত, মাঝি, জোগানদার, তল্পিবাহক, হুঁকোবরদার, ভিস্তিওয়ালা এবং পরিবার-পরিজনের সংখ্যা মিলিয়ে পাওয়া যায় আরো ৫০ হাজার।

কলতাবাজার, মালিটোলা, শাখারিবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, রোকনপুর, জালুয়ানগর ইত্যাদি মহল্লাগুলো আগে থেকেই ছিল ঢাকায়। নতুন করে যোগ হলো ১ লক্ষ মানুষ। এদের মধ্যে ইরানী, তুরানী, আরবী, আফগানী, তুর্কী ইত্যাদি নানা জাতির মানুষ ছিল যাদের পোশাক, খাবার, চালচলন ছিল আলাদা। তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জোগান দিতে জেলখানা দুর্গের কাছে গড়ে উঠল বাদশাহী বাজার বা চকবাজার।

চকবাজারে হ্যান্ডব্যাগের দোকান। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

হাশেম সূফী জানালেন, চক মানে স্কয়ার। একটা চৌকোনা মাঠ মাঝখানে রেখে গড়ে উঠেছিল বাজারটি, যার দক্ষিণদিক খোলা ছিল এবং পশ্চিমদিকে মসজিদ। তাঁবুতে বসত দোকান ফজরের নামাজের পরে আর ভাঙত মাগরিবের আযান দেওয়ার আগে। একেক তাঁবুতে একেক পসরা সাজানো থাকত। কোনোটায় খাবার, কোনোটায় পোশা্‌ কোনোটায় প্রসাধনী বা বিলাসদ্রব্য। গালিচা বা কার্পেটের দোকানও ছিল। পাখি বেচাকেনার তাঁবুও থাকার কথা। ইগলের প্রতি মোগলদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এটা যেমন শৌর্যের প্রতীক, গোয়েন্দা কবুতর ধরে আনার কাজেও ছিল পারদর্শী। তোতা, টিয়া, ময়না, কাকাতুয়াও বিক্রি হতো।

দোকান বসত তাঁবুতে

মসলিন ছিল মহার্ঘ্য, অভিজাত লোক ছাড়া বেশি কেউ কিনতে পারত না। এটি বিশেষ বাক্সে সযত্নে রাখা থাকত। প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে বা বিছিয়ে রাখার কথা নয়, তেমন তেমন লোক এলে মহাজন বাক্স খুলতেন।

তবে বেশিরভাগ মসলিন তৈরি হতো প্রি-অর্ডারে। গভর্নর বা সুবাহদার দিল্লীতে ভেট পাঠাতে চাইলেন অথবা কোনো ধনী বণিক সুবাহদারের কাছ থেকে কিছু সুবিধা পেতে চাইলেন, মসলিন ছাড়া ভাবা হতো না অন্যকিছু, হাতে সময় রেখে তাই তাঁতীবাজারে অর্ডার পৌছে দেওয়া হতো।

চুড়িহাট্টার একটি দোকান। ছবি সৈয়দ জাকির হোসেন

তাঁবুর সংখ্যা ধারণা করা মুশকিল, তবে শতের অধিক হওয়া বিচিত্র নয়। মোগলরা শৌখিন ছিল, আর বিত্তবান তো বটেই। তাই ইউরোপীয় বণিকরা তাদের মুলিকের জিনিসপত্র নিয়েও হাজির হতো। পদস্থ মোগল ও তাদের দোস্তরা বিকালনা গাদ চকে এসে কফি পান করত বা হুঁকায় টান দিত এবং রাজ্যের গল্প জুড়ে দিত। তখনকার চক অনেক জাতি, পেশার মানুষের এক অভূতপূর্ব মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল বলে মনে করা যায়।

ঘোড়া বা উট বেচাকেনাও কি চকেই হতো? প্রশ্নের উত্তর দিলেন সূফী ভাই, 'ঘোড়া, উট বিক্রি হতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়, তবে কিছুটা তফাতে। কামারের, মানে তলোয়ার, ডেগার, বল্লম তৈরির দোকানও ছিল, তবে কিছু ফারাকে হওয়ারই কথা।'

ড. মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ জানালেন, মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায় দাস বেচাকেনা হতো। অবশ্যই প্রতিদিন নয়, যেদিন হতো তার আগেই ঢেরা পিটিয়ে জানান দেওয়া হতো। সুবাদারের ফরমান ঘোষণার জন্যও ভালো জায়গা ছিল চক।

ইসলাম খানের সময়কালে ঢাকা শহর বুড়িগঙ্গার পার থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে উত্তরদিকে। আগের ও নতুন ঢাকার মাঝখানে বুড়িগঙ্গার শাখা নদী ধোলাইকে তিনি সচল করেছিলেন যা পরিখার কাজও করেছিল।

উত্তর দিকে শহর যত বড় হতে থাকল, ততই চকবাজার জমে উঠতে থাকল। ধোলাই নদী পার হয়েও লোকজন আসত, তবে কম টাকা নিয়ে এসে চকে সুবিধা করা যেত না। তখন চক ছিল খুচরা বাজার, এখন এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার।

পুতুলের দোকান। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

মসলিন, সোরা, মাখনের চালান

দিনে দিনেই কি বাড়ছিল ঢাকার জনসংখ্যা? সূফী ভাই জানালেন, জনসংখ্যা কখনো বেড়েছে কখনো কমেছে, তবে মহল্লা তৈরি হয়েছে নতুন নতুন। আতিশখানা যেমন চক থেকে মোটামুটি দূরে, অথচ এখানে যে গোলাবারুদ তৈরি হতো তার ফরমায়েশ তো জেল দুর্গ থেকে সুবাহদারই দিতেন।

পর্তুগিজ ধর্মপ্রচারক সেবাস্তিয়ান মানরিক ঢাকা বেড়াতে এসেছিলেন ১৬৪০ সালে। তার হিসাবে ঢাকায় তখন ২ লক্ষ লোক বাস করে। প্রতি বছর শত শত জাহাজ ঢাকা বন্দর ছেড়ে যেত, সেগুলো মসলিন, রেশমবস্ত্র, সোরা, চিনি, মাখন, চাল, নীল, মরিচ আর মোম দ্বারা পূর্ণ থাকত, বলেছেন মানরিক।

১৬৬৩ সালে শায়েস্তা খান যখন প্রথম দফায় সুবাহদার তখন ভেনিশিয়ান পর্যটক নিকোলাই মানুচ্চি ঢাকায়। লিখে গেছেন, না খুব বড়, না খুব শক্তিশালী শহর ঢাকা, কিন্তু মানুষ অনেক।

ইসলাম খান ও সুলতান মুহাম্মদ আজম শাহের মধ্যবর্তী সময়ে ১০ জনেরও বেশি সুবাহদার পেয়েছে ঢাকা। আজম শাহ ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই সময়কালে কতটা বদলেছিল চকবাজার?

সূফী ভাই জানালেন, বলার মতো বেশি পরিবর্তন কিন্তু ঘটেনি। একটা বড় কারণ ঢাকার জনসংখ্যার প্রায় একইরকম ছিল। সুবাহদার সঙ্গে করে কিছু লোক নিয়ে আসেন, আবার ফেরার সময় তার সঙ্গে কিছু লোক ফিরেও যায়। তাই নতুন প্রয়োজন তৈরি হয়নি আর প্রযুক্তির বিকাশও তখন বছর বছর ঘটত না। তবে তাঁবুর স্থলে কিছু পাকা দোকানঘর হয়ে থাকতে পারে। আশপাশে কিছু মোগল ইমারত তৈরি হয়েছিল, যেমন হোসেনি দালান নির্মিত হয় ১৬৪২ সালে, চকবাজার শাহী মসজিদ তৈরি হয় ১৬৭৬ সালে। এসব উপলক্ষে কারিগর, ওস্তাগারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে যাওয়ার কথা, মক্তবে ছাত্রসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকবে। সে হিসাবে বিক্রি হয়তো বেড়ে থাকবে, দোকানও কিছু বাড়বে, তবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

জাহাজ বিল্ডিং, ঢাকার প্রথম কমার্শিয়াল বিল্ডিং। ছবি সৌজন্য: মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ

মহিষের চিরুনি আর ফিলাগ্রি

শায়েস্তা খান যখন দ্বিতীয় দফায় (১৬৭৯-১৬৮৮) সুবাহদার হয়ে ফিরলেন তখন তার কন্যা পরী বিবির মৃত্যু ঘটলে ঢাকা শোকে আকুল হয়। জৌলুস বৃদ্ধি পায়নি চকবাজারের।

তারপর ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরবর্তীকালে দিল্লির মোগল দরবার রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার প্রভাব ঢাকায়ও পড়েছিল প্রবলভাবে। একপর্যায়ে মুর্শিদকুলী খান ঢাকা থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে চলে যান মুর্শিদাবাদে।

সুবাহ বাংলার রাজধানীর মর্যাদা হারিয়ে ঢাকা শ্রীহীন হয়ে উঠতে থাকে। এতে চকবাজারের শ্রীবৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। তবে তখনো ঢাকার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কিন্তু ওই চকবাজার আর জেলখানাতে পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্রও বহাল ছিল। তাই জৌলুস না বাড়লেও চকবাজারের গুরুত্ব অটুট ছিল, অন্যতম একটি কারণ পণ্য বৈচিত্র্য।

ততদিনে সোয়াশ বছর অতিক্রান্ত বাজারটি কম মানুষ দেখেনি, এদের সবাই না হলেও অনেকেই হাতে করে কিছু না কিছু পণ্য নিয়ে এসেছে, ফেরতও গেছে কিছু না কিছু নিয়ে। তাই বাজারটিতে নতুন নতুন পণ্যের দেখা মিলত মাঝেমধ্যে এবং সেই আকর্ষণেও অনেকে ফিরে ফিরে আসত।

ঢাকা ফোরামের আয়োজন নাল্লি নাইট। মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ (মাঝে)। ছবি: মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া

মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ জানালেন, চকের কিছু পণ্য আদি থেকেই তার মান ও চাহিদা ধরে রেখেছিল, যেমন মহিষের শিংয়ের চিরুনি বা ফিলাগ্রি নামের রুপার সুতায় তৈরি তৈজসপত্র ও বিভিন্ন স্থাপনার রেপ্লিকা। মসলিনের দর বরাবরের মতো তখনো ছিল উঁচুতে। নানরুটি, বাকরখানি আর কাবাবের জন্যও চকে না গিয়ে উপায় ছিল না।

পুঁথির যুগে চকবাজার

পরে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর যখন নায়েবে নাজিমদের আমল শুরু হলো, তখন প্রশাসনিক কেন্দ্র নিমতলীতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল বিশাল এক পট পরিবর্তন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী নায়েবে নাজিমরা ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। তারা শহর ঢাকার শ্রীবৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। অন্যদিকে কোম্পানির কুঠি ও কারখানা সদরঘাটের কাছে ছিল বলে সেদিকটায় সম্প্রাসরণ ঘটছিল। অন্য ইউরোপীয় বণিক যেমন ডাচ, ফরাসী, গ্রিক, পর্তুগীজ বা আর্মেনীয়দের বসতিও ছিল সদরঘাটের কাছে। এর মধ্যেও চকবাজারকে দেখি বহাল তবিয়তেই বহাল থাকতে।

ঢাকার সিভিল সার্জন জেমস টেলর তার কোম্পানী আমলে ঢাকা গ্রন্থে লিখছেন, চক বা বাজার এলাকা শহরের পশ্চিম সীমায় এবং নদীর সমান্তরালে প্রসারিত সড়কের পাশে অবস্থিত। এটা বেশ বড় আকারের বর্গাকৃতি স্থান এবং প্রধানত মসজিদ ও দোকানপাট দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর চারপাশে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাস্তা আছে, কেন্দ্রস্থলে আছে ভারী একটি কামান।

১৮৫০ সালের দিকে চকবাজার এক নতুন যুগে প্রবেশ করে, সেটি হলো পুঁথির যুগ, যার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় মোহাম্মদ আব্দুল কাইউমের চকবাজারের কেতাবপট্টি বইতে। তিনি লিখছেন, 'ঢাকার চকবাজারের পশ্চিম দিকে স্থাপিত কয়েকটি বইয়ের দোকান এবং তার আশপাশের কয়েকটি ছাপাখানাকে কেন্দ্র করে মুসলমানী পুঁথির বেসাতি শুরু হয়।'

মুন্সী হায়দার জান, মুন্সী আলিমুদ্দিন প্রমুখের বইয়ের দোকান ছিল চকপট্টিতে। কেতাবপট্টি চকের আশপাশের মোগলটুলী, বড়কাটরা, ছোটকাটরা, চাম্পাতলী, ইমামগঞ্জেও বিস্তৃত ছিল।

দোকানীদের জন্য টিফিন ক্যারিয়ার করে খাবার আসে। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

ইমামগঞ্জে কবি হরিশচন্দ্র মিত্রের উদ্যোগে ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুলভযন্ত্র নামের বাংলা মুদ্রণ-যন্ত্র। এর ১০ বছর পরে স্থাপিত হয় মুহম্মদী যন্ত্র। ১৮৭৬ সালে ছোট কাটরার চাম্পাতলীর গলিতে স্থাপিত হয় আজিজিয়া প্রেস।

চকবাজার কেতাবপট্টির পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খোয়াজ ডাক্তার, মনিরুদ্দিন ডাক্তার প্রমুখ। প্রণয়কাব্য, হামদ ও নাত বিষয়ক গ্রন্থ বা পুঁথি বেশি রচিত হয়েছে। সারাবির আজাবের বয়ানের মতো উপদেশমূলক বইও পাওয়া যেত।

মহাবিদ্রোহের ধাক্কাও সামলেছিল

১৮৫৭ সাল, মহাবিদ্রোহের বছর। লালবাগ কেল্লাকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ সংঘঠিত করেছিলেন সিপাহীরা। ব্রিটিশ বেনিয়ার দল মাস কয়েকের মধ্যে তা কঠোরহস্তে দমন করে এবং শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

এটি ছিল চকবাজারের ওপর একটা বড় ধাক্কা। ভারতের শাসনভার এখন থেকে ব্রিটিশরাজের হাতে ন্যস্ত হয়। তারা সচেতনভাবেই মোগল ঢাকার সম্প্রসারণ রহিত করে এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র সদরঘাটের দিকে সরিয়ে আনে। ভিক্টোরিয়া পার্কের এধারে-ওধারে বসতি, স্কুল, গির্জা, ব্যাংক, হাসপাতাল, আদালত, হোটেল, বাজার গড়ে উঠল দ্রুতই এবং ব্রিটিশরা শহর ছড়িয়ে দিতে থাকল ওয়ারি বা গেন্ডারিয়ায়।

১৮৫৭ সালের ধাক্কাও সামলে উঠেছিল চকবাজার। কীভাবে? মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ যে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিলেন, তা হলো বংশ পরম্পরা ও ঢাকাইয়া সংস্কৃতি। দোকান মালিক ও দোকানিরা উত্তরাধিকারসূত্রে যুগ যুগ ধরে চকবাজারে ব্যবসা চালিয়ে গেছে আর ঢাকাইয়া সংস্কৃতি উদযাপনের কেন্দ্রও হয়ে উঠেছিল চকবাজার, যেমন সুন্নতে খাৎনা বা বিয়ে করার সময় বরকে ঘোড়ার গাড়িতে করে চকে চক্কর দেওয়ানো রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

চকে শাবেবারাত, দিওয়ালি উৎসবও হতো সাড়ম্বরে। এটা আগ্রা থেকে আসা মোগল সিলসিলার অংশ ছিল। তাই চক হারিয়ে গেলে কেবল ব্যবসাই নয়, সংস্কৃতিও হারিয়ে যেত যা কখনোই ঢাকাবাসী হতে দিত না।

রমজানের গোলাপি উখড়া

১৮৯০-৯৫ সালের ঢাকা তথা চকবাজারের সবিস্তার বর্ণনা আমরা পাচ্ছি হাকিম হাবিবুর রহমানের ঢাকা পাচাস বারাস পেহলে বইতে। তিনি তার বাল্যকালে লখনৌ থেকে প্রথমে মাদার বখশ, তারপর আলাউদ্দীন (আলাউদ্দিন সুইটস) নামের দুই হালুয়াই বা মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারীকে চকে আসতে দেখেন, তারা এখানে দোকান খোলে এবং হিন্দুস্তানি মিষ্টির প্রচলন ঘটায়। ঢাকার যেসব বিশিষ্ট খাবারের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, যেমন পোলাও, কাবাব, কোফতা বা কোরমা—সবই এসেছে মোগলদের হাত ধরে।

হাবিবুর রহমান আরো জানাচ্ছেন, ঢাকায় তখন ঘরে ঘরে ঘড়ি ছিল না। চক থেকে দুধ ও দুধের সর বিক্রেতাদের দোকান উঠে যাওয়া রাত ১২টা বাজার সুনির্দিষ্ট চিহ্ন মনে করা হতো এবং ভোর হবার নিশ্চিত পরিচয় ছিল রুটি বিক্রেতার তন্দুরে অগ্নি প্রজ্বলন।

পাকিস্তান আমলে চকবাজার। ছবি সৌজন্য: মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ

হাবিবুর রহমান চকের ইফতারির বর্ণনাও দিয়েছেন: 'চকে ইফতারির দোকান বসত এবং ধনী-গরীব সবাই চকে আসত এবং তিন প্রহরে বেশ ভালো মেলা জমে যেত। মহল্লায় দোকান বসত না তখন। প্রত্যেক ব্যক্তিই চক থেকে কিছু না কিছু আনত। বিভিন্ন ধরনের পিঠা এবং রমজানের বিশেষ বিশেষ জিনিস এখানেই পাওয়া যেত। এর মধ্যে গোলাপি উখড়া রমজান ছাড়া কখনোই পাওয়া যেত না। আলাউদ্দিন হালুয়াইয়ের দোকানেই কেবল নিমক পারা, সামুচা এবং লখনুই শিরমাল পাওয়া যেত।' 

এ পর্যায়ে সূফী ভাই যোগ করলেন, 'ফ্রিৎজ ক্যাপের (জার্মান আলোকচিত্রী, ঢাকার প্রথম ফটো স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা, ১৯০৩-০৪) ছবিতে দেখতে পাই চকের মাঝখানের মাঠে টালির ছাউনি দেওয়া বাঁশ বেড়ার দোকানঘর হয়ে গেছে অনেক যার শুরু সম্ভবত ১৮৫০ এর দশকে।'

চকবাজারে যাদের শুরু

গেল শতকের গোড়ায় মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদের দাদা শামসুদ্দিন আহমেদ ঢাকায় দেশের প্রথম অস্ত্র ব্যবসা তথা বন্দুকের দোকান চালু করেন চকবাজারে। কিছু আগে বা পরে আফতাবউদ্দিন আহমেদ (মধুমিতা সিনেমা হলের মালিকের বাবা), আনোয়ার গ্রুপের আনোয়ার হোসেন, কামার উদ্দিন আহামেদ, সিরকো সিরাজউদ্দিন আহমেদ, নাজিম উদ্দীন আহমেদ, ফকরুদ্দিন আহমেদ,দলিল উদ্দিন আহমদ, ইয়াকুব ম্যানসনের মোঃ ইয়াকুবের মতো ব্যবসায়ীদের দেখতে পাই চকে।

হাফেজ মনির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কথাও জানালেন মোমতাজউদ্দিন, তিনি মশলা ও মনোহারী দ্রবের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। আলীজান বেপারি ছিলেন বড় তামাক ব্যবসায়ী। হাজী আঃ গণি সরদারও ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বম্বে সুইটস, আলম ছাতা, আলাউদ্দিন ছাতা, ক্রাউন হারিকেনের উত্থান আর প্রসারও চকবাজার থেকে। বস্তুত পাক আমলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের প্রায় সবাই ছিলেন চকবাজারের ব্যবসায়ী।

মোমতাজউদ্দিন আরো জানালেন, জাহাজ বিল্ডিং নামে খ্যাত ঢাকার প্রথম কমার্শিয়াল বিল্ডিংটি চকবাজারে তৈরি হয়েছিল সম্ভবত ১৯৪৫ সালে। পাকিস্তান হওয়ার পর বাজারে নন-বেঙ্গলিদের আধিপত্য তৈরি হয়। তারা নানারকম পণ্য আমদানি করতে থাকে, যেমন শো পিস, খেলাধুলা সামগ্রী, কসমেটিকস ইত্যাদি।

যখন জাহাজ বিল্ডিং ছিল তখনকার চকবাজার। ছবি সৌজন্য: মোমতাজউদ্দিন আহাম্মদ

নতুন চকবাজারের শুরু ছিল সেটা। চলচ্চিত্র এ পর্যায়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। নায়ক-নায়িকার পোশাক-আশাক, খাবার ঘর, অফিস সজ্জা, অবসর কাটানোর উপকরণ, গৃহস্থালি সামগ্রী দেখে ক্রেতাদের মধ্যে নতুন নতুন চাহিদা তৈরি হয়, আর সে চাহিদা পূরণে চকবাজার পিছিয়ে থাকেনি।

ক্রমান্বয়ে চকবাজারের গলি ও মহল্লাগুলো একক পণ্যের বাজারে পরিণত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে মৌলভীবাজার মানে মশলা, চাম্পাতলি মানে জুতা-স্যান্ডেল, সওয়ারিঘাটের নামায় মাছের আড়ত, গুড় ও তামাক, চক মোগলটুলিতে সুতা, মকিম কাটরায় বেকারি আইটেম মায় লজেন্স, ললিপপ কিংবা রাসায়নিক উপকরণ মানে ইমামগঞ্জ। তাবিজ-কাইতুন, মাছের বড়শি ইত্যাদির জন্যও খ্যাত হলো কোনো কোনো গলি।

টিকে থাকার আসল রহস্য

মোমতাজউদ্দিন বলছিলেন, 'দীর্ঘকাল ধরে বাজারটি টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো এর অ্যাডাপটেশন প্রসেস অর্থাৎ নতুন কোনোকিছু স্বাগত জানাতে কসুর করেনি বাজারটি। সময়ের দাবি মেটাতে প্রস্তুত থেকেছে, যার প্রকাশ আবার দেখা গেল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

'দেশের প্রথম রপ্তানিকারক গার্মেন্ট কারখানা রিয়াজ ফ্যাশন তার শোরুম প্রতিষ্ঠা করেছিল চকবাজারেই। আশির দশকের শুরু থেকে এখানে রিসাইকেলড প্লাস্টিক মিলতে থাকল। ইমিটেশন গয়নারও বড় বাজার তৈরি হলো। আমার মনে হয়, ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত চকবাজারই ছিল ঢাকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। পণ্যবৈচিত্র্যের বেলায় বাজারটিকে আজও কেউ ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে বলে হয় না। এখন যেমন চকলেট, ওটস, বাটার, পাউডার মিল্কেরও পাইকারি বাজার চকবাজার। এ কারণেই চারশ বছর ধরে বাজারটি শুধু টিকেই থাকেনি, উপরন্তু নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, করেই চলেছে।'

Related Topics

টপ নিউজ

চকবাজার / মার্কেট / টাকা / ব্যাংক / মশলা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’
  • ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল
  • মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?
  • ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান
  • সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

Related News

  • পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা: গভর্নর
  • ‘নিরাপত্তাঝুঁকিতে’ টাঙ্গাইলে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ
  • প্রস্তাবিত বাজেট ‘অকার্যকর, একতরফা’: বিএনপি
  • ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২৮ টাকা কমে ১৪০৩ টাকা
  • লোকসানের কারণে ২০২৪ সালের জন্য লভ্যাংশ দিতে পারছে না আইএফআইসি ব্যাংক

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’

2
আন্তর্জাতিক

ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল

3
আন্তর্জাতিক

মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক

4
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?

5
আন্তর্জাতিক

ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান

6
আন্তর্জাতিক

সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net