Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
June 25, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, JUNE 25, 2025
টেলিফোন অপারেটর: একেকজন জীবন্ত ডাইরেকটরি!

ফিচার

সালেহ শফিক
16 September, 2023, 03:00 pm
Last modified: 16 September, 2023, 04:15 pm

Related News

  • ৩২০ বছর পর বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ!
  • দিনমজুরের হাতেলেখা পত্রিকা আশা ছড়াচ্ছে পটুয়াখালীতে

টেলিফোন অপারেটর: একেকজন জীবন্ত ডাইরেকটরি!

‘সারা অফিসে একটিই টেলিফোন থাকত, কোনো অপারেটর ছিল না। সেই টেলিফোনেই খবর সংগ্রহ থেকে বিজ্ঞাপন যোগাড়ের কাজ চলত। ষাটের দশকে প্রথম একটি পিবিএক্স বা প্রাইভেট ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ এলো অবজারভার পত্রিকায়। তারপর এলো পিএবিএক্স বা প্রাইভেট অটোমেটিক ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ। এখন এসেছে হান্টিং লাইন। খবরের কাগজে টেলিফোন বাড়ল, অপারেটরের সংখ্যাও বেড়ে গেল। টেলিফোন অপারেটররা হয়ে গেল সংবাদপত্র পরিচালনা ও প্রকাশনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার তো অবাক লাগে তারা এতো নম্বর মুখস্থ রাখেন কী করে!'
সালেহ শফিক
16 September, 2023, 03:00 pm
Last modified: 16 September, 2023, 04:15 pm
প্রতীকী ছবি/ সংগৃহীত

'সংবাদপত্রের টেলিফোন অপারেটরকে জীবন্ত ডাইরেকটরি বলা যায়', লিখে গেছেন সাংবাদিক এবিএম মূসা। রেজাউল করিম, সেলিনা পারভীন আর মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওই কথার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁদের প্রত্যেকেরই হাজারখানেক টেলিফোন নম্বর মুখস্থ।

বাংলাদেশ সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থা টেলিফোন অপারেটর কল্যাণ সমিতির ২০০৩ সালের প্রকাশনা 'প্রত্যয়'এ এবিএম মূসা স্মৃতিচারণা করেছেন পঞ্চাশের দশকের: 'সারা অফিসে একটিই টেলিফোন থাকত, কোনো অপারেটর ছিল না। সেই টেলিফোনেই খবর সংগ্রহ থেকে বিজ্ঞাপন যোগাড়ের কাজ চলত। রিপোর্টার টেলিফোন তুলে শুনত বিজ্ঞাপন ম্যানেজার কথা বলছেন। সম্পাদক সাহেব ফোন তুলে ধমক দিতেন, রিসিভার রাখ, আমি টেলিফোন করব। টেলিফোন সেট তুলে বাক্সের গায়ে লাগানো হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে এক্সচেঞ্জে নম্বর চাইতে হতো। ষাটের দশকে প্রথম একটি পিবিএক্স বা প্রাইভেট ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ এলো অবজারভার পত্রিকায়। তারপর এলো পিএবিএক্স বা প্রাইভেট অটোমেটিক ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ। এখন এসেছে হান্টিং লাইন। খবরের কাগজে টেলিফোন বাড়ল, অপারেটরের সংখ্যাও বেড়ে গেল। টেলিফোন অপারেটররা হয়ে গেল সংবাদপত্র পরিচালনা ও প্রকাশনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার তো অবাক লাগে তারা এতো নম্বর মুখস্থ রাখেন কী করে। রিপোর্টার বা সম্পাদক সাহেব তো নম্বর বলেন না। শুধু বলেন অমুককে লাগাও দেখি। অমুক মানে মন্ত্রী থেকে থানার ওসি অথবা কোনো বন্ধুবান্ধবও হতে পারেন।'

দি নলেজ ওয়ার্কার

ডেইলি স্টারের ধানমন্ডি কার্যালয়ে রেজাউল করিম/ ছবি সৌজন্য- রেজাউল করিম

রেজাউল ২৯ বছর ৭ মাস ১৪ দিন ডেইলি স্টারের পিএবিএক্সে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, 'একটি দৈনিক পত্রিকায় টেলিফোন অপারেটর হলেন হাইওয়ের মতো। হাইওয়েতে গাড়ি যেমন দ্রুত চলতে পারে, ভালো অপারেটরও প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ দ্রুত ও সহজ করে তুলতে পারেন।'

মোহাম্মদ ইব্রাহিম এখন কর্মরত আছেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। টেলিফোন অপারেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন ১৯৯৬ সালে, দৈনিক আজকের কাগজে। তারপর দৈনিক বাংলাবাজার, যুগান্তর ও আমার দেশে কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন, 'পত্রিকার ভাবমূর্তির অনেকটাই টেলিফোন অপারেটরের ওপর নির্ভর করে। একজন তুখোড় অপারেটর স্বল্প সময়ের মধ্যে মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের মন্তব্য পেতে প্রতিবেদককে সাহায্য করেন এবং অন্য পত্রিকার চেয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে রাখেন।'

সেলিনা পারভীন দৈনিক দিনকালে অপারেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন ১৯৯১ সালে। তারপর ইন্ডিপেনডেন্ট ও আমার দেশ মিলিয়ে তার কেটে গেছে দুই দশকের বেশি সময়। তিনি বললেন, 'অপারেটরকে হতে হয় বিনয়ী, ভদ্র, ধৈর্যশীল। তার মধুর ব্যবহার মন্ত্রী বা এমপিদের মন্তব্য ও সাক্ষাৎকার পাওয়া সহজ করে তুলতে পারে। কণ্ঠ চেনাও একটি জরুরী ব্যাপার অপারেটরের। যেমন ধরুন ফোন পেয়েই অপারেটর বললেন, স্যার ভালো আছেন? ওপ্রান্তের মানুষটি কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটা নৈকট্য বোধ করবেন। এরপর তাকে আপনার যতবার প্রয়োজন হবে তিনি আপনাকে ব্যস্ত থাকলেও সময় দেবেন।'

ইডব্লিউএমজিএলের পিএবিএক্স রুম/ ছবি সৌজন্য- মোহাম্মদ ইব্রাহিম

একইরকম ভাবনার প্রতিফলন দেখতে পাই প্রত্যয়ে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের একটি লেখায়। তিনি অপারেটরদেরকে অভিহিত করেছেন নলেজ ওয়ার্কার বলে। লিখছেন, 'সংবাদপত্রে সম্রাটের আসন যদি হয় রিপোর্টারের তবে তার দক্ষিণ হস্ত যিনি হবেন-তিনি নিশ্চয় টেলিফোন অপারেটর। একজন অপারেটরের বুদ্ধিদীপ্ত আলাপন এবং সংযোগ সাংবাদিকের ও সংবাদপত্রের জন্য বিস্ময়কর সাফল্য ও কৃতিত্ব নিশ্চিত করতে পারে।'

বিষয়টিকে তিনি আরো বিস্তৃত করছেন লেখার পরের অংশে, 'পিক আওয়ারে কোনো রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করা খুবই দুরূহ। একদিকে তথ্যের বিশুদ্ধতা যাচাই অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা। একজন রিপোর্টার যখন এই টেনশনের যাঁতাকলে পড়েন তখন তাকে মৃতসঞ্জীবনী সুরাদাতার নাম টেলিফোন অপারেটর। অনেক সময় এমনই চাপ পড়ে যে, টেলিফোনের নম্বর দেয়া দূরে থাকুক, নির্দিষ্ট করে কারুর নাম বলাও কঠিন হয়ে পড়ে। গঙ্গা নদীর পানির হিস্যা নিয়ে রিপোর্ট লেখার সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য রিপোর্টার আইনুন নিশাতকেই চাইবেন। এবং এটা অস্বাভাবিক নয় যে, ড. নিশাতকে তখন পাওয়া যাবে না। একজন চৌকস অপারেটর তখনই পরিণত হতে পারেন একজন নলেজ ওয়ার্কারে। তিনি তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার দ্যুতি ছড়িয়ে আরেকজন খ্যাতিমান পানি বিশেষজ্ঞকে টেলিফোনের অপর প্রান্তে নিশ্চিত করে দিতে পারেন।'                

পুরস্কারও মেলে

ডায়াল ফোনের আমলে রেজাউল করিম পিএবিএক্সে কাজ শুরু করেন। সেকালে পিএবিএক্সের সক্ষমতা ছিল ৫+২৫ মানে পাঁচটি ফোন দিয়ে একটি এক্সচেঞ্জ, সঙ্গে ২৫টি এক্সটেনশন।

একটি আইপি পিএবিএক্স ডেস্ক/ ছবি সৌজন্য- মোহাম্মদ ইব্রাহিম

১৯৬৫ সালে দিনাজপুরে জন্ম রেজাউলের। ৪ ভাই ও ৪ বোনের বড় সংসার তাদের। বাবা কৃষিকাজ করতেন। এসএসসি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তারপর '৮২ সালে চলে যান সৌদি আরব। সেখানে তিন বছর থেকে '৮৫ সালে দেশে ফেরেন। তারপর এক আত্মীয়ের মারফত চাকরি নেন ঢাকা ক্লাবের পিএবিএক্সে। পাঁচ বছর সেখানে কাজ করার পর একানব্বই সালের ৫ জানুয়ারি ডেইলি স্টারে যোগ দেন রেজাউল। দৈনিক বাংলা মোড়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দুটি ফ্লোর মিলিয়ে ছিল ডেইলি স্টারের অফিস। তখন ট্রায়াল কপি বের হচ্ছিল। রেজাউলরা বাসায় ফেরার পথে ১০-১৫ কপি করে নিয়ে বের হতেন। চেনা লোকদের মধ্যে বিলি করতেন, অচেনা লোকদেরও দিতেন। পত্রিকাটি বাজারে আসে ১২ ফেব্রুয়ারি।

২০১১ সালে ডেইলি স্টারের বিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সম্মাননা নিচ্ছেন রেজাউল করিম/ ছবি সৌজন্য- রেজাউল করিম

তখন কেবল বিভাগীয় প্রধানের ডেস্কেই ছিল টেলিফোন সেট। বিভাগের বাকি সকলেই সে ফোনটি ব্যবহার করত। দৈনিক বাংলার মোড় খুব জমজমাট ছিল সেকালে। রাতের শিফটে ডিউটি থাকলে ডিম-পরোটা খেতেন। তখন ফোন ছিল অ্যানালগ। নম্বর ছিল ৬ ডিজিটের। এলাকাভিত্তিক কোড ছিল যেমন মতিঝিলের ২৩, মোহাম্মদপুরের ৩১, মিরপুরের ৪০ ইত্যাদি।

ডেইলি স্টারের কার্যালয় চারবার জায়গা বদল করেছে। দৈনিক বাংলা থেকে গিয়েছে ধানমন্ডি, সেখান থেকে পরে কারওয়ানবাজার এবং শেষে ফার্মগেটের কাছে নিজ কার্যালয়ে। সবগুলো কার্যালয়ে কাজ করেছেন রেজাউল। সময়ের পরিবর্তনে ডায়াল ফোনের জায়গায় বাটন ফোন এসেছে, ৬টি থেকে ডিজিট ৭টি হয়েছে, শেষে ২০১২-১৩ সালের দিকে আসে ৯৬ দিয়ে শুরু হওয়া ইন্টারনেট ফোন (আইপি) যাতে থাকে ২০টি লাইন; দেড়শটি এক্সটেনশনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। রেজাউল ডেইলি স্টার ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি কখনো। দুই কারণে মূলত- বেতন ভালো ছিল আর ভালো ছিল অফিসের পরিবেশ। সম্পাদক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকরা সদাচারী ছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা সম্পাদক তৌফিক আজিজ খান একবার ভালো কাজের পুরস্কার স্বরুপ রেজাউলকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। সময়ের হিসাবে সেটা অনেক টাকা।

রেজাউল বললেন, 'রিপোর্টার থেকে এডিটর- ডেইলি স্টারের সবাই ছিলেন সুশিক্ষিত ও মার্জিত রুচির মানুষ। তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে উচ্চ পদে কর্মরত যেমন তৌফিক ইমরোজ খালিদী, নূরুল কবীর, ইনাম আহমেদ, সাবির মুস্তাফা, শাহরিয়ার খান, শাখাওয়াত লিটন, মাসুদ হাসান খান, হারুন রশিদ প্রমুখ। সবারই আমি ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছি। পত্রিকায় কাজের চাপ যেমন বেশি আবার কাজ পারার আনন্দও কম নেই। মন দিয়ে কাজ করেছি, ফলাফলে উপহারও পেয়েছি অনেক। মনে আছে, ইনাম আহমেদ একবার লন্ডন থেকে আমার জন্য একটা শার্ট এনেছিলেন। এটা ছিল আমার জন্য দারুণ একটা খুশির ব্যাপার।'  

প্রত্যয়ে এবিএম মূসার লেখা/ ছবি সৌজন্য- মোহাম্মদ ইব্রাহিম

ফোন নম্বর টুকে রাখার জন্য দূতাবাসগুলোর, ব্যাংক-ইনস্যুরেন্সের, অফিস কর্মীদের, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের, এক্সপার্টদের, বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর, ওভারসিজ কলের, জেলা প্রতিনিধিদের আলাদা আলাদা খাতা তৈরি করেছিলেন রেজাউল। আরেকটি খাতা ছিল এ থেকে জেড মানে ইংরেজী ২৬ অক্ষরের যেখানে নামের আদ্যাক্ষর ধরে ফোন নম্বর লিখে রাখতেন। খাতায় সংরক্ষণের পরেও কেন নম্বর মুখস্থ রাখতে হয় , জানতে চাইলে রেজাউল বললেন, 'কিছু নম্বর বার বার সংযোগ দেওয়ার ফলে আপনা থেকেই মুখস্থ হয়ে যায়, এছাড়া পিক আওয়ারে এতো চাপ থাকে যে খাতা থেকে নম্বর বের করার সময় পাওয়া যায় না। তাই নম্বরগুলো মুখস্থ থাকলে সুবিধা।'       

ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিতে হয়

মোহাম্মদ ইব্রাহিম আজকের কাগজে যোগ দেওয়ার পর টেলিফোন অপারেটরদের সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পিএবিএক্সে ৩২ বছর হতে চলল তার।

তিনি বলেন, 'আমার অনুরোধে ড. নীলিমা ইব্রাহিম, এবিএম মূসা, রণজিৎ বিশ্বাসের মতো লোক প্রত্যয়ে লিখেছেন। এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। অপারেটর হিসাবে কাজ করার কারণেই আমি তাদের মতো বড় মাপের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। একজন অপারেটরের পত্রিকার মালিক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী সবার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ থাকে। অথচ অপারেটরদের সঠিক মূল্যায়ন করতে জানেন না অনেকেই।'

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থা টেলিফোন অপারেটর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সভায় উপস্থিত কয়েকজন/ ছবি সৌজন্য- মোহাম্মদ ইব্রাহিম

'রিপোর্টারকে তারকা বানিয়ে দেওয়ার সুযোগও হয় অপারেটরের যখন কি না বাইরে থেকে ফোন করে কেউ কোনো বিশেষ খবর জানায়। অপারেটর সাংবাদিকদের বিয়ের ব্যাপারেও সাহায্য করে থাকেন। পাত্র বা পাত্রীপক্ষ পিএবিএক্সে ফোন করে নির্দিষ্ট সাংবাদিকের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইতো। আমি নিজে এমন ফোন রিসিভ করেছি মানে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিয়েছি একাধিকবার। এছাড়া বিদেশ গমনে ইচ্ছুক রিপোর্টার সম্পর্কেও দূতাবাস থেকে জানতে চাওয়া হয় অপারেটরের কাছে। অথচ অনেকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে জানেন না। ছোট করে দেখেন।'

প্রত্যয়ে মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিজের একটি অভিজ্ঞতা লিখছেন- 'এক বার্তা সম্পাদক বললেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে লাগাও। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর- স্যার নাম্বারটা এনগেজ পাচ্ছি। বার্তা সম্পাদক উত্তর দিলেন, এনগেজ শুনতে চাইনি, লাইন চেয়েছি।'

আজকের কাগজে থাকতে একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল ইব্রাহিমের। প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ফোন করে বার্তা সম্পাদক আবু বকর চৌধুরীকে চাইলেন। কিন্তু বার্তা সম্পাদক ফোনটি ধরতে চাইলেন না কারণ ব্যক্তিটি যে প্রতিবেদন ছাপানোর অনুরোধ করবেন সেটি পত্রিকার নীতিবিরুদ্ধ। তাই ইব্রাহিম বললেন, বার্তা সম্পাদক এখন অনুপস্থিত। তখন সে ব্যক্তি সম্পাদকীয় বিভাগের সালাম সালেহউদ্দিনকে চাইলেন। সালাম সাহেবকে পেয়ে ওই ব্যক্তি আবার আবু বকর চৌধুরীর কথা জানতে চাইলেন। সালাম সাহেব সরল মনে নিজে থেকেই ফোন ট্রান্সফার করে দিলেন। পরে আবু বকর চৌধুরী পিএবিএক্সে এসে বকতে থাকেন ইব্রাহিমকে। সালাম সাহেব দ্রুত এগিয়ে এসে নিজের ঘাড়ে দোষ তুলে নিলে ইব্রাহিম রক্ষা পেয়েছিলেন।   

প্যানাসনিক টেলিফোন সিস্টেম নিয়ে আয়োজিত জাপান-বাংলাদেশ সম্মেলনে মোহাম্মদ ইব্রাহিম (সর্ববামে), ২০১০ সালে হোটেল পূর্বানীতে

আজকের কাগজে কাজের পরিবেশ ভালো ছিল, জানালেন ইব্রাহিম। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক ও প্রতিবেদকদের যে বৈঠক হতো তাতে ইব্রাহিমও উপস্থিত থাকার সুযোগ পেতেন। এর ফলে সারা সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে যার যা ক্ষোভ জমত সেগুলোর ব্যখ্যা দিতে পারতেন। ফলে ক্ষোভ মিটে গিয়ে আবার বন্ধুসুলভ পরিবেশ তৈরি হতো।

ইব্রাহিম আরেকটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতার কথা বললেন। সেটি আজকের কাগজের প্রকাশক-সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ সম্পর্কিত। শাহেদ আহমেদ একবার নিজে ইব্রাহিমের চেয়ারে এসে বসলেন। ফোন রিসিভ করতে থাকলেন এবং প্রতিবেদকদের চাহিদামতো সংযোগ স্থাপন করতে থাকলেন। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা তিনি ইব্রাহিমের কাজের অভিজ্ঞতা নিলেন। এতে তার পক্ষে বোঝা সম্ভব হলো, এমন একটা চেয়ারে বসলে কতটা ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হয়। ইব্রাহিম বললেন, 'এ ঘটনায় আমি এতটাই হতবাক হয়ে যাই যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি।'

তিনি আরো বললেন, 'প্রতিবেদককে অনেক অনাকাঙিক্ষত ফোন থেকেও বাঁচান অপারেটর। যেমন ধরুন রিপোর্টার একটা প্রতিবেদন নিয়ে খুব গলদঘর্ম। নিঃশ্বাস ফেলারও সময় পাচ্ছেন না। এমন সময় তার প্রেমিকা ফোন করলেন। সেক্ষেত্রে অপারেটর জেনে নিয়ে প্রেমিকাকে বলবেন, আপনাকে কিছুক্ষণ পরে তিনিই (প্রতিবেদক) ফোন করবেন।'

পিএবিএক্সে কর্মরত মোহাম্মদ ইব্রাহিম/ ছবি সৌজন্য- মো. ইব্রাহিম

ইব্রাহিম মনে করিয়ে দিলেন, 'পত্রিকায় একসময় পাত্র চাই, পাত্রী চাই খুব ছাপা হতো। এগুলোর কিছু কিছু হতো প্রতারণামূলক। পাঠক ফোন দিয়ে অপারেটরকে তখন দুষতেন, আপনারা এভাবে আমাদের বিপদে ফেলতে পারলেন? পাঠক মনে করত পত্রিকা থেকেই বুঝি এসব ছাপানো হয় আর দায়-দায়িত্ব সব পত্রিকার। তখন অপারেটরকেই বুঝিয়ে বলতে হতো, এসবের দায় আসলে বিজ্ঞাপনদাতাদের। বেশি বিপদ হতো শক্তি বর্ধক মহৌষধের ক্ষেত্রে। ওইসব বিজ্ঞাপনের বেশিরভাগই ছিল লোকঠকানো। পাঠকদের ফোনে তাই জেরবার হতেন অপারেটররা। শেষে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এগুলো ছাপানো বাদ দেয়।'

মফস্বল সাংবাদিকদের খবরও লিখে রাখার কাজ করেছেন ইব্রাহিম। এটা সে আমলের কথা যখন কম্পিউটারের ব্যবহার সর্বব্যাপী হয়নি। এখন যখন সোস্যাল মিডিয়ার প্রসার ঘটেছে, মোবাইল ফোন পকেটে পকেটে তখন পিএবিএক্সের কাজ কিছু কমেছে বলেই মনে করছেন ইব্রাহিম। তবে শীঘ্রই এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে বলেও মনে করছেন না।

কাজ পারার আনন্দও অনেক

একানব্বই সালে ২২০০ টাকা বেতনে সেলিনা পারভীন দিনকালে কাজ নেন। সকালের শিফট শুরু হতো সকাল ৮টায়, শেষ হতো দুপুর ২টায়। সকালের শিফটে ব্যস্ততা থাকত মূলত বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগে। বিকাল থেকে প্রতিবেদকদের চাপ বাড়ত। সব নম্বর তো সংগ্রহে থাকত না, প্রতিদিনই নতুন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পড়ত। তখন অন্য সংবাদপত্রের পিএবিএক্স থেকে বা টিঅ্যান্ডটি থেকে বা অন্য উৎস থেকে নম্বর যোগাড় করতে হতো। কোনো কোনো নম্বর পেতে চার-পাঁচটি ফোনও করতে হতো। ওদিকে সময় চলে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদক রাগ করতেন। শেষে অবশ্য নম্বর যোগাড় করা গেলে খুশি হয়ে যেতেন। ডেকে চা খাওয়াতেন।

১৯৯৩ সালে দৈনিক দিনকালের পিএবিএক্সে সেলিনা পারভীন/ ছবি সৌজন্য- সেলিনা পারভীন

সেলিনা বলছিলেন, 'প্রতিদিনই ডিউটি শেষে বিজ্ঞাপনে নয়তো সার্কুলেশনে অথবা রিপোর্টিংয়ে গিয়ে কিছু সময় গল্প করতাম, চা খেতাম। সে সময়গুলো ছিল আনন্দের। ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিলাম দিনকালে। মাঝখানে '৯৬ সাল থেকে ইন্ডিপেনডেন্টেও কাজ করতে থাকি। মানে একসঙ্গে দুটি চাকরি। তবে সেগুনবাগিচা (দিনকালের কার্যালয়) থেকে মতিঝিলের (মধুমিতা হলের কাছে ইন্ডিপেনডেন্টের কার্যালয়) দূরত্ব বেশি ছিল না বলে কষ্ট বেশি হতো না। দিনকাল থেকে যাই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়।'

'দিনকালের সম্পাদক সানাউল্লাহ নূরী ছিলেন অমায়িক লোক। সম্ভবত ২০০১ সালেরই শেষদিকে সম্পাদক স্যার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট, তাও আবার ভিন্নদেশের-কীভাবে যোগাযোগ করি? অনেক ভাবনা-চিন্তার পর পাকিস্তান দূতাবাসে ফোন করি। দূতাবাসের কর্মকর্তারা সম্পাদক স্যারকে চিনতেন। তারাই পরে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। আমার বুদ্ধিতে খুশি হয়েছিলেন সম্পাদক স্যার।'

'দিনে দুই থেকে আড়াইশ ফোন সামলাতে হতো। ডায়াল করতে করতে আমার নখ চিকন হয়ে গেছে। একটা পর্যায়ে অপারেটরদের মাসল মেমরি তৈরি হয়ে যায়, নম্বর চলে আসে আঙুলের ডগায়। নব্বইয়ের মাঝামাঝিতেও কিন্তু অনেক উপজেলায় এরিয়া কোড ছিল না। ট্রাংক কল করে প্রতিনিধিকে ধরতে হতো। এটা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ। সাংবাদিকরা অধৈর্য হয়ে উঠতেন, চোটপাট করতেন কিন্তু উপায় ছিল না। তবু পত্রিকায় কাজ করতে পছন্দ করি। সানাউল্লাহ নূরী, মাহবুবুল আলম, আতাউস সামাদ, আমানউল্লাহ কবীরের মতো বড় বড় সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত।'

'পত্রিকায় কাজ করি বলে লোকে সম্মান করে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী অনেকের সঙ্গে জানা-শোনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রখ্যাত নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আমার পিতার অসুখের সময় বলেছিলেন, যে কোনো প্রয়োজনে যেন তাকে জানাই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তেরও স্নেহ-মমতা পেয়েছি। সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গেও। আসলে একজন অপারেটরের যত যোগাযোগ তৈরি হয় তা প্রতিবেদকদেরও হয় না। সাংবাদিক যেমন সংবাদ খোঁজে অপারেটরকেও তেমন যোগাযোগের উপায় খুঁজতে হয় আর তাতে সফল হলে আনন্দ কম হয় না।'

 

Related Topics

টপ নিউজ

হাতেলেখা পত্রিকা / প্রিন্ট সংবাদপত্র / টেলিফোন অপারেটর

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ৩২ মিলিয়ন ডলারে টোটালগ্যাজ বাংলাদেশ অধিগ্রহণ করছে ওমেরা পেট্রোলিয়াম
  • কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা; দোহায় একাধিক বিস্ফোরণ
  • নিখোঁজ ইউরেনিয়াম মজুত নিয়ে বাড়ছে রহস্য, ভ্যান্স বলছেন পারমাণবিক স্থাপনার নিচে ‘চাপা পড়েছে’
  • দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘গুগল পে’
  • '১২ দিনের যুদ্ধ' শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল: ট্রাম্প
  • ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

Related News

  • ৩২০ বছর পর বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ!
  • দিনমজুরের হাতেলেখা পত্রিকা আশা ছড়াচ্ছে পটুয়াখালীতে

Most Read

1
অর্থনীতি

৩২ মিলিয়ন ডলারে টোটালগ্যাজ বাংলাদেশ অধিগ্রহণ করছে ওমেরা পেট্রোলিয়াম

2
আন্তর্জাতিক

কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা; দোহায় একাধিক বিস্ফোরণ

3
আন্তর্জাতিক

নিখোঁজ ইউরেনিয়াম মজুত নিয়ে বাড়ছে রহস্য, ভ্যান্স বলছেন পারমাণবিক স্থাপনার নিচে ‘চাপা পড়েছে’

4
অর্থনীতি

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘গুগল পে’

5
আন্তর্জাতিক

'১২ দিনের যুদ্ধ' শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল: ট্রাম্প

6
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net