Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ক্যাসেট, লংপ্লের গান যেখানে সুলভ...সুর বীণা আজও আছে

পাটুয়াটুলিতে নূরুল হক মার্কেট আজও আছে, তবে সরব নেই আর। যদি নব্বই সালের সঙ্গে তুলনা হয় তবে তো বলতে হয় বোবা হয়ে গেছে। ওই বছরই সন্তোষ কুমার ডেকে নিয়েছিলেন উজ্জ্বলকে। মো. উজ্জ্বল এসএসসি তখনো দেননি। গানের টানে ঘুরঘুর করতেন নূরুল হক মার্কেটে। ওখানটা তখন গানের আওয়াজে সরগরম দিনের পুরোটা তো বটেই রাতেরও অনেকটা।
ক্যাসেট, লংপ্লের গান যেখানে সুলভ...সুর বীণা আজও আছে

ফিচার

সালেহ শফিক
13 February, 2023, 02:15 pm
Last modified: 13 February, 2023, 03:47 pm

Related News

  • যেভাবে বিখ্যাত ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ রচিত হয়
  • “ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথীরে” … দেখা একবার, কথা বহুবার!
  • বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ব্রিটিশ পপ তারকা এড শিরানের গানে পুলিশের বাধা
  • গান গাইতে গাইতে মঞ্চে লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন
  • ১২ মাসে ১২টি গান রিলিজ রাফি আলমের

ক্যাসেট, লংপ্লের গান যেখানে সুলভ...সুর বীণা আজও আছে

পাটুয়াটুলিতে নূরুল হক মার্কেট আজও আছে, তবে সরব নেই আর। যদি নব্বই সালের সঙ্গে তুলনা হয় তবে তো বলতে হয় বোবা হয়ে গেছে। ওই বছরই সন্তোষ কুমার ডেকে নিয়েছিলেন উজ্জ্বলকে। মো. উজ্জ্বল এসএসসি তখনো দেননি। গানের টানে ঘুরঘুর করতেন নূরুল হক মার্কেটে। ওখানটা তখন গানের আওয়াজে সরগরম দিনের পুরোটা তো বটেই রাতেরও অনেকটা।
সালেহ শফিক
13 February, 2023, 02:15 pm
Last modified: 13 February, 2023, 03:47 pm

পাটুয়াটুলিতে নূরুল হক মার্কেট আজও আছে, তবে সরব নেই আর। যদি নব্বই সালের সঙ্গে তুলনা হয় তবে তো বলতে হয় বোবা হয়ে গেছে। ওই বছরই সন্তোষ কুমার ডেকে নিয়েছিলেন উজ্জ্বলকে। মো. উজ্জ্বল এসএসসি তখনো দেননি। গানের টানে ঘুরঘুর করতেন নূরুল হক মার্কেটে। ওখানটা তখন গানের আওয়াজে সরগরম দিনের পুরোটা তো বটেই রাতেরও অনেকটা।

নব্বইয়েরও অনেক অনেক দিন আগের কথা। সাতাত্তর-আটাত্তর সাল হবে। উজ্জ্বল সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। উজ্জ্বলরা থাকত ঢাকার নারিন্দায়। দাদাবাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে। ধান বা আলু তোলার মৌসুমে দাদাবাড়িতে বেড়াতে যেত উজ্জ্বলরা। তখন দাদাকে মাঠের এক ধারে মাটির রেকর্ড বাজাতে দেখত। এটা বাজাতে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি লাগত না। হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দম দিতে হতো কেবল। এর আওয়াজ জোরে হতো আর রেকর্ডিং কোয়ালিটি ছিল ভালো। ধানকাটার মজুরদের উৎসাহ দিতেই দাদা এ কৌশল নিয়েছিলেন। দাদার নিজেরও গান শোনার আগ্রহ ছিল অনেক। তিনি কে এল সায়গল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কাননবালা, মান্না দের ভক্ত ছিলেন। উজ্জ্বলের কাছে এখনো সেসব দৃশ্য জ্বলজ্বলে।

উজ্জ্বলদের পরিবারের কেউই গান গাইতে পারে না, চেষ্টাও করেনি। তবে গান শোনার শখ ছিল সবার। বাবা কাজ করতেন লায়ন সিনেমা হলে। সেই সুবাদে বিনা টিকেটে (পাশ নিয়ে) প্রথম শো দেখার সুযোগ মিলত বলে এলাকায় উজ্জ্বলদের বাড়তি খাতির ছিল। সে আমলে সিনেমা দেখা আর গান শোনাই ছিল বড় বিনোদন। গ্রামোফোন বেশি বাড়িতে ছিল না, বিশেষ করে স্বচ্ছল, সৌখিন ব্যক্তিরা গ্রামোফোন বাজিয়ে গান শুনতেন।

উজ্জ্বলদের পরিবার সচ্ছল না হলেও সৌখিন ছিল। তার এক জ্যাঠা (বাবার বড় ভাই) ছিলেন, উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনতেন। সবাই তাকে ডাকত মোতালেবের বাপ বলে। টিভিতে রাগ লহরী বলে উচ্চাঙ্গ সংগীতের যে অনুষ্ঠান হতো, তা শুরু হলেই বাড়ির লোকেরা চেঁচিয়ে বলত, মোতালেবের বাপরে ডাক। গান শোনা তখন একটা আয়োজন মতো ব্যাপার ছিল বলতে হয়।

নিজের দোকান সুর বীণা-তে মো. উজ্জ্বল/ ছবি: রাজীব ধর

তবে আশির দশকে দৃশ্য বদলায়। মাঝখানে ক্যাসেট ভরার জায়গার দুপাশে দুটি স্পিকার নিয়ে প্যানাসনিকের অডিও সেট (ডেকসেট বলে বেশি পরিচিত) পাওয়া যেতে থাকে। শুরু হয় ক্যাসেট যুগ। উজ্জ্বলের ভাষায় ডিসকো যুগ। ক্যাসেট আসার পরে গান শোনার সুযোগ বেড়ে যায়। উজ্জ্বলের মনে আছে তাদের নারিন্দার বাড়ির ছাদে চাচাতো-মামাতো ভাই চঞ্চল, আলম, নাসির ও অন্যরা মিলে গান শুনত। তার জন্য অবশ্য বড়দের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হতো। আর শুক্রবারেই অনুমতি মিলত বেশি। জুম্মার নামাজের পর তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত গান শুনত তারা একত্র হয়ে। সবাই চাঁদা দিয়ে ক্যাসেট কিনত।

টিফিনের পয়সা জমিয়েও ক্যাসেট কিনেছে উজ্জ্বল। ৬০ মিনিটের একটি ক্যাসেটের দাম তখনকার বাজারে ছিল ৩০ টাকা। উজ্জ্বল মনে করতে পারেন, ঈদের সময় সুযোগটা বাড়ত, বড়দের থেকে পাওয়া সালামির সব টাকা জমিয়ে ক্যাসেট কিনতেন। আজম খান, পিলু মমতাজ, ফিরোজ সাঁইদের ক্যাসেট পাওয়া যেত।

এভাবে চলতে চলতে একদিন উজ্জ্বল ক্যাসেট রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারটি জানতে পারেন এক মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে। আরো জানতে পারেন, রেকর্ডিংয়ে সুবিধা অনেক। ইচ্ছামতো গান বাছাই করা যায়, একই ক্যাসেটে হিন্দি, বাংলা, গজল, আধুনিক, মানে সব ধরনের গান ধারণের সুযোগ মিলে। রেকর্ডিংয়ের দোকানে খাতা থাকে। খাতা দেখে দেখে বেছে নাও কোন কোন গান তুমি রেকর্ড করাবে। আর এ কাজের উত্তম জায়গা পাটুয়াটুলি।

ছবি: রাজীব ধর

উজ্জ্বল প্রথম রেকর্ড করিয়েছিলেন হিন্দি সিনেমার গান। তখন জমজমাট খুব নূরুল হক মার্কেট, অনেক ভিড়। কোনো কোনো সময় ভিড় (সিরিয়াল) এত বেশি হতো যে একটা ক্যাসেট রেকর্ড করাতে ৪-৫ দিন লেগে যেত। ৬০ মিনিটের ক্যাসেট রেকর্ড করাতে লাগত ২০ টাকা আর ৯০ মিনিটের জন্য ৩০ টাকা। সাধারণত ৬০ মিনিটের একটা ক্যাসেটে বাংলা গান ধরে ১৬টা আর হিন্দি গান ১০টা, কারণ হিন্দি গান দৈর্ঘ্যে বড় হয়।

সেই যে যাওয়া-আসা শুরু হলো উজ্জ্বলের, পড়াশোনা মাথায় উঠল। পাটুয়াটুলির সঙ্গে বাঁধা পড়ে গেলেন উজ্জ্বল। আর ঘোরাঘুরি করতে করতেই সন্তোষকুমারের নজরে পড়েছিলেন, তিনি ডেকে বলেছিলেন, কাজ করতে চাইলে কাল থেকে আইসা পড়ো।

উজ্জ্বল তো এমনটাই চাইছিলেন। বাবার সঙ্গে অবশ্য ঝগড়া হলো, কিন্তু উজ্জ্বলের মন যে বাঁধা পড়ে গেছে, তিনি পাটুয়াটুলি ছাড়তে পারছিলেন না। সন্তোষ কুমারকে ওস্তাদ মেনে  কাজ করতে থাকলেন। আরডি বর্মন, বাপ্পী লাহিড়িরা মাথায় ঘুরঘুর করত সারাক্ষণ।

ঈদুল ফিতর এগিয়ে এলে দেখার মতো ব্যাপার হতো। লাইন দিয়ে লোক দাঁড়াত, সে লাইন মার্কেট ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ত। হাতে হাতে থাকত স্লিপ বা রসিদ। বিশিষ্ট লোকদেরও দেখা যেত সে লাইনে। গীতিকার, সুরকার বা কণ্ঠশিল্পীদেরও তখন খাতির করার সময় পাওয়া যেত না। রেকর্ডিংয়ের কর্মীদের ব্যস্ততা এমন পর্যায়ে ঠেকত যে তারা ইফতার করার সময় পেত না। আর চাঁদ রাতের আগের ৩-৪ দিন তো সারা রাত কাজ করতে হতো।

প্রযুক্তির যতই ধাক্কা আসে, উজ্জ্বল সাহস হারান না। তিনি ভাবেন, যতই গান অনলাইনে পাওয়া যাক না কেন, কোয়ালিটি তো ক্যাসেটের মতো হবে না/ ছবি: রাজীব ধর

১০ বছর ছিলেন উজ্জ্বল পাটুয়াটুলিতে। নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে কমপ্যাক্ট ডিস্কের (সিডি) চল শুরু হলো। তবে সিডি সেট সহজলভ্য না হওয়ায় সিডির বাজার পেতে সময় লেগেছে। কিছুকাল পরে চায়না একটা ডিভিডি প্লেয়ার বাজারে এলো যার দাম ৭০০০ টাকা ছিল। এ প্লেয়ার আসার পরে সিডির ব্যবহার শুরু হলো ব্যাপকভাবে। এছাড়া সাউন্ডটেক, সঙ্গীতা নিজেরাই সিডির উৎপাদনে গেল। তবুও কিন্তু ক্যাসেটের বাজার ২০০০ সাল পর্যন্ত ভালোভাবেই বহাল ছিল।

২০০০ সালে উজ্জ্বল চলে এলেন এলিফ্যান্ট রোডে। ইস্টার্ন মল্লিকার দিকের রাস্তায় ছিল সুরবিতান নামের একটা রেকর্ডিং সেন্টার। সেখানে কাজ করতে থাকলেন উজ্জ্বল। ২০১০ পর্যন্ত ১০ বছর ছিলেন সুরবিতানেই। দিন যায় আর প্রযুক্তির দাপট বাড়ে। উজ্জ্বল অবাক হয়ে দেখতে থাকেন, আগে একটি নতুন প্রযুক্তি বিশ-ত্রিশ বছর ধরে শান-শওকত ধরে রাখতে পারত, আর এখন সিডি-ডিভিডির মতো প্রভাবশালী প্রযুক্তিও ১০ বছর গদীনসীন থাকতে পারে না।

এর মধ্যেই সাহস করে উজ্জ্বল নিজের একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে ফেললেন। নাম দিলেন সুর বীণা। এলিফ্যান্ট রোডের কফি হাউজ গলিতে এই সুর বীণা। এতদিন ধরে জমানো সব ক্যাসেট—আধুনিক গানের, সিনেমার গানের, লোক গানের, বাউল গানের, রবীন্দ্র ও নজরুল গানের, পল্লীগীতির, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির—সব মিলিয়ে হাজার দশেক ক্যাসেট এনে জড়ো করলেন সুর বীণায়। সে সঙ্গে গানের ক্যাটালগ প্রায় ত্রিশটি। ক্যাসেট ছাড়াও এলপিরও বড় একটা সংগ্রহ জড়ো করলেন।

ততদিনে মানে ২০১২ সালের দিকে অডিও-ভিডিও জগতে অনলাইন এসে হাজির, যদিও পুরোটা দখল করেনি। উজ্জ্বল হুঁশিয়ার হয়ে খেয়াল রাখেন, প্রযুক্তি কতদূর এগোয়, সেসঙ্গে নিজের টিকে থাকারও কৌশল খোঁজেন।

২০১৫ সালের দিকে উজ্জ্বল দেখলেন অনলাইন রাজত্ব বিস্তার করে চলেছে হু হু করে। অডিও, ভিডিও সবই পাওয়া যায় অনলাইনে। হেমন্ত শুনতে ইচ্ছে করে, কাননবালাকে দেখতে মন চায়—কেবল লিখে সার্চ দাও, চোখের পলকে এসে হাজির। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাসেট প্রকাশ বন্ধ করে দিল। মাঝখানে কিছুকাল অডিও বাজার চাঙা রেখেছিল ব্যান্ডসংগীত, ক্রমে তা-ও মিলিয়ে যেতে থাকল।

ত্রিশটির বেশি রেজিস্টার্ড খাতা আছে সুর বীণায়/ ছবি: রাজীব ধর

এর মধ্যেও তাহলে বাঁচার উপায় কী? মোহাম্মদপুরের এক রেকর্ডিং সেন্টার থেকে খবর এলো, ১০ হাজার ক্যাসেট দিয়ে দিতে চায়, কারণ সেন্টার বন্ধ করে দেবে। এখন ক্যাসেটগুলো রাখাটাই বড় বোঝা। উজ্জ্বলকে তারা সব মাগনাই দিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু উজ্জ্বল বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এলেন। সে হিসাবে প্রতি ক্যাসেটের দাম পড়ল ১ টাকা। অথচ এগুলোর প্রায় সবই টিডিকে নয়তো ম্যাক্সেলের ক্যাসেট। নব্বইয়ের দশকে একটা টিডিকে ক্যাসেট মানে হীরা, পান্নার মতো একেকটা দামি রত্ন।

প্রযুক্তির যতই ধাক্কা আসে, উজ্জ্বল সাহস হারান না। তিনি ভাবেন, যতই গান অনলাইনে পাওয়া যাক না কেন, কোয়ালিটি তো ক্যাসেটের মতো হবে না। তাই কিছু মানুষ তো সবসময়ই থাকবে, যারা কোয়ালিটি খুঁজবে। আর তাদের জন্যই প্রতিদিন সকাল ১০টায় দোকান খুলে বসেন উজ্জ্বল।

এর মধ্যে এমন কিছু মানুষের দেখা পেয়েছেন, যারা ক্যাসেটেই গান শুনতে পছন্দ করেন। একজন যেমন মো. শহীদুল্লাহ। দেড়শ অডিও ক্যাসেট আছে তার। প্রতি মাসেই কিছু না কিছু রেকর্ড করান। শহীদুল্লাহ বলছিলেন, 'ক্যাসেটে গান শুনেই আনন্দ পাই বেশি, নব্বই মিনিটের একটা ক্যাসেটে সব নিজের পছন্দের গান থাকে, ইউটিউব তো আমার পছন্দের কথা জানে না, সেভাবে গান সাজায়ও না, আমি ক্যাসেট চালিয়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে গান শুনি, সোনালি দিনের সুরেলা সব গান একটার পর একটা বাজতে থাকে।'

ক্যাসেট থেকে ক্যাসেট অথবা ক্যাসেট থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে গান বা অডিও রেকর্ড করার জন্য উজ্জ্বল ১০০ টাকা নেন। এছাড়া  কিছু মানুষ শখ করেও ১০-২০টা ক্যাসেট ঘরে নিয়ে সংগ্রহে রাখেন। তারা ১০ টাকার জিনিস ৫০ টাকায়ও কেনেন। এখন উজ্জ্বলকে ক্যাসেট জোগান দেন মূলত ভাঙারিওয়ালারা।

ছবি: রাজীব ধর

কতরকমের গানের ক্যাসেটই যে বের হতো তার নমুনা দেখলাম সুর বীণার তাকগুলোয়। সেগুলোর নাম এমন—কবর হলো রুহের হোল্ডিং নাম্বার, অধরা মাধুরী, আসল মহাজন, পাগল ১ হৃদয়, গোপন প্রেম, রুনা টপ টেন, আগুন লেগেছে বাজারে, ছোটদের নাচের গান, মনহারামি, পাগলা ঘণ্টি, বসন্তের ফুল, সে যেন চিরসুখী হয় ইত্যাদি।

ত্রিশটির বেশি রেজিস্টার্ড খাতা আছে সুর বীণায়। একটি খাতার ওপর লেখা মহিলা কণ্ঠ। সেটি খুলে দেখলাম ২৪ জন শিল্পীর নাম লেখা। তাদের মধ্যে প্রথমজন সাবিনা ইয়াসমীন, তার গানের প্রথম লাইন লেখা পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩৭টি। এরপর আছে রুনা লায়লার নাম, তার জন্য বরাদ্দ করতে হয়েছে ৩৫ পৃষ্ঠা। এরপর ফেরদৌসি রহমান, শাহনাজ রহমতউল্লাহ হয়ে রুলিয়া রহমান, উমা খান এবং মিনা বড়ুয়াও আছেন।

ছবি: রাজীব ধর

সুর বীণা (৩০৭ এলিফ্যান্ট রোড) দোকানটি নিতান্তই সাধারণ। তবে এতে যার চোখ পড়ে যায় তার চোখ আটকে যায়। কারণ এমন দোকান ঢাকা শহরে আর নেই বললেই চলে। অনেকে দূর থেকে দেখে বুকের কষ্ট বুকে চেপে চলে যান।

দিন কয় আগে একজন অবশ্য এগিয়ে এসে উজ্জ্বলকে বলেছিলেন, আপনার ক্যাসেটগুলো একটু সামনে থেকে দেখতে পারি? তারপর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের একটি ক্যাসেট হাতে নিয়ে বুকে চেপে ধরে রেখেছিলেন কিছুক্ষণ। কোনো কোনো বিকালে শিল্পী খুরশীদ আলম সুর বীণায় এসে বসেন। বলেন, উজ্জ্বল চা খাওয়াও। চুপচাপ চা খাওয়া সারা হলে নীরবতা ভেঙে ফিরে যান পুরোনো সব সোনালি দিনে। কত কত মধুর স্মৃতি তৈরি হয়েছিল সে দিনগুলোয়। সেগুলো সম্বল করেই বেঁচে থাকা এখন।

এখন উজ্জ্বল একটু একটু সাহস হারাতে শুরু করেছেন। কারণ ইনকাম কমছে দিনে দিনে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই ক্যাসেট বলে যে কিছু ছিল, তা জানেও না। বলছিলেন, 'এখন দিনে যা কামাই হয় তা দিয়ে যাওয়া-আসার রিকশা ভাড়া হয়। অন্য কাজ জানিও না যে তাতে চলে যাব। আর কাজটাকে তো আমি ভালোবাসি। ভালোবাসার জিনিস ছাড়তে চায় কোন মানুষ? এখন কিছু অন্যরকম কাজ পাই, যেমন ২০ বছর আগে ক্যাসেটে রেকর্ড করা শিশুসন্তানের আধো আধো বুলি অথবা প্রেমিকাকে রেকর্ড করে পাঠানো চিঠি অথবা বন্ধুদের একসঙ্গে (রিইউনিয়ন) হওয়া একটা সন্ধ্যার আড্ডা (কথাবার্তা)। এগুলো ক্যাসেট থেকে ডিজিটাল ট্রান্সফার করে মেইল করে পাঠাই, কেউবা পেন ড্রাইভে নিয়ে যায়, সিডি করেও নিয়ে যায়।'

সুর বীণা (৩০৭ এলিফ্যান্ট রোড) দোকানটি নিতান্তই সাধারণ। তবে এতে যার চোখ পড়ে যায় তার চোখ আটকে যায়। কারণ এমন দোকান ঢাকা শহরে আর নেই বললেই চলে/ ছবি: রাজীব ধর

উজ্জ্বলের দুই ছেলে। শশুরবাড়ির দিক থেকে ভালো পরিমাণে আর্থিক সহযোগিতা পান উজ্জ্বল। তাতে সংসারের খরচ চলে যায় আর সুর বীণা থেকে পকেট খরচ জোগান হয়। এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন। তবে আর কতদিন চলবে, তা জানা নেই উজ্জ্বলের। তার জানামতে ঢাকায় আর একটিমাত্র রেকর্ডিং সেন্টার টিকে আছে—সেটি পাটুয়াটুলিতে, উজ্জ্বলের ওস্তাদ সন্তোষ কুমারের। গুরু আর শিষ্য অজান্তেই মিলে গেছেন আবার, চাইছেন মৃতপ্রায় শিল্পটিকে কোনোভাবে যদি বাঁচিয়ে রাখা যায়।

Related Topics

টপ নিউজ

সুরবীণা / গান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বয়স ২১ হলেই মাত্র ৪ শতাংশ সুদে স্টার্ট-আপ ঋণের যোগ্য হবেন বাংলাদেশিরা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
  • গতি কমাতে ৯৯৯-এ যাত্রীর ফোন, আটকের পর জানা গেল বাসটি চুরির!
  • অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ‘ফিকশন’ পাওয়া গেছে: গভর্নর মনসুর
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ২০২৩ সালের হিসাব সংশোধন, মুনাফার বদলে দেখা গেল বড় ক্ষতি
  • যাত্রাবাড়ী নৃশংসতা: ৫ আগস্ট পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এল বিবিসির অনুসন্ধানে
  • বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের চাপে নয়, অর্থ খাতে সংস্কার হচ্ছে সরকারের নিজ উদ্যোগে: অর্থ উপদেষ্টা

Related News

  • যেভাবে বিখ্যাত ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ রচিত হয়
  • “ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথীরে” … দেখা একবার, কথা বহুবার!
  • বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ব্রিটিশ পপ তারকা এড শিরানের গানে পুলিশের বাধা
  • গান গাইতে গাইতে মঞ্চে লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন
  • ১২ মাসে ১২টি গান রিলিজ রাফি আলমের

Most Read

1
অর্থনীতি

বয়স ২১ হলেই মাত্র ৪ শতাংশ সুদে স্টার্ট-আপ ঋণের যোগ্য হবেন বাংলাদেশিরা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

2
বাংলাদেশ

গতি কমাতে ৯৯৯-এ যাত্রীর ফোন, আটকের পর জানা গেল বাসটি চুরির!

3
অর্থনীতি

অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ‘ফিকশন’ পাওয়া গেছে: গভর্নর মনসুর

4
অর্থনীতি

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ২০২৩ সালের হিসাব সংশোধন, মুনাফার বদলে দেখা গেল বড় ক্ষতি

5
বাংলাদেশ

যাত্রাবাড়ী নৃশংসতা: ৫ আগস্ট পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এল বিবিসির অনুসন্ধানে

6
অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের চাপে নয়, অর্থ খাতে সংস্কার হচ্ছে সরকারের নিজ উদ্যোগে: অর্থ উপদেষ্টা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab