Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
May 30, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, MAY 30, 2025
‘হাই অ্যান্ড লো’: আকিরা কুরোসাওয়ার রাজনৈতিক চলচ্চিত্র?

ফিচার

ফারাহ জাহান শুচি
11 October, 2021, 09:50 pm
Last modified: 11 October, 2021, 09:56 pm

Related News

  • আজ তাঁর জন্মদিন: বিশ্ব সিনেমার অতর আকিরা কুরোসাওয়া
  • ফিরে দেখা ২০২১: কেমন ছিল এ-বছরের চলচ্চিত্র?
  • আব্বাস কিয়ারোস্তামির কোকার: কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক চালচিত্র

‘হাই অ্যান্ড লো’: আকিরা কুরোসাওয়ার রাজনৈতিক চলচ্চিত্র?

ফারাহ জাহান শুচি
11 October, 2021, 09:50 pm
Last modified: 11 October, 2021, 09:56 pm
ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

বরেণ্য জাপানি চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া (১৯১০-১৯৯৮) সমধিক পরিচিত 'সেভেন সামুরাই', 'রাশোমন', 'র‍্যান', 'দ্য হিডেন ফোরট্রেস', 'থ্রোন অভ ব্লাড'-র মতো কালজয়ী কিছু সিনেমার জন্য। অধিকাংশ চলচ্চিত্রপ্রেমী তাঁকে চেনেন 'দ্য সামুরাই ম্যান' হিসেবে। তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন জিদাইগেকি বা ইতিহাসনির্ভর ছবিতে। সেখানে উঠে এসেছে সপ্তদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে টিকে থাকা জাপানের তোকুগাওয়া শাসনামলের চিত্র। এসব চলচ্চিত্রে প্রাধান্য পেয়েছে সামুরাই যোদ্ধাদের জীবনাচরণ, টানাপোড়েনের গল্প, তাদের তরবারির হানাহানি।

'হাই অ্যান্ড লো', 'ইকিরু', 'দ্য ব্যাড স্লিপ ওয়েল', 'স্ট্রে ডগ', 'ড্রাংকেন এঞ্জেল'-র মতো আধুনিক পোশাকের চলচ্চিত্রগুলো সমসাময়িক সমাজের চিত্র তুলে ধরে। আজকের আয়োজন তারই একটি নিয়ে।

পরপর দু'টো সামুরাই ক্লাসিক 'ইয়োজিম্বো' ও 'সানজুরো' নির্মাণের পর, কুরোসাওয়া সমসাময়িক চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে যান। ১৯৬৩ সালে তৈরি করেন সাদাকালো ক্রাইম ড্রামা থ্রিলার 'হাই অ্যান্ড লো'। ব্যবসায়িক সাফল্য এবং সমালোচকদের প্রশংসা –দুই'ই পেয়েছিল ছবিটি। সেবছর জাপানের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ছিল এটি।

সামুরাই চলচ্চিত্রের ভিড়ে কখনো কখনো ঢাকা পড়ে যায় আকিরা কুরোসাওয়ার অন্য ভালো ছবি, ছবি: ব্রিটানিকা

এক শিল্পপতি ব্যবসায়ী কিংগো গন্দোর (তোশিরো মিফুনে) বহুদিনের বাসনা, তিনি যে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন, তা কিনে ফেলবেন। নিজের বাড়ি পর্যন্ত বন্ধক রেখে টাকা যোগাড় করে রেখেছেন। কিন্তু এমন সময় তার কাছে ফোনকল আসে যে তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ফোনের ওপাশ থেকে অপহরণকারী (সুতোমো ইয়ামাজাকি) মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু শিল্পপতির ছেলে ভেবে ভুল করে অপহরণকারী মূলত গন্দোর গাড়িচালক আওকির (ইয়ুতাকা সাদা) ছেলেকে অপহরণ করেছে। বাড়িতে দ্রুতই গোয়েন্দা পুলিশ সাহায্য করার জন্য আসে। নিজের সন্তানের জন্য যে করেই হোক, টাকা না-হয় যোগাড় করতেনই। কিন্তু আরেকজনের সন্তানের জন্য তিনি কি তার এতদিনের সঞ্চিত টাকাপয়সা-স্বপ্ন সব শেষ করে দেবেন? আর অপহরণকারীর কি স্রেফ টাকারই প্রয়োজন? নাকি গন্দোর সাথে তার অন্য কোনো বিরোধ আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে দেখে নিতে পারেন মুভিটি।
 
এড ম্যাকবেইনের লেখা গোয়েন্দা উপন্যাস 'কিংস র‍্যানসম'-কে বেছে নিয়েছিলেন কুরোসাওয়া। দুর্বল মানের পটবয়লার এ রহস্য গল্প থেকেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন শক্তিশালী এক ক্রাইম ড্রামা। চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে সম্পদের বৈষম্য - এমন একটি থিম যা একালেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। মুক্তির প্রায় ছয় দশক অতিবাহিত হওয়ার পরও এটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। মুভিটি স্রেফ একজন লোকের গল্প হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ঘুণে খাওয়া পুরো সমাজের দৃশ্য ধারণ করছে। তাই থ্রিলার থেকে এটি একসময় পরিণত হয় একটি সামাজিক সমস্যার আখ্যানে।

অপহরণকারীর সাথে গন্দোর ফোনালাপের সময় অসাধারণ একটি ব্লকিং দৃশ্য, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

পঞ্চাশের দশকের একেবারে শেষ ভাগ। শিল্পায়নের প্রসার ঘটছে এরকম একটি দৃশ্য দিয়েই চলচ্চিত্রটি শুরু হয়। আবহসঙ্গীত হিসেবে বাজছে ভয়ানক এক রহস্যাবৃত সুর।

প্রথমেই দেখা যায় গন্দোর বাড়িতে অন্য সহকর্মীদের সাথে বাক-বিতণ্ডা চলছে তার। জুতো নির্মাণকারী যে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩০ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন, তাতে অল্পসময়ে লাভের জন্য কোনোভাবেই জুতোর মানের সাথে আপোষ করবেন না তিনি। প্রথম এ দৃশ্য থেকেই বোঝা যায়, গন্দো তার কাজের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। পণ্যের গুণগত মানের দিক থেকে এতটুকু ছাড় দিতে তিনি রাজি নন। আর দর্শকও তাই প্রথম দৃশ্য থেকেই গন্দোর প্রতি হয়ে ওঠে সহানুভূতিশীল। পর্দায় পরে তাকে উভয়সঙ্কটে ভুগতে দেখে, দর্শকও সে যাত্রায় হয়ে ওঠে তার সারথি।

পাশাপাশি গন্দোর ডানহাত হিসেবে কাজ করা কাওয়ানিশিকে (তাতসুয়া মিহাশি) দেখা যায় মেরুদণ্ডহীন একটি চরিত্র হিসেবে। সে নৈতিকভাবে দুর্বল, ক্ষমতালিপ্সু এবং স্বার্থপর চরিত্রের; গন্দোকে ডিঙিয়ে উপরে উঠে যেতে একবারের জন্যও দ্বিধা করবে না।

স্টিভেন স্পিলবার্গকে সিনেমায় ব্লকিংয়ের 'মডার্ন মাস্টার' বলে অভিহিত করা হলেও, আলোচ্য সিনেমায় দেখতে পাওয়া যায় কিছু অভিনব ব্লকিং দৃশ্য। অপরাধী তাকেউচির সাথে যখন গন্দোর ফোনে কথা হয়, সে দৃশ্যটির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। প্রত্যেকের চাহনি এবং অবস্থান দিয়ে কুরোসাওয়া এমন এক সিকোয়েন্সের সৃষ্টি করেছেন, যা দেখে দর্শক ভিজ্যুয়ালিই বুঝে নিতে পারেন এখানে কার কী উদ্দেশ্য।

ঐতিহ্যবাহী ছিমছাম জাপানি আসবাবের বদলে গন্দোর বাড়িতে পশ্চিমা ছাপই বেশি, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

কুরোসাওয়া ছিলেন মার্ক্সবাদী। কমবেশি তাঁর সব চলচ্চিত্রেই ঘুরে-ফিরে প্রতিফলিত হয়েছে শ্রেণি বিভাজনের বিষয়টি। তাঁর সবচেয়ে রাজনৈতিক চলচ্চিত্র বলা যায় এটিকে। 'হাই অ্যান্ড লো' তাঁর চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দর্শকের কাছে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য পেশ করে। আধুনিক সময়ের উপর নির্মিত তাই পারিপার্শ্বিকতার সাথে খুব সহজেই জুড়ে দেওয়া যায়৷ উঁচু-নিচুতলার প্রভেদকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন গরমের উত্তাপ ব্যবহারের মাধ্যমে। গন্দোর বাড়ি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেসময় জাপানে কেবল ধনিক শ্রেণির নাগালে ছিল এ সুবিধা; একেবারেই নতুন। তুলনামূলক চিত্রে ছবির দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় সবার ঘর্মাক্ত শরীর; গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। আপাতদৃষ্টিতে একে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও, কুরোসাওয়া এই বৈপরীত্যের মাধ্যমেও ধনী-দরিদ্রের ভিন্ন জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন। 

২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ধকল পেরিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে জাপান। আমেরিকার আদলে পুনর্গঠিত হয়েছে। গন্দো অনেকদিক থেকেই সেই ওয়েস্টার্নাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পাশাপাশি সব আধুনিক আসবাবপত্রে তা সজ্জিত, পেন্ডুলামের একটি ঘড়িও সেখানে দেখা যায়। শুধু গন্দোর স্ত্রী রেইকো (কিয়োকো কাগাওয়া)-কে ঐতিহ্যবাহী জাপানি পোশাকে দেখতে পাওয়া যায়।

হাল আমলে বং জুন-হোর জনপ্রিয় সিনেমা 'প্যারাসাইট' এর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় চলচ্চিত্রটির। বংয়ের সবচেয়ে প্রিয় ফিল্মের মধ্যে 'হাই অ্যান্ড লো' একটি। উচ্চতা দিয়েও যে অর্থনৈতিক অসমতা এবং সামাজিক অবস্থানের চিত্র আঁকা যায়, কুরোসাওয়া ও বং তা করে দেখিয়েছেন। দু'টো ছবির মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে শ্রেণি বিভাজন অন্যতম। 'প্যারাসাইট'-এও দেখা যায় ধনী পরিবার পার্কদের বসতি গন্দোর মতো পাহাড়ের উঁচুতে। অন্যদিকে অপরাধী তাকেউচি আর দরিদ্র কিম পরিবার থাকে নিচুতে; যেখানে একদিন বৃষ্টি হলেই তাদের ঘর ভেসে যায়।

ইয়োকোহামা নগরীতে পাহাড়ের উপরে থাকা গন্দোর সেই প্রাসাদোপম বাড়ি, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

এখানে ধনী আক্ষরিক অর্থেই সমাজের উঁচুতলায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে নিম্নবিত্তের বসতি জীর্ণশীর্ণ চায়নাটাউনে। অপরাধী নিজেই বলে ওঠে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের কাছে গন্দোর অট্টালিকাটির অস্তিত্বও নিষ্ঠুর এক রসিকতার মতো। তাই নিচুতলার প্রান্তিক মানুষের এ বাড়ির দিকে তাকিয়ে বীতশ্রদ্ধ, এমনকি ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠাও খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ঐতিহ্য এবং শিষ্টাচারের জন্য পরিচিত জাপানের অপরাধ জগতের চিত্রও দেখিয়েছেন কুরোসাওয়া। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা জাপানের মাদক ব্যবসাকে বহির্বিশ্বের কাছে এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেন তিনি। এদিক থেকেও তিনি তাঁর সমসাময়িকদের চেয়ে অনেক আগানো। কেবল '৭০ এর দশকে মার্কিন মূলধারার সিনেমায় যা আসতে শুরু করেছে, তা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আরো আগেই। 
  
চমৎকার ব্যাপারটি হলো, ১৪৩ মিনিটের এ ফিল্মটির কোথাও কোনো ছন্দপতন ঘটতে দেখা যায় না। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তা নিজ গতিতে এগিয়ে চলেছে। কখনো দ্রুত এগিয়ে দর্শকের মাঝে সৃষ্টি করে উত্তেজনা; কখনো বা ধীর লয়ে মরিয়া করে দর্শকমনে জাগায় ভয়।

দু'টো স্পষ্ট ভাগে চলচ্চিত্রটি বিভক্ত। প্রথমভাগে প্রাধান্য পেয়েছে অপরাধটি এবং দ্বিতীয় ভাগে উঠে এসেছে তার ফলাফল। আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার স্ট্যানলি কুব্রিকের 'ফুল মেটাল জ্যাকেট'-এ গল্পের এরকম স্পষ্ট গাঠনিক বিভক্তির দেখা মিলেছিল।

হেরোইনের নেশায় মত্ত অন্ধকার জগতের এক ঝলক, ছবি: আইএমডিবি

এখানে প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই একটিমাত্র সেটে শ্যুট করা হয়েছে; কিংগো গন্দোর বাড়িতে। দীর্ঘসময় একটি ঘরে সীমাবদ্ধ সিনেমাটোগ্রাফি দর্শকের মাঝেও তৈরি করে এক ধরনের ক্লস্ট্রোফোবিয়া। গন্দো, তার স্ত্রী কিংবা গোয়েন্দা পুলিশরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, তাতে যোগ দেন দর্শক নিজেও। পাশাপাশি কুরোসাওয়া দর্শককেও যেন প্রশ্ন করছেন, 'গন্দোর অবস্থানে নিজেকে রেখে একবার ভাবুন তো, আপনি কি অপহরণকারীর চাওয়া মুক্তিপণটা দিতে রাজি হবেন?'। এভাবে চলচ্চিত্রটি পরিণত হয়েছে একটি আয়নার মতো যা দর্শকের সাথে তার সংযুক্তি আরো বাড়িয়ে দেয়।

জাপানি ভাষায় চলচ্চিত্রটির নাম 'তেনগোকু তো জিগোকু'; আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় 'স্বর্গ ও নরক'। কিন্তু স্রেফ তাতে সীমাবদ্ধ না রেখে, তিনি দেখিয়েছেন এমন কিছু সার্বজনীন দ্বৈততা। ধনী বনাম দরিদ্র, অট্টালিকা বনাম বস্তি, আশা বনাম নিরাশা এবং ভালো বনাম খারাপের দ্বন্দ্ব। এমনকি ছবির দু'টো অংশও ভঙ্গিমায় একে অপরের চেয়ে অনেক ভিন্ন ধারার। 

প্রথমার্ধটি ধীরগতির অ্যাকশন সম্বলিত। এখানে কুরোসাওয়া ব্যবহার করেছেন বেশ কয়েকটি লং টেক। কিছু কিছু টেক ১০ মিনিট বা তারও বেশি। ক্যামেরা একেবারে স্থির, শ্যুট করেছেন ট্রাইপডে। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হচ্ছে এমনটা বোঝাতে ব্যবহার করেছেন ওয়াইপ। ক্যামেরার কাজটি এত অনন্য এবং মৌলিক ধাঁচের যে এটাকে নিরীক্ষাধর্মী কৌশল বললেও ভুল হবে না। ভিন্ন ধারার সিনেমাটোগ্রাফির জন্য এতে ব্যবহার করেছিলেন জাপানের ট্রেডমার্ক তোহোস্কোপ যেখানে আস্পেক্ট রেশিও ছিল ২.৩৫:১। আর এ কারণেই ফিল্মটির ফ্রেম অন্য দশটা ফিল্মের চেয়ে বেশি ছড়ানো। চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছিলেন তাকাও সাইতো ও আসাকাজু নাকাই।

বুলেট ট্রেনের সেই বিখ্যাত সিকোয়েন্সে তোশিরো মিফুনে, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

যা-ই হোক, প্রথম এ পর্বকে দ্বিতীয়টির সাথে কুরোসাওয়া যুক্ত করেছেন ট্রেনের অসাধারণ চার মিনিটের একটি সিকোয়েন্স দিয়ে। এ সিনেমার সকল উপাদানকে একাট্টা করে সেই দৃশ্যে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনার কাজটা কুরোসাওয়া প্রতিটি চলচ্চিত্রে নিজেই করতেন। এখানেও চলন্ত ট্রেনে সত্যিকার যাত্রীদের রেখে তিনি সম্পাদনায় এমন এক মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন যা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি বিশাল অর্জন।

ধ্রুপদী জাপানি চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলীর মতো প্রথমার্ধ। তবে কুরোসাওয়ার তা ছিল বড্ড অপছন্দের। দ্বিতীয়ার্ধে সেই ভোল পাল্টে তিনি ফিরে আসেন তাঁর চিরচেনা ঢঙে। সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে সমাজের বিশৃঙ্খল দিক, অপরাধীকে খুঁজে বের করার মিশন হয়ে ওঠেছে অত্যন্ত সক্রিয়। পর্বটি হয়ে ওঠেছে সচেতন এবং মনোযোগী। গোয়েন্দা পুলিশ কীভাবে তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অপরাধীকে ধরার চেষ্টা করে, সেই কার্যক্রমকে এখানে বিস্তৃতভাবে দেখানো হয়েছে। প্রথমভাগের থ্রিলার থেকে ক্রমেই তা পরিণত হয়েছে পুলিশ ড্রামায়।

মাল্টি ক্যামেরা সেট-আপ ব্যবহার করতেন কুরোসাওয়া। অভিনয় শিল্পীরা অধিকাংশ সময়েই জানতেন না ঠিক কোন ক্যামেরা তাঁদের ধারণ করছে। এজন্যই অভিনয় হয়ে উঠত আরো প্রাণবন্ত এবং সহজাত। 'হাই অ্যান্ড লো'-এ সামুরাই ফিল্মের মতো জটিল ক্যামেরা কৌশল নেই। এটা সত্যি। কিন্তু কুরোসাওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ও উদ্ভাবনী ক্যামেরার কাজ দেখা যায় এখানে। 

মুভিটির প্রথম পর্ব ব্যাখ্যা করেছে সমাজের 'হাই' বা উচ্চবিত্তের দৃষ্টিভঙ্গি আর দ্বিতীয় পর্ব তুলে ধরেছে 'লো' বা নিম্নবিত্তের দৃষ্টিকোণ।

অপরাধী তাকেউচিকে খুঁজে পেতে পুলিশি অভিযান, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

কিংগো গন্দোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আকিরা কুরোসাওয়ার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু তোশিরো মিফুনে। কুরোসাওয়ার অধিকাংশ চলচ্চিত্রে মূল ভূমিকায় ছিলেন এই গুণী শিল্পী। নিজের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছেন গন্দোর নৈতিক সঙ্কটের চিত্র। যখন তিনি দেখতে পান তার সন্তানের জায়গায় অপহৃত হয়েছে অন্য একটি বাচ্চা, সেসময় গন্দোর চরিত্রে বিরাজ করা চাপ, শঙ্কা, হতাশা, দুশ্চিন্তা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে পর্দায় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন মিফুনে। তার মধ্যে চলতে থাকে এক টানাপোড়েন; আজীবনের পরিশ্রম আর ভালোবাসায় তিলে তিলে গড়ে তোলা সবকিছু ফেলে দিয়ে কি তবে আরেকজনের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন তিনি? কিডন্যাপারের সব দাবিদাওয়া কি তবে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবেন? এখানে দেখা যায় মিফুনের গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্ব।

দ্বিতীয়ার্ধের ন্যারেটিভে মূল ভূমিকায় আসেন আরেক খ্যাতিমান জাপানি অভিনেতা তাতসুয়া নাকাদাই। ন্যায়পরায়ণ ও দায়িত্বশীল ডিটেক্টিভ তোকুরার ভূমিকায় তিনি পরিণত হন ছবির ফোকাল পয়েন্টে। পুলিশের কাছে যেসব প্রমাণ মজুত আছে, তা দিয়ে অপরাধীকে খুঁজে বের করার তদন্ত অভিযানটির নেতৃত্ব দেন তিনি। একইসাথে সংবেদনশীল ও স্থিতধী চরিত্রের সাথে নিজেকে ভালো মানিয়ে নিয়েছেন নাকাদাই।

চলচ্চিত্রটির ত্রুটি নিয়ে কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবেই চলে আসে শেষার্ধে পুলিশি তদন্ত। প্রক্রিয়াটিকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা প্রথম দেখায় কৌতূহলোদ্দীপক। দ্বিধা নেই। কিন্তু এত বিস্তারিতভাবে না দেখালেও চলত। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের প্রথমার্ধে মিউজিকের ব্যবহার একেবারে ছিল না বললেই চলে। কুরোসাওয়া অবশ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দর্শকমনে শঙ্কা বাড়ানোর জন্য তা করেছেন। তবু মাসারু সাতোর আকর্ষণীয় নয়্যার মিউজিককে আরেকটু বেশি সময়ের জন্য ব্যবহার করলে চলচ্চিত্রটি ষোলোকলায় পূর্ণ হতো।

গন্দোর সামনে পড়ে আছে স্রেফ তার আত্ম-প্রতিবিম্ব, ছবি: ক্রাইটেরিয়ন

"নরকে গেলেও আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। কারণ যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, সেদিন থেকেই আমি নরকে আছি। স্বর্গে গেলেই আমি বরং শিউরে ওঠব।"

এরকম বলে ওঠে অপরাধী তাকেউচি। গন্দোর প্রতি তাকেউচির ঈর্ষাকে পর্দায় সুচারুরূপে ধারণ করেছেন সুতোমো ইয়ামাজাকি। ছবির শেষ দৃশ্যটি যেন দস্তয়েভস্কি'র উপন্যাস থেকে নেওয়া। অপরাধীর নিন্দা কিংবা প্রশংসা করতে নয়, তাকে বোঝার চেষ্টা করছে সিনেমাটি। অপরাধীর উপর গন্দোর কোনো আক্ষেপ বা বিদ্বেষ নেই। বরং নিজের অতীতের দুর্দশাকে মেনে নিয়ে গন্দো সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক যেমনটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান করেছিল।

এটি একইসাথে থ্রিলার ও জটিল চরিত্রের বিশ্লেষণ সম্বলিত রাজনৈতিক ছবি। চারপাশের পৃথিবীকে নিয়ে বক্তব্য রাখতে প্রতিটি চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করেছেন তিনি। ষাটের দশকে জাপানে অপহরণের সাজা নগণ্য হওয়ায়, এই অপরাধ বেড়েই চলছিল। অপরাধীদের যেন আরো কঠোর সাজার আইন তৈরি হয়, সেজন্য কুরোসাওয়া নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্রটি। এটি সর্বকালের সেরা ক্রাইম ড্রামার একটি। কুরোসাওয়ার কাজ সম্পর্কে আগ্রহীরা তাঁর কাজের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য দেখতে চাইলে দেখে নিতে পারেন এ মুভিটি।

এই লেখকের লেখা আরও পড়ুন:

  •  বিবর্তনের যে ধারায় এগিয়েছে চলচ্চিত্র
  • কোকার ত্রয়ী: কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক যুগলবন্দী

ফারাহ জাহান শুচি। স্কেচ: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

 

Related Topics

টপ নিউজ

চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ / আকিরা কুরোসাওয়া / জাপানি চলচ্চিত্র

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নতুন ডিজাইনে ১ জুন আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট; ডিজাইনে থাকছে না কোনো ব্যক্তির মুখ
  • ‘আনু ভাইকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় আমি বিস্মিত’: আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ
  • বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত দেশ যেগুলো
  • যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন স্থগিত কেন? কারা ভোগান্তিতে পড়বেন? 
  • আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ কর্মী নেবে জাপান
  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও তুলা কিনতে পারে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস

Related News

  • আজ তাঁর জন্মদিন: বিশ্ব সিনেমার অতর আকিরা কুরোসাওয়া
  • ফিরে দেখা ২০২১: কেমন ছিল এ-বছরের চলচ্চিত্র?
  • আব্বাস কিয়ারোস্তামির কোকার: কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক চালচিত্র

Most Read

1
অর্থনীতি

নতুন ডিজাইনে ১ জুন আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট; ডিজাইনে থাকছে না কোনো ব্যক্তির মুখ

2
বাংলাদেশ

‘আনু ভাইকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় আমি বিস্মিত’: আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ

3
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত দেশ যেগুলো

4
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন স্থগিত কেন? কারা ভোগান্তিতে পড়বেন? 

5
বাংলাদেশ

আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ কর্মী নেবে জাপান

6
বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও তুলা কিনতে পারে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net