৯ বছর অ্যাকুরিয়ামে বন্দী থাকার পর সমুদ্রের স্বাদ পেল দুটি বেলুগা তিমি

বৈশ্বিক মহামারী চলাকালীন সময়ে দুটি তিমিকে অন্য এক মহাদেশে নতুন আবাসস্থলে ছাড়ার প্রক্রিয়া চিন্তার চেয়েও কঠিন। সকল বাঁধা পেরিয়ে লিটল গ্রে ও লিটল হোয়াইট নামের দুটি বেলুগা তিমি ২০১১ সালের পর প্রথম সমুদ্রের স্বাদ পেল। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় লেভিয়াথান রিলোকেশন প্রোজেক্টের আওতায় এটি সম্পন্ন হয়েছে।
অল্প বয়সে রাশিয়ার উপকূলে ধরা পড়ার পর দীর্ঘদিন চীনের একটি পার্কের অ্যাকুরিয়ামে বন্দী ছিল তিমি দুটি, অবশেষে আইসল্যান্ডের ক্লেটসভিক উপসাগরের ৮ একর অভয়ারণ্যে মুক্ত করা হয়েছে তাদের।
অভয়ারণ্যটির পরিচালক অদ্রে প্যাজেট একটি ভিডিও কলে সিএনএনকে বলেন, "পুরো প্রক্রিয়ার কাজটি একদমই সহজ ছিলনা, তবে এই পরিশ্রম ছিলো ভালোবাসার।"
২০১১ সালে রাশিয়ার একটি গবেষণা কেন্দ্র থেকে লিটল গ্রে ও লিটল হোয়াইটকে চীনের সাংহাইয়ের চাংফাই ওশান ওয়ার্ল্ডের অ্যাকুরিয়ামে স্থানান্তর করা হয়। তারপরই মারলিন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাকুরিয়ামটি কিনে নেয়, তারা তিমি ও ডলফিনকে বন্দী রাখার বিরোধী ছিল। তখনই তিমি দুটিকে মুক্ত করার চিন্তা করা হয়।
প্যাজেট বলেন, সি লাইফ ট্রাস্ট চ্যারিটির পরিচালিত বেলুগা তিমির নতুন এই আবাসস্থল অনেক বড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পন্ন। তিনি সিএনএন-কে বলেন, "বিশ্বজুড়ে ৩০০টির বেশি তিমি মাছকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অনেক বেলুগা তিমিকেই অনুপযুক্ত ও আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমরা লিটল গ্রে ও লিটল হোয়াইটের বর্তমান সার্বিক অবস্থা থেকে যা জানতে পারবো তা পরবর্তীতে প্রাণী কল্যাণে কাজে লাগবে।"

চীন থেকে তিমি দুটিকে পরিবহনের কাজে প্যাজেট যুক্ত না থাকলেও তিনি এই কঠিন কাজটির ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন।
তিমি দুটির প্রত্যেকটির ওজন ১টনের বেশি। বিশেষভাবে তৈরি সরঞ্জামাদি, অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ট্রাক, টাগবোট ও ক্রেনের মাধ্যমে স্থানান্তরে তাদেরকে অভ্যস্ত করার জন্য দলটি পূর্বে কিছু পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও চালায়।
প্যাজেট বলেন, "আপনি আপনার পোষা বিড়াল বা কুকুরকে নিয়ে ভ্রমণের সময় যেমন তাদের জন্য যথেষ্ট আরামদায়ক ব্যবস্থা করবেন, আমাদেরও পুরো প্রক্রিয়াটি বেলুগা তিমির জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে হয়েছে।"
আইসল্যান্ডে পৌঁছানোর পর দেশটির ঠান্ডা আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইতে নিতে পারার জন্য তিমি দুটিকে বেশ কয়েক মাস একটি নিয়ন্ত্রিত জলাশয়ে রাখা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত জলাশয় থেকে অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেয়ার কাজটি সবথেকে সহজ হলেও মহামারির কারণে কাজটি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
প্যাজেট সিএনএন-কে আরও বলেন, "আমরা এমনিতেই আইসল্যান্ডের একটি জনবিচ্ছিন্ন জায়গায় আছি। বর্তমান অবস্থা আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাজে যুক্ত করা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আনয়নেও সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। এই কাজে নিযুক্ত থাকা কর্মীদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হয় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে।"
তবে লিটল গ্রে ও লিটল হোয়াইটের যাত্রা এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘদিন পর প্রাকৃতিক পরিবেশে উন্মুক্ত হওয়ায় খাপ খাইয়ে নিতে পারার জন্য তাদেরকে আপাতত অভয়ারণ্যের মধ্যেই নিয়ন্ত্রিত জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই তাদের সম্পূর্ণভাবে মুক্ত পানিতে ছেড়ে দেয়া হবে। এই সম্পূর্ণ যাত্রাটি বেলুগা তিমিদের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে মানুষকে।