ভারতের ৫০ কোটি ডলারের ত্বক ফর্সাকারী পণ্য বাজার!

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে চলছে আন্দোলন। 'ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার' স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে মিছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদী পণ্য বিক্রি বাড়াতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বুনে দেওয়া হয়েছে বর্ণবাদী চিন্তা।
এই পণ্যের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ত্বক ফর্সা বা সাদা করার ক্রিম। বাংলাদেশ, ভারত তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও ত্বক ফর্সা করা ক্রিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এসব পণ্যের প্রচারে প্রায়শই ভালো চাকরি, সাফল্য, বিয়ের মতো বিষয়গুলোর জন্য ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম অত্যন্ত জরুরি বলে প্রচারণা চালানো হয়। এসব ক্রিমের বিজ্ঞাপনগুলোয় প্রায়ই এরকম কথা প্রচার করতে দেখা যায়।
বিজ্ঞাপনের বক্তব্য হয় এরকম - ভালো চাকরির জন্য চাই 'সাদা ত্বক'৷ আপনার যে যোগ্যতাই থাকুক না কেন, যদি ত্বক ফর্সা করতে পারেন, তবেই আত্মবিশ্বাস আসবে৷ আর তাই সাক্ষাৎকার দেবার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই কালো মেয়েরা ব্যবহার করুন ত্বক ফর্সা করা ক্রিম৷
আর যদি বিয়ের প্রশ্ন হয়, তবে তো কথাই নেই৷ বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় ছেলেদের সবসময় পছন্দ ফর্সা মেয়ে। ফলে বাবা-মা মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত, ভাবেন কীভাবে তাদের সামান্য চাপা গায়ের রঙের মেয়েটির ত্বক আরো ফর্সা করে তুলবেন! আর উদ্ধারকারী হিসেবে তখনই হাজির করা হয় ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমকে৷ বলা হয় এই ক্রিম ব্যবহারে ত্বক দ্রুততম সময়ে ফর্সা হয়ে যাবে।

এক ভারতেই বর্তমানে ত্বক ফর্সাকারী এইসব পণ্যের বাজার রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ত্বক ফর্সা করে তথাকথিত সুন্দর হওয়ার চেষ্টা?
অনেকে মনে করেন ভারতীয়দের মধ্যে ত্বক ফর্সা করার এই ধারণাটি এসেছে মূলত বর্ণপ্রথা থেকে। সাধারণত ব্রাহ্মণ বা উঁচু জাতের লোকদের ত্বক ছিল ফর্সা আর নিঁচু জাতের মানুষের ত্বক চাপা। এমনকি ভারতের চলচ্চিত্রগুলোতেও গায়ের রঙের এমন তারতম্য দিয়ে উঁচু-নিচু জাতের পার্থক্য দেখানোর প্রবণতা এখনো বজায় আছে।
অন্য আরেকটি কারণেও এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফর্সা ত্বক প্রীতি এসেছে। অনেক বছর এই অঞ্চলের বাসিন্দারা ব্রিটিশদের অধীনে ছিল৷ ব্রিটিশদের ত্বক ছিল সাদা এবং তারা এখানে এসেছিল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে। তাই সাদা ত্বকের প্রতি ভক্তি তখন থেকেও।
ভারতবর্ষসহ এশিয়ার অঞ্চলগুলো মূলত গ্রীষ্মপ্রধান, এখানে বছরের বেশিরভাগ সময়ই গরম আর তীব্র রোদ থাকে। এই অঞ্চলের মানুষ দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে কঠিন পরিশ্রম করে থাকে, যার কারণে তাদের ত্বকের রঙ কালো হয়। বিপরীতে ফর্সা ত্বক সমাজে বহুকাল ধরেই সমাদৃত। বর্ণ প্রথায় আগেই উচ্চবর্ণ বলে স্বীকৃত। আর ভারতীয় সমাজে উচ্চবংশীয়দের রোদে পুড়ে মাঠেঘাটে কাজ করতে হয় না। শ্রমিকশ্রেণীকে সব সময়ই খোলা আকাশের নিচে রোদজলে পুড়তে হয়। ফলে এভাবেও এখানে গায়ের রঙ নির্ধারিত হয়ে পড়ে। সুন্দর, ফর্সা ত্বকের আকাঙ্ক্ষারও জন্ম এখান থেকেই।
ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের প্রচারণায় উজ্বল ত্বকের এই ধারণা এখন শুধু মেয়ে নয় ছেলেদের মধ্যেও বিরাজমান৷ তাই ছেলেদের জন্য ত্বক ফর্সা করার ক্রিমও বেশ কিছুদিন হলো বাজারে এনেছে কোম্পানিগুলো৷
আর এসব পণ্যের বিজ্ঞাপনে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, দীপিকা পাড়ুকোন, শাহরুখ খানের মতো জনপ্রিয় তারকাদের দেখানো হয়, যারা এই ক্রিম ব্যবহার করে ত্বক সাদা করেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, এই তারকাদের মতো তারাও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান। কিন্তু বাস্তব জীবনে তারকারা কি এই রঙ ফর্সা করার প্রসাধনী ব্যবহার করেন!
সূত্র: টিআরটি