পৃথিবীকে বদলে দেওয়া একশ’ দিন

৩১ ডিসেম্বর, ঘটনার শুরুর কথা:
বিশ্বজুড়ে মানবিক বিপর্যয়, ইয়েমেনের দুর্ভিক্ষ, উগ্র ডানপন্থীদের দেশে দেশে ক্ষমতা দখল বা ইউরোপের শরনার্থী সংকট, সবকিছু মিলিয়েই গত দশকটি ছিল এক উত্তাল সময়। এর অবসানের মধ্যে দিয়ে তাই নতুন বছরে ভালো কিছু হবে, এমন আশা করেছিল বিশ্ববাসী। বরাবরেই মতই বিগত দশকের অবসান উপলক্ষ্যে চীনসহ বিশ্বব্যাপী আতশবাজি, নৃত্য আর সঙ্গীতের ঝঙ্কারে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছর আর ২০২০ এর দশককে।
৩১ তারিখ রাতে উহানসহ সারা চীনে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হয়ে এই উৎসব উপভোগ করেন। তারা কেউই জানতেন না, আগামী দিন তাদের তাদের জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
শুধু চীনেই নয়, আসন্ন মহাবিপদের পদধ্বনি তখন পুরো বিশ্বেই কেউ অনুধাবন করতে পারেনি। তাই চলতে থাকে শ্যাম্পনের ফোয়ারা আর উদ্বাহু উৎসবের আয়োজন।
কিন্তু আসল ঘটনার দিকে কেউই নজর দেওয়ার অবকাশ পাননি। ৩১ তারিখ দুপুর ১টা বেজে ৩৮ মিনিটেই কিন্তু চীনের একটি সরকারি ওয়েবসাইটে প্রথম হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে 'নিউমোনিয়ার' মতো একটি অজ্ঞাত রোগের কথা জানায়।
কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে, উহানের একটি 'সিফুড' মার্কেট থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। উল্লেখ্য ওই বাজারে বন্যপ্রাণীর মাংসও বিকোতে দেদারসে।
১ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার শিল্প নগরী উহানে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের ডিসেম্বরে এক ডজন মানুষের দেহে অজ্ঞাত রোগটি ছড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করে। অবশ্য এটা নিয়ে কেউই উদ্বিগ্ন হননি তেমন, কারণ গতবছর জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটি; পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা সংক্রমণ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হামের প্রাদুর্ভাব এবং আফগানিস্তানে ডেঙ্গু বিস্তারের কথা জানিয়েছিল।
তাই চীনের নতুন ভাইরাস একটি সীমিত আঞ্চলিক প্রভাব তৈরি করতে পারে, এমনটা ছিল সর্বোচ্চ অনুমান।
করোনার আসল রুপ:
তবে এসব অনুমান যে কতটা ভ্রান্ত, তা প্রমাণ করেছে পরবর্তী ১শ দিন। গত বুধবার নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ তার উৎপত্তির শততম দিন পার করে। এই সময়ে সে থমকে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা, ঘরবন্দি করে ফেলেছে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষকে। আর এখন এই ভাইরাসের প্রভাবেই আরও অগণিত মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়তে চলেছে বলে সতর্ক করছে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ শীর্ষ এনজিওগুলো। দ্য গার্ডিয়ান
বড় বড় শিল্পাঞ্চল আর কারখানার চিমনিগুলো এখন কালো ধোঁয়া উদ্গিরণ করছেনা। এই একশ দিনে ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মানুষের অবাধ ভ্রমণকে বন্ধ করে দিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ মানুষ, মারা গেছেন ৯৫ হাজার।
ভাইরাসটি নাকি সাম্যবাদী, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কৌতুক এখন বেশ পুরানো। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, একাধিক দেশের খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন এতে। বাদ পড়েননি টম হ্যাঙ্কস বা ইদ্রিস অ্যালবার মতো খ্যাতিমান অভিনেতারাও।