ছয় হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বড় সংগ্রহ, হলো রেকর্ডও

টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় রানের ইনিংস ৯৫২। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে এই রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। এখনও রেকর্ডটি তাদের দখলে। সেখানে ১০ উইকেটে করা ৫৩১ রান আর এমন কী! অনেক কম রান হওয়ার পরও শ্রীলঙ্কার এই ইনিংসটি বিশেষ, এভাবে ব্যাটিং করে ৫০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলতে টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি দেখা যায়নি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রায় দুইদিন ব্যাটিং করলো শ্রীলঙ্কা, ১৫৯ ওভার ব্যাটিং করে ১০ উইকেটে ৫৩১ রান তুলেছে লঙ্কানরা। ইনিংস বিশাল না হলেও একেবারে ছোট নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৫০০ ছাড়ানো রান করলেও শ্রীলঙ্কার ইনিংসে নেই কোনো সেঞ্চুরি, দলটি ছয়জন ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।
এ কারণেই শ্রীলঙ্কার ইনিংসটি বিশেষ। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেঞ্চুরিবিহীন সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এটা। এ পথে লঙ্কানরা ছাড়িয়ে গেছে ভারতের রেকর্ড, যা ৪৮ বছর পূরনো। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৫২৪ রান করে কিউইরা। সেঞ্চুরি না করেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার তালিকায় অস্ট্রেলিয়া দুই নম্বরে, তিনেও তারা। শ্রীলঙ্কার সেঞ্চুরিবিহীন সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৪৬৯ রানের।
টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া শ্রীলঙ্কা প্রথম দিনটা নিজেদের করে নেয়। ৪ উইকেটে ৩১৪ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করে সফরকারীরা। অবশ্য আরও কম রানে বেশি উইকেট থাকতে পারতো তাদের। কিন্তু বাংলাদেশের হতশ্রী ফিল্ডিংয়ে তা হয়নি। তিনটি ক্যাচ ছাড়ে ঘরের মাঠে দলটি। তৃতীয় দিনও হতাশার গল্পই লিখেছে নাজমুল হোসেন শান্ত দল, হাত ফসকে বেরিয়েছে আরও ৪টি ক্যাচ। এদিন আরও ২১৭ রান তুলে সংগ্রহটা আরও বাড়িয়ে নেয় লঙ্কানরা।
দ্বিতীয় দিনও ভালো শুরু করে শ্রীলঙ্কা। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমল ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন। পঞ্চম উইকেটে এ দুজন ৮৬ রানের জুটি গড়েন। ১০৪ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৪ রান করা চান্দিমলকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। আরেকটি উইকেট গেলেও বাংলাদেশের চিন্তা বাড়ার কথা, কারণ এরপরই উইকেটে আসেন কামিন্দু মেন্ডিস।
ধনঞ্জয়া ও কামিন্দুর কাছেই সিলেট টেস্ট হেরেছিল বাংলাদেশ, দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন এ দুজন। এবার অবশ্য তাদের জুটি বড় হয়নি, আসে ৩৬ রান। ১১১ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭০ রান করে খালেদ আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হন ধনঞ্জয়া। অধিনায়ক ফেরার পর কামিন্দু একাই দলকে আরও অনেকটা পথ এগিয়ে দেন, তাকে ফেরাতেই পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
প্রবাথ জয়সুরিয়ার সঙ্গে ৬৫, বিশ্ব ফার্নান্দো ও লাহিরু কুমারার সঙ্গে ২১ রানের দুটি জুটি গড়েন কামিন্দু। তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া প্রবাথ ২৮ রান করেন। ফার্নান্দো করেন ১১ রান। ১৬৭ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯২ রানে অপরাজিত থাকেন কামিন্দু। আগের দিন নিসান মাদুসকা ৫৭, দিমুথ করুনারত্নে ৮৬, কুশল মেন্ডিস ৯৩ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ২৩ রান করেন। সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন সাকিব। অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ২টি এবং খালেদ ও মিরাজ একটি করে উইকেট পান।
শ্রীলঙ্কা আরও আগেই অলআউট হতে পারতো। কিন্তু প্রথম দিনের চেয়েও আজ একটি বেশি ক্যাচ হাতছাড়া করায় সেটা হয়নি। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ধনঞ্জয়ার ক্যাচ ফেলেন মিরাজ। খালেদের বলে লঙ্কান অধিনায়ক ক্যাচ তুললেও স্লিপে দাঁড়ানো মিরাজ নিতে পারেননি। খালেদের করা ১২১তম ওভারে তিনজন ফিল্ডার মিলেও একটি বল ধরতে ব্যর্থ হন।
খালেদের বলে প্রবাথও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শান্ত সহজ ক্যাচটি ফেলে দেন। সেই বলটি ধরার চেষ্টার করেন শাহাদত হোসেন দিপু। বল হাতে নিলেও রাখতে পারেননি তিনি। পড়তে থাকা বলের দিকে হাত বাড়ান জাকির হাসান, কিন্তু তার হাঁত ছুয়ে বল মাটিতে পড়ে যায়। ৩৬তম ওভারে তাইজুলের বলে আবারও ক্যাচ তোলেন প্রবাথ, এবার ক্যাচ ছেড়ে হতাশ করেন লিটন কুমার দাস। তার গ্লাভস ফসকে বল বেরিয়ে যায়।
১৪৯তম ওভারে আবারও হাত ফসকে বেরোয় ক্যাচ। তাইজুলের বলে ক্যাচ তোলেন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া কামিন্দু। ডিপ-মিড উইকেটে ফিল্ডিং করা হাসানও বাকিদের মতো হতাশ করে ক্যাচটি মাটিতে ফেলেন। এক ইনিংসে সাতটি ক্যাচ মিস, এটাই বলে দেয় বাংলাদেশ ফিল্ডিংয়ে কেমন ছিল। ফিল্ডিংয়ের এসব ভুল ব্যাট হাতে শুধরাতে হবে তাদের, স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা সেটা কতোটা করতে পারেন, এবার সেটাই দেখার অপেক্ষা।