নিজেদের ভুলে পিছিয়ে থেকে দিন শেষ

প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ এসেছিল। দারুণ বোলিংয়ে সম্ভাবনাও তৈরি করেন বোলাররা। কিন্তু বেশিরভাগই হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেও ক্যাচ মিস, স্টাম্পিং মিসের মহড়ায় সেটা করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। উল্টো পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৩১৪ রানে। এই রানেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৭ রানে এগিয়ে গেছে সফরকারীরা। এই রান তুলে এরপর ভারতকে লক্ষ্য দিতে হবে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৭ রান তুলেছে ঘরের মাঠের দলটি, এখনও তারা ৮৭ রানে পিছিয়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত ৫ ও জাকির হাসান ২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
দ্বিতীয় দিনে কয়েকবার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। ভারতের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়া শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষভ পন্ত দুবার করে জীবন পেয়েছেন। প্রতিপক্ষের ভুলকে কাজে লাগিয়ে এ দুজন গড়েন ১৫৯ রানের জুটি। আর এই জুটিতেই প্রথম ইনিংস দিয়ে এগিয়ে গেছে লোকেশ রাহুলের দল। অথচ দুজনই ফিরতে পারতেন আরও কতো আগে!
বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেন রোকেশ রাহুল ও শুভমান গিল। দ্বিতীয় দিন অবশ্য এই জুটি বেশি সময় টেকেনি। শুরুর দিকেই আঘাত হানেন বাংলাদেশের ইনিংসের সফলতম বোলার তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৫ বলে ১০ রান করেন রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বে থাকা রাহুল।
ভারতের আরেক ওপেনার শুভমানকে ফেরাতেও সময় নেননি তাইজুল। কিছুক্ষণ পর ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন অভিজ্ঞ এই স্পিনার। ২০ রান করেন শুভমান। বল হাতে দারুণ শুরু করা তাইজুল যেন থামতে চাইলেন না, ভারতের তৃতীয় উইকেট জেতেশ্বর পূজারাকেও সাজঘর দেখান তিনি। ফেরার আগে ৫৫ বলে ২৪ রান করেন পূজারা।
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতের চাপ একটু পর আরও বাড়ান চোট কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার তুলে নেন ২৪ রান করা বিরাট কোহলির উইকেট। ঘরের মাঠে এটাই তার প্রথম উইকেট। আগের ১১টি টেস্টের একটিও যে ঘরের মাঠে খেলা হয়নি তার। ঘরের মাঠে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে পেলেন প্রথম উইকেট, সেটাও কোহলির। এই প্রথমটা স্মরণীয় হয়েই থাকলো বাংলাদেশ পেসারের জন্য।
৯৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন দিকাহারা, তখন ত্রাতা হয়ে হাজির হন শ্রেয়াস ও পন্ত। পঞ্চম উইকেটে ১৫৯ রানের জুটি গড়ে চাপ কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি দলকে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যান এ দুজন। এখানে অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের অবদান আছে। স্টাম্পিং মিস, ক্যাচ মিসে জীবন পেয়ে বড় ইনিংস খেলেন এ দুজন।
এই জুটিতে ২৫৩ রানে পৌঁছে যায় ভারত। পন্তকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার আগে ওয়ানডে মেজাজে ১০৪ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ইনিংসসেরা ৯৩ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পন্ত ফেরার পর আবারও এলোমেলো হয়ে পড়ে ভারতের ইনিংস, কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন অক্ষর প্যাটেল।
অক্ষর প্যাটেলকে ফিরিয়ে উইকেটের খাতা খোলা সাকিব একটু পর শ্রেয়াসকে নিজের শিকারে পরিণত করেন। পন্তের মতো শ্রেয়াসও ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ১০৫ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৭ রান করেন। শেষ দিকে সাকিব বল হাতে দাপট দেখালেও ভারতের বোলাররাও স্কোরকার্ডে রান যোগ করেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১২ ও উমেশ যাদব ১৪ রান করেন। ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন জয়দেব উনাদকাত।
শুরুতেই ভারতকে বেগ দেওয়া তাইজুল ২৫ ওভারে ৭৪ রানে ৪টি উইকেট নেন। অলরাউন্ডার রূপে ফেরা সাকিবও নেন ৪ উইকেট। এই ৪ উইকেটে বিশ্বের ২০তম বোলার হিসেবে ৬৫০ আন্তর্জাতিক উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ ছাড়া তাসকিন ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।