পেনাল্টি শ্যুটআউটে মার্তিনেজের মাইন্ডগেমসই আর্জেন্টিনাকে কাপের কাছে নিয়ে গেল!

রবিবার রাতে অবিস্মরণীয় বিশ্বকাপ ফাইনালের পর দুজন খেলোয়াড়ের নাম সবার মুখে মুখে ঘুরছে: লিওনেল মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে সাথে আরও একটি নাম রয়েছে, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
ক্ষণেক্ষণে টুইস্ট থাকা, মোড় ঘুরে যাওয়া, উল্লাস বিষাদে রূপ নেওয়া, কিংবা পিনপতন নীরবতা হঠাৎ করেই গর্জনে রূপ নেওয়া ১২০ মিনিট ৩-৩ গোলে শেষ হওয়ার পর ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিরোপা কে হাতে নেবে তা নির্ধারণ করার জন্য সাহায্য নিতে হয় পেনাল্টি শ্যুটআউটের।
আর্জেন্টিনার পেনাল্টি টেকাররা একদিকে যেদিকে শান্তভাবে তাদের কাজ শেষ করে এসেছে, জালে জড়ীয়েছে ৪টির ৪টিই, উল্টোদিকে মার্টিনেজ দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরাসিদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য।
এমবাপ্পে ইতিমধ্যেই ম্যাচে দুটো পেনাল্টি রূপান্তর করেছেন গোলে। তা-ই তিনি যখন শ্যুটআউটের প্রথম পেনাল্টির ক্ষেত্রেও একই কাজ করলেন, তখন অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। তবে এমি মার্টিনেজ প্রায় ঠেকিয়েই ফেলেছিলেন, তার হাত ছুঁয়ে গিয়েছিল আলতো করে। আর তারপর থেকেই এমি মার্টিনেজ শ্যুটআউটের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলে নিজেকে। কিংসলে কোমানের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন সরাসরি, তারপর শুরু হয় তার মাইন্ড গেমস।

অরেলিয়ান চুয়ামেনি যখন তার শট নিতে এগিয়ে আসছিলেন, তখন তিনি নিশ্চই তার ঘাড়ে দায়িত্বের বোঝার ওজন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। মার্তিনেজ রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডারের কাছ থেকে বল দূরে সরিয়ে দেন, যাতে করে মিডফিল্ডারকে পুরো পথ বলটিকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়।
মার্তিনেজের এই মাইন্ড গেমসই ২২ বছর বয়সী তরুণ চুয়ামেনির ওপর ভালো চাপ ফেলেছিল, যে কারণেই বলটিকে পাঠিয়ে দেন গোলের সীমানার বাইরে। আর এরপরেই আর্জেন্টিনা চলে যায় বিশ্বকাপ শিরোপা ছোঁয়ার খুব কাছে, যার জন্য তারা ৩৬ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। র্যান্ডাল কোলো মুয়ানির শ্যুট এরপর কেবল ছিল আনুষ্ঠানিকতা, আর্জেন্টাইনদের শিরোপাজয়ের স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপান্তর করতে কয়েক সেকেন্ড দীর্ঘায়িত করে। বদলি খেলোয়াড় গনজালো মন্তিয়েল এরপর ঠান্ডা মাথায় জালে বল জড়িয়ে আর্জেন্টিনার শিরোপা উদযাপনের সূচনা করেন।
লিওনেল স্কালোনি ম্যাচের পর বলেন, "এমি মার্তিনেজ খুবই ইতিবাচক একজন খেলোয়াড়, আর তার সহযোদ্ধাদের আগেই বলে রেখেছিল যে সে কিছু পেনাল্টি সেভ করবেই।"

বিবিসি স্পোর্টসের বিশেষজ্ঞরাও মার্তিনেজের এই মাইন্ডগেম পেনাল্টি শ্যুটআউটে আর্জেন্টিনাকে সাহায্য করেছে বলে মত দিয়েছেন। সাবেক ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার জার্মেই জেনাস বলেন, "কোনো সন্দেহ নেই যে শ্যুটআউটের সময় মার্তিনেজের মাইন্ডগেমের প্রচণ্ড প্রভাব ছিল।" অ্যালান শিয়ারারও জানান, "সে বারবার খেলোয়াড়দের মনোযোগ সরিয়ে দিতে চাচ্ছিল, বলে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলো। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলছিলো। তাদের ওপর যতটা চাপ বাড়ানো যায়, তার সবই করছিলো।" রিও ফার্দিন্যান্দও যোগ করেন, "এমনকি লাইনের ওপারেও তার মুভমেন্ট দিয়ে সে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি টেকারের নজড় কাড়ার চেষ্টা করছিলো।"
ম্যাচটি হয়তো শ্যুটআউট পর্যন্ত গড়াতোই না, যদি না ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ওয়ান-টু-ওয়ান পজিশনে থেকে এক অসাধারণ সেভ করতেন মার্তিনেজ। কোলো মুয়ানির দিকে সামনে এগিয়ে এসে তার জায়গা কমিয়ে দিয়ে সেভটি করেন তিনি। আর এরপরই তিন ক্লিনশিট নিয়ে জিতে নেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস।

গত বছরেই আকাশী নীল-সাদা জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছিল মার্তিনেজের, তবে এর মধ্যেই নিজের প্রভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ।
মার্তিনেজ আর্সেনালে ৮ বছর কাটিয়েছেন, লোনে অন্যত্র খেলেছেন ৬ বার, আর্সেনালের হয়ে খেলেছেন মাত্র ১১টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচ। তারপর দুই বছর আগে অ্যাস্টন ভিলায় ট্রান্সফার হওয়ার পর তার স্বরূপ খুঁজে পান।
"আমার কোনো বলার ভাষা নেই। আমি পেনাল্টি শ্যুটআউটের সময় শান্ত ছিলাম এবং যেভাবে চেয়েছিলা, ঠিক সেভাবেই সবকিছু হয়েছে। আমার যা কিছু স্বপ্ন ছিল, তার সবকিছু পূরণ হয়ে গেছে।"