মরক্কো রূপকথায় আফ্রিকার প্রথম নাকি ফ্রান্সের টানা দ্বিতীয়?

কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তাদের প্রতিপক্ষ কে হবে, সেটি নির্ধারিত হবে ফ্রান্স এবং মরক্কোর ম্যাচের ফলাফলের উপর।
কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে উঠা মরক্কো।
সেমি-ফাইনালের এই ম্যাচের আগে জেনে নেওয়া যাক কাতার বিশ্বকাপে দুই দলের পারফরম্যান্স, সেমি-ফাইনাল রেকর্ড এবং শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে।
ফ্রান্স

১৯৫৮ এবং ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর টানা দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কোনো দল। ফ্রান্সের সামনে এবার সুবর্ণ সুযোগ সেটি অর্জন করার।
সেমি-ফাইনালে ফরাসিদের বাধা মরক্কো, যারা নিজেরা প্রথমবারের মতো উঠেছে সেমি-ফাইনালে।
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সেমি-ফাইনালে উঠেছে বেশ হেসেখেলেই। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলার পর বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিয়ে শেষ ম্যাচে তিউনিশিয়ার কাছে হারলেও সেটি মোটেও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
শেষ ষোলোর ম্যাচে পোল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করে লে ব্লুজরা। সেখানে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেন কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের ফলাফল
ফ্রান্স ৪-১ অস্ট্রেলিয়া
ফ্রান্স ২-১ ডেনমার্ক
ফ্রান্স ০-১ তিউনিশিয়া
শেষ ষোলো
ফ্রান্স ৩-১ পোল্যান্ড
কোয়ার্টার-ফাইনাল
ফ্রান্স ২-১ ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের রেকর্ড
বিশ্বকাপে ৬ বার সেমি-ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স, যার মধ্যে ৩ টিতে জিতেছে তারা।
ফ্রান্সের শক্তি
ফ্রান্সের প্রতিটি জায়গাতেই যথেষ্ট গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে। আছেন একজন কিলিয়ান এমবাপ্পে, কাতার বিশ্বকাপের সব আলো এখন পর্যন্ত নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। ৫ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইয়েও অন্যদের থেকে এগিয়ে এমবাপ্পে। মরক্কোর বিপক্ষেও তিনি জ্বলে উঠলে ফ্রান্সের ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা অনেকটাই সহজ হবে।
মরক্কো

কাতার বিশ্বকাপের সবথেকে বড় চমক মরক্কো, আফ্রিকা এবং আরবের আশা-ভরসার নাম এখন মরক্কো। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অ্যাটলাসের সিংহদের সেভাবে হিসাবে না ধরলেও নিজেদের পারফম্যান্স দিয়ে সেটি আদায় করে নিয়েছে মরক্কো।
বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, কানাডার গ্রুপ থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় উঠে মরক্কো, যেখানে ফেভারিট স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে উঠে তারা। সেখানে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিদায় করে সেমি-ফাইনালে উঠেছে আফ্রিকান দেশটি।
গ্রুপ পর্বে মরক্কোর পারফরম্যান্স
মরক্কো ০-০ ক্রোয়েশিয়া
মরক্কো ২-০ বেলজিয়াম
মরক্কো ২-১ কানাডা
শেষ ষোলো
মরক্কো ০-০ স্পেন (টাইব্রেকারে ৩-০ তে জয়ী মরক্কো)
কোয়ার্টার-ফাইনাল
মরক্কো ১-০ পর্তুগাল
বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে মরক্কোর রেকর্ড
এর আগে কখনো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠেনি মরক্কো, এটিই তাদের প্রথমবার।
মরক্কোর শক্তি
দুর্দান্ত রক্ষণের পাশাপাশি গতিশীল প্রতি-আক্রমণ মরক্কোর সবথেকে বড় শক্তি। কাতার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠা দলগুলোর মধ্যে সবথেকে কম গোল খেয়েছে মরক্কোই, ৫ ম্যাচে মাত্র ১ বার তাদের জালে বল ঢুকেছে, সেটিও আত্মঘাতী। অর্থাৎ প্রতিপক্ষ দলের কেউ এখন পর্যন্ত মরক্কোর জালে বল পাঠাতে পারেননি!
শেষ ষোলোয় স্পেনের বিপক্ষে ৩ টি শট ঠেকানো এবং কোয়ার্টার-ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব সেইভ করা মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিনে বোনু নিশ্চয়ই পাখির চোখ করছেন ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচটিও। নিজেদের ইতিহাস নতুন করে লিখা মরক্কোও চাইবে ফ্রান্সের বিপক্ষে জিতে বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে ফাইনালে পৌঁছাতে।