দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষেই মাঠে ফিরছেন নেইমার

কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে ডান পায়ের গোড়ালিতে মারাত্মক চোট পেয়ে মাঠ থেকে ছিটকে যান ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা নেইমার। ম্যাচের ৮০ মিনিটের সময় ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে নেইমার যখন মাঠ ছাড়ছিল, তখন অনেক ফুটবল দর্শক ভেবেই নিয়েছিল হয়তো এখানেই শেষ হতে যাচ্ছে নেইমারের কাতার বিশ্বকাপ যাত্রা। কিন্তু না, সকলের এ অনুমানকে ভুল প্রমাণ করে মাঠে ফিরছেন নেইমার। শেষ ষোলোয় দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষেই মাঠে দেখা যাবে ব্রাজিলের এই তারকা ফুটবলারকে। খবর বিবিসির।
গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত সূচনা করলেও শেষ ষোলোর ঠিক আগে সময়টা খুব ভালো যাচ্ছে না সেলেসাওদের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দল ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে একযোগে বেঞ্চের খেলোয়াড়দের মাঠে নামানোর খেসারত দিয়েছে কোচ তিতে। ফলাফল, বিশ্বকাপ মঞ্চে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে ক্যামেরুন ১-০ গোলে পরাজিত করেছে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিলকে।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে ব্রাজিল দল যখন বাড়তি চাপে ঠিক তখনই ব্রাজিল দলে আরেক দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে স্ট্রাইকার জেসুস ও ডিফেন্ডার তেলেসের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার সংবাদ। আর ঠিক এই কঠিন সময়েই দলের জন্য দারুণ এক সংবাদ নেইমার ও দানিলোর ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসা।
গত রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে নেইমারের ফিটনেস সম্পর্কে জানতে চাইলে কোচ তিতে বলেন, "নেইমার আগামী ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। আজ বিকেলে তিনি দলের সাথে অনুশীলন করবেন। যদি অনুশীলনে সবকিছু ঠিকঠাক মনে হয়, তবে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলবেন।"
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজ ক্লাব পিএসজিতে মেসি, এমবাপ্পেদের সাথে দারুণ ফর্মে ছিলেন নেইমার। তাই ধারণা করা হচ্ছিলো, কাতার বিশ্বকাপ হয়তো নেইমারের ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। কিন্তু না, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই ইনজুরি নেইমারের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার পর ভক্তদের উদ্দেশে নেইমার ইনস্টাগ্রামে বলেন, "আমার জীবনে কোনকিছুই সহজভাবে আসেনি। আমি কখনও কারও খারাপ চাইনি এবং সবসময় অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।"
নিজের ইনজুরি প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, "হ্যাঁ, আমি ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছি। এটা আমার জন্য কষ্টদায়ক। কিন্তু আমার দলে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। আমি নিজের জন্য, আমার সতীর্থদের জন্য এবং সর্বোপরি আমার দেশের জন্য ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।"
তিতের বক্তব্যর পর গত রবিবার দলের সাথে হালকা অনুশীলন করেছেন নেইমার। অনুশীলনে তাকে খোশমেজাজেই দেখা গিয়েছে। অনুশীলন শেষে নিজের দুইটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে নেইমার লিখেছেন, "আমি ভালো অনুভব করছি। আমি আগেই ধারণা করেছিলাম আমি ভালো অনুভব করবো।" প্রথমে কোচ তিতের বক্তব্য এবং পরবর্তীতে নেইমারের এ ফেসবুক পোস্টের কারণে অনেকটা নিশিচভাবেই বলা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে মাঠে ফিরতে যাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান এ সুপারস্টার।
তবে শেষ ষোলোর এ ম্যাচে নেইমারের মাঠে নামার কথা থাকলেও শুরু থেকেই তিনি থাকবেন কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবেও তাকে দেখা যেতে পারে। কেননা ইনজুরি থেকে সদ্য সেরে ওঠা নেইমার যদি খেলা চলাকালীন মাঠে আবারও কঠিন ট্যাকেলের সম্মুখীন হয় তবে তার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে মেরুদণ্ডের আঘাতে মারাত্মক এক ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে আসর থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন নেইমার। সেই ইনজুরিটা এতটাই মারাত্মক ছিল যে, প্রায় শেষই হয়ে যেতে বসেছিল নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ার। এছাড়াও গোড়ালির চোটে ২০১৯ কোপা আমেরিকার পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যায় নেইমার। ঐ টুর্নামেন্টে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হলেও শিরোপায় নিজের অবদান রাখতে পারেনি দলের বাইরে থাকা নেইমার।
সর্বশেষ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নেইমারের এ ইনজুরি আরও একবার প্রমাণ করেছে বড় টুর্নামেন্টে নেইমারের ভাগ্য আসলে কতটা খারাপ। তবে এ সকল হিসেবনিকেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষেই এক নতুন যাত্রা শুরু করতে পারেন ব্রাজিলিয়ান এ সুপারস্টার। হয়তো এ যাত্রা যেয়ে থামতে পারে ব্রাজিলের বহুল আকাঙ্ক্ষিত 'মিশন হেক্সা' পূরণের মাধ্যমে। নেইমার জায়গা করে নিতে পারেন কাফু, রবার্টো কার্লোস কিংবা রোনালদো নাজারিওদের মত গ্রেটদের কাতারে।