Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
June 04, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, JUNE 04, 2025
সুই: পোশাকের জগতে যেভাবে নিয়ে এল ফ্যাশনের উচ্ছ্বাস

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
09 February, 2025, 02:50 pm
Last modified: 09 February, 2025, 02:51 pm

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

সুই: পোশাকের জগতে যেভাবে নিয়ে এল ফ্যাশনের উচ্ছ্বাস

ভেনাস মূর্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো ভেনাস অব ভিলেনডর্ফ, অস্ট্রিয়া, ভেনাস অব ব্রাসেমপুই, ফ্রান্স, ভেনাস অব লোসেল, ফ্রান্স, কস্তেনকি ভেনাস, রাশিয়া, মাল্টা ভেনাস, সাইবেরিয়া, রাশিয়া, ডলনি ভেনাস, চেক প্রজাতন্ত্র। এখানে দেখার বিষয় হলো ভেনাস মূর্তিগুলোর সাথে রোমান দেবী ভেনাস বা গ্রিক আফ্রোদিতির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মূর্তিগুলোতে নারীর তরঙ্গায়িত দেহবল্লরী ফুটিয়ে তোলার সুবাদেই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এগুলোকে ‘ভেনাস’ নামে ডাকতে শুরু করেন। উর্বরতা বা মাতৃত্বের সঙ্গে এসব নারী মূর্তির কোনো সম্পর্ক হয়তো আছে।
সৈয়দ মূসা রেজা
09 February, 2025, 02:50 pm
Last modified: 09 February, 2025, 02:51 pm

খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০০ থেকে ২০০০০ বছর আগে পশ্চিম, মধ্য ইউরোপে, পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়ার সাইবেরীয় অঞ্চলে পাওয়া কিছু নারী মূর্তিকে ভেনাসের মূর্তি বলা হয়। রোমান পুরাণের ভেনাস এবং গ্রিক পুরাণের আফ্রোদিতি একই দেবী। তাকে ভালোবাসা, সৌন্দর্য ও উর্বরতার দেবী হিসেবে মনে করা হয়। 

এসব ভেনাস মূর্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো ভেনাস অব ভিলেনডর্ফ, অস্ট্রিয়া, ভেনাস অব ব্রাসেমপুই, ফ্রান্স, ভেনাস অব লোসেল, ফ্রান্স, কস্তেনকি ভেনাস, রাশিয়া, মাল্টা ভেনাস, সাইবেরিয়া, রাশিয়া, ডলনি ভেনাস, চেক প্রজাতন্ত্র। এখানে দেখার বিষয় হলো ভেনাস মূর্তিগুলোর সাথে রোমান দেবী ভেনাস বা গ্রিক আফ্রোদিতির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মূর্তিগুলোতে নারীর তরঙ্গায়িত দেহবল্লরী ফুটিয়ে তোলার সুবাদেই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এগুলোকে 'ভেনাস' নামে ডাকতে শুরু করেন। উর্বরতা বা মাতৃত্বের সঙ্গে এসব নারী মূর্তির কোনো সম্পর্ক হয়তো আছে। কিংবা শিল্পী হয়তো নিজেরই প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন। এমনটা ভাবা হয়ে থাকে। রোমান সভ্যতারও হাজার হাজার বছর আগে এসব মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল। রোমান বা গ্রিক পুরাণ কথিত দেবী ভেনাস বা আফ্রোদিতির সাথে এসবের কোনো সম্পর্কই নেই।

সচরাচর এসব 'ভেনাস'কে ফ্যাশনের প্রতীক কিংবা অংশ হিসেবে গণ্য করা হয় না। প্রস্তর যুগের নারীরা কী পরতেন, তার আভাস রয়ে গেছে কোনো কোনো মূর্তির গায়ে। রাশিয়ার কস্তেনকি থেকে পাওয়া ভেনাস ফিতাযুক্ত মোড়ানো কিছ পরে আছে। অন্যদিকে ভিলেনডর্ফ ভেনাসের পরনে রয়েছে হাতে বোনা টুপি। টুপির বুনন সৌন্দর্যকে বলতে হবে অনিন্দ্য। নিউ সায়েন্টিসে এ নিয়ে 'হাউ আওয়ার অ্যানসেসটরস ইনভেনটেড ক্লথিং অ্যান্ড ট্রান্সফর্মড ইট ইনটু ফ্যাশন' শিরোনামে আরও লিখেছেন আলসন জর্জ। 

প্রাগৈতিহাসিক প্রস্তর যুগের মানুষ শুধু পশুর চামড়া পরত। এমন এক ধারণা রয়েছে একালের বিজ্ঞ মহলে। কিন্তু প্রাচীনকালে খুদে মূর্তিগুলো সে ধারণাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। হাজার হাজার বছর আগেও মানুষের কাছে পোশাক গুরুত্বের ছিল। তার প্রমাণ হয়ে বিরাজ করছে খুদে খুদে মূর্তির গায়ের পোশাক। নিজের এ ভাবনা প্রকাশ করেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবানা চ্যাম্পেইনের সাবেক অধ্যাপক প্রত্নবিদ ওলগা সোফার। শীতল হাওয়ার দিনগুলোয় উষ্ণ ওমের আরাম পাওয়াকে প্রধান করেই কাপড়চোপড় পরার সূচনা। ধীরে ধীরে সৌন্দর্য এবং ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য পোশাক গায়ে চড়াতে থাকে মানুষ। প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানকে আমূল বদলে দিচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে পাওয়া নানা আলামত। 

পোশাক টেকসই নয়। কালক্রমে নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে পুরানো যে পোশাকের নমুনা বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, তার বয়স মাত্র ১০ হাজার বছর। কিন্তু খুদে ভেনাস মূর্তিগুলো তুলে ধরছে প্রাচীনকালের মানুষ শুধু চাদরজাতীয় পোশাকই পরত না। জটিলভাবে তৈরি পোশাকও তারা পরতে জানত। সবচেয়ে অবাক করা আবিষ্কার হলো সুই। পোশাক বানানোর সাথে সুইয়ের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ এখন আরও জানতে পারছে যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা পোশাককে শুধু কাজের বা গা ঢাকার বস্ত্রখণ্ড হিসেবে ব্যবহার করেনি। বরং নিজের ব্যক্তিত্ব জাহির করার এবং গুরুত্ব তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবেও পোশাককে ব্যবহার করেছে। 

জনসমক্ষে বস্ত্রহীন বের না হওয়াকেই চল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। প্রাণিজগতে মানুষ ছাড়া আর কেউ কাপড় পরে না। 

কিছু কিছু প্রাণীর মধ্যে সাজসজ্জার অভ্যাস দেখা যায়। অর্কা তিমি কখনো কখনো স্যামন মাছের টুপি পরে। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জি কানে ঘাস গুঁজে রাখে। পোশাক পরার ব্যাপারকে মানুষ একদম নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। 

মানুষ কীভাবে পোশাকের ব্যবহার শুরু করল, তা বুঝতে হলে ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ বছর আগে পেছন ফিরে তাকাতে হবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের পূর্বপুরুষের গা থেকে সে সময়ই লোম ঝরে যায়। এতে তাদের ঘামের পরিমাণ কমে যায়। আফ্রিকার গরম এবং শুকনা আবহাওয়ায় যা মানুষের আদি পুরুষকে টিকে থাকার সহায়তা জোগায়। 

সমস্যা দেখা দিল যখন জলবায়ু ঠান্ডা হলে এল। অন্যদিকে মানুষও শীতল জায়গায় স্থানান্তর করল। এবারে শরীরকে গরম রাখার প্রয়োজন দেখা দিল। আজকের মানুষের পূর্বপুরুষ সে সময় গা গরম রাখার উপায় বের করছিল। গিলিগান বলেন, প্রাচীন সেকালের কোনো পোশাক টিকে থাকেনি বা মানুষ তার খোঁজ এখনো পায়নি। কিন্তু আজকের মানুষের কাছে পরোক্ষ প্রমাণ রয়ে গেছে। 

পাথরের তৈরি কিছু যন্ত্রপাতির আলামত দেখে বোঝা যাচ্ছে যে মানুষ পোশাক পরার অভ্যাস রপ্ত করেছে। প্রায় ৫ লাখ বছর আগের হাইড স্ক্রাপার বা ছাল ছিলানোর যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। পশুর ছাল বা চামড়া পরিষ্কার করার কাজে এসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। চামড়া বা পশুর ছাল তুলে পোশাক বানানোর জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হতেই হবে। এসব যন্ত্রপাতি যে সময়ে পাওয়া যায়, সে সময় পৃথিবীর জলবায়ুর বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘটছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৫ থেকে ৪ লাখ বছর আগে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন জলবায়ু পরিবর্তনের সময়টিতে পাথরের এমন সব যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে; যা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এ মন্তব্য ফ্রান্সের বোরদো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্সিসকো দ্য এরিকার। 

মানুষের আদি পুরুষ তখনো নিয়মিত পোশাক পরা শুরু করেনি। গরম আবহাওয়ার তুলনায় শীতল আবহাওয়ার অঞ্চলে ছাল ছিলার যন্ত্রপাতি বেশি পাওয়া গেছে। মনে করা হয়, আবহাওয়ার প্রয়োজনে মানুষ গায়ে গরম পোশাক চাপাত। গিলিগান আরও বলেন, আবহাওয়া অনুক'লে থাকলে আদি মানুষ হয়তো বস্ত্রহীনই থাকত। অর্থাৎ শুধু প্রয়োজনেই পোশাক পরার চল ছিল। এমন দাবি করা হয়। 

ভেনাস, ভিলেনডর্ফ

পোশাক পরার আরও আলামত রয়েছে পশুর হাড়ে। চামড়া ছিলার সময় এতে আঁচড় বা কাটার দাগ পড়েছে। মরক্কোর কন্তেবাদিয়ে গুহায় এমন হাড় পাওয়া গেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে ৯০ হাজারের বেশি বছর আগে চামড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। গ্রিসে সম্ভবত নিয়ান্ডারথাল সময়কার একটি শিশুর পায়ে ছাপ পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগে মানুষ জুতা পায়ে দিত। আলামত হিসেবে এরপর আসছে উঁকুনের কথা। জেনেটিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাথার উঁকুনই রূপান্তরিত হয়ে কাপড়চোপড়ের আঁকড়ে থাকার উঁকুনে পরিণত হয় ৮৩ হাজার বছর আগে। এমনকি ১ লাখ ৭০ হাজার বছর আগেও হতে পারে এ রূপান্তর। প্রাচীন মানুষের কোনো কোনো গোষ্ঠী তার আগে পোশাক পরা শুরু করেছে বলে ধারণা। উঁকুনকে বেঁচে থাকার জন্য তিন থেকে চার দিন পরপর মানুষের রক্ত চুষতে হয়। গিলিগান বলেন, উঁকুন প্রজাতিতে এ পরিবর্তনে আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, তত দিনে প্রাচীন মানুষ নিয়মিত কাপড়চোপড় বা পোশাক পরতে শুরু করেছে।

প্রথম দিকের পোশাক-আশাক সম্ভবত ঢিলেঢালা আলখাল্লা ধরনের এবং টুপিজাতীয় কিছু ছিল। এ জাতীয় পোশাক বানানো সোজা, কিন্তু ঠান্ডা বেশি পড়লে গা ভালোভাবে গরম করতে পারে না। প্রায় ৭৫ হাজার বছর আগে কাপড় বানানোর ধারা পরিবর্তন হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকায় গত দুই দশক ধরে কিছু বিরল যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা গেছে। নতুন ধাঁচের এ যন্ত্রকে 'সুই' বলা যেতে পারে। হাড়ের তৈরি এ যন্ত্রের কল্যাণে সেলাই করা সম্ভব হয়ে ওঠে। গায়ে আঁটসাঁট কাপড়চোপড় বা পোশাক বানানোর পথ এভাবেই খুলে যায়। সবচেয়ে পুরোনো 'সুই' পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লম্বস গুহায়। ব্যবহারের চিহ্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেছে, ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সুন্দরভাবে শুকিয়ে উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করা পশুর নরম চামড়া সেলাই করার জন্য এ জাতীয় 'যন্ত্র' ব্যবহার করা হতো। ৪৭,০০০ বছর আগের অস্ট্রেলিয়ার কার্পেন্টার্স গ্যাপে এবং ৪৫,০০০ বছর আগের ইউরোপে একই ধরনের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এর পর থেকে 'সুই-যন্ত্র' সেখানকার মানুষের সাধারণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

মানুষ আরও ভালো করে আঁটসাঁট বা মানানসই কাপড়চোপড় তৈরি করতে শুরু করে তার আলামত পাওয়া যায় ২০২৩ সালে। স্পেনে ৩৯ হাজার বছরের পুরোনো একটি হাড়ের খণ্ড পাওয়া যায়। চামড়ায় ছিদ্র করার কাজে এ হাড়কে তক্তা হিসেবে ব্যবহার করা হয়তো হতো। একই প্রক্রিয়া আজও জুতার কারিগরেরা ব্যবহার করে। চামড়া ছিদ্র করে তার মধ্য দিয়ে সুতা ঢুকিয়ে সেলাইয়ের কাজ করা হয়।

এ প্রযুক্তি পোশাক-আশাককে শুধু মানানসই করতেই সহায়তা করেনি, বরং একাধিক স্তরের কাপড়চোপড় তৈরি করা সম্ভব করে তুলেছিল। অর্থাৎ অন্তর্বাস তৈরির সূচনা এভাবেই হয়, ধারণা। কাপড়চোপড় গায়ে দিয়ে উষ্ণ থাকার বিদ্যা মানুষকে টিকে থাকার লড়াইয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। ৪৫ হাজার বছর আগে ইউরোপে আসার পরও কেন হোমো স্যাপিয়েন্স টিকে যায়, অন্যদিকে ৪০ হাজার বছর আগে কেন নিয়ান্ডারথালরা নির্বংশ হয়ে যায়, তারও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।  

৩৪,০০০ বছর পুরোনো সমাধির কঙ্কালের গায়ে পাওয়া পোশাকের পুঁতি।

কানাডার সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক কোলার্ড এবং তার গবেষক দল দেখতে পেয়েছেন, নিয়ান্ডারথালদের আবাসন এলাকায় বাইসন, হরিণ বা ভালুকের মতো ঘন পশমযুক্ত প্রাণীর হাড়গোড় তেমন পাওয়া যায়নি। হোমো স্যাপিয়েন্সরা বেজি বা কুকুরজাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে সংগৃহীত নানা ধরনের পশমওয়ালা চামড়া ব্যবহার করত। গরম কাপড়চোপড় বানাতে এ জাতীয় চামড়ার জুড়ি নেই। কিন্তু ও কাজটি তেমনভাবে করেনি নিয়ান্ডারথালরা। কোনো কোনো গবেষকের ধারণা, আদৌ পোশাক পরত না নিয়ান্ডারথালরা। কালেভদ্রে হয়তো চাদর বা টুপিজাতীয় কাপড়চোপড় পরত। এমন পোশাক দিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডাকে ভালোভাবে ঠেকানো সম্ভব না।

এ পর্যন্ত কাপড়চোপড়ের ব্যবহার শুধু প্রয়োজনের মধ্যেই সীমিত ছিল। বস্ত্র পরিধানের এ ধারা কী করে ফ্যাশনে রূপ নিল, এবারে তা নিয়ে ভাবা যাক। পোশাক গায়ে চড়াবার অনেকে আগে থেকেই মানুষের মধ্যে সাজসজ্জা বা অলংকরণের চল ছিল। আফ্রিকায় ছিদ্রওয়ালা শামুকের খোল পাওয়া গেছে। এই আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে কমসে কম ১ লাখ ৪২ হাজার বছর আগে মানুষের মধ্যে গলার হারজাতীয় অলংকার ব্যবহারের চল ছিল। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে গায়ে ট্যাটু করা, দাগ কাটা এবং প্রাকৃতিক রঞ্জক লাল পোকার ব্যবহারের ছড়াছড়ি ছিল। সাজসজ্জা বা ফ্যাশনের ভাবধারা আদি যুগের মানুষেরও ছিল। 

ফ্যাশনের পথে ভ্রমণের জন্য চিন্তার বিকাশের বদলে প্রযুক্তির উন্নয়নের দরকার ছিল। প্রযুক্তির এ দরজা খুলে দেয় সুই। ময়মনসিংয়ের লোককাহিনি কাজলরেখায় চোখের সুই খোলার পর পৃথিবীর আলো দেখতে পায় কাজলরেখা। ফ্যাশন জগতের আলো-ধাঁধানো ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয় হাড়ের সুই উদ্ভাবনের সূত্র ধরে। 'সুই কয় চালুনিরে তুই কেন ছেদা' বলে বাংলা প্রবাদে যতই মশকরা করি না কেন। এই ছেদা বা ছিদ্রই সুইকে করে তুলেছে সভ্যতা এবং ফ্যাশনের হাতিয়ার। আদিকালের প্রাথমিক যুগের সুইয়ে ছিদ্র থাকত না; ছিল সুচালো যন্ত্রবিশেষ। ছিদ্রওয়ালা সুই তৈরি করার বিদ্যা প্রথম হাসিল করেছিল ৪০ হাজার বছর আগে। সাইবেরিয়ার দেনিসোভা গুহায় এর নমুনা পাওয়া গেছে। এ জাতীয় সুই তখনো খুবই বিরল। ২৩ থেকে ১৯ হাজার বছর আগে বরফযুগের হাড় জমানো ঠান্ডা জেঁকে বসতে শুরু করলে এ জাতীয় সুইয়ের দেখা মিলতে থাকে। চীনে ছিদ্রওয়ালা সুই আবিষ্কৃত হয়েছে আলাদাভাবেই। প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে। প্রাচীনকালের এসব সুইয়ের মধ্যে মানে উন্নত কোনটি, এমন প্রশ্ন মনে হতেই পারে। হ্যাঁ, সবচেয়ে মানে উন্নত সুই বানানোর কৃতিত্বের দাবিদার উত্তর আমেরিকায় প্রথম আসা মানুষগুলোর। তাদের হাড় জমানো শীতের বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে উষ্ণ আরামদায়ক পোশাক-আশাক তৈরিতে লেগে থাকতে হয়েছিল।

প্রস্তর যুগের শামুকের পুঁতি প্রাচীন ফ্যাশনের সূচনার প্রমাণ দেয়।

সুই নিয়ে নতুন এক গবেষণা চালিয়েছেন গিলিগান, দেরিকোসহ অন্যান্য গবেষক। সুই কেন আবিষ্কার হলো–গবেষণার প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে নতুন এক দিক। 

তাদের মতে, পোশাক-আশাক বানানোর জন্যই শুধু সুই ব্যবহার হয়নি। বরং পোশাকের সজ্জা বাড়ানোর কাজেও লেগেছে সুই। সুইয়ের পেছনে সুতা লাগিয়ে নকশা (এমব্রয়ডারি) করে, পুঁতি, শামুকের খোলস এবং পালক লাগিয়ে দিয়ে পোশাককে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর অবকাশ তৈরি হয়। নিছক গাত্রাবরণ নয়, বরং পোশাককে নিজ ব্যক্তিত্ব প্রকাশের নজরকাড়া মাধ্যমও করে তুলে এই সুই।

পোশাকের সজ্জা নিয়ে অসাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি হয়েছে মস্কোয়। মস্কোর কাছে সুঙ্গির অঞ্চলে ৩৪ হাজার বছর আগের এক সমাধিস্থলে পাওয়া গেছে একজন পুরুষ এবং দুই শিশুর সমাধি। ম্যামথের দাঁত থেকে বানানো হাজার হাজার পুঁতি তাদের দেহাবশেষের কাছে পাওয়া গেছে। গিলিগান জানান, এসব পুঁতি এমনভাবে সাজানো ছিল যে অনায়াসেই বোঝা যায়, জামা, হাতার অংশ এবং প্যান্টের ওপর সেলাই করা ছিল এসব। 

এই আলামত প্রমাণ করে, পোশাকসজ্জা আদিকালের সেই সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাশাপাশি স্পষ্ট ও বিরল প্রমাণ তুলে ধরে যে প্রাচীন যুগের সেসব মানুষ শুধু গা গরম রাখার জন্য নয়, বরং পোশাককে সুন্দর করার জন্যও সময় এবং শ্রম ব্যয় করত।

উন্নত মানের সুইকে সাংস্কৃতিক অগ্রগতির বড় নিয়ামক হিসেবে তুলে ধরেন গিলিগান। প্রাচীন কালের সুইগুলো প্রমাণ করছে, শীত থেকে শুধু আত্মরক্ষাই নয়, বরং সামাজিকভাবেও গুরুত্বের হয়ে উঠেছিল পোশাক-আশাক। এর আগে মানুষ খালি ত্বককে রঙিন করেছে, আঁচড় কেটেছে এবং ট্যাটু এঁকেছে। এর মাধ্যমে শরীরকে সাজিয়ে তুলেছে। 

ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্রিল নোয়েলের মতে, পোশাক-আশাক মানুষকে শুধু ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার গাত্রাবরণ হয়ে ওঠেনি, আত্মপরিচয় তুলে ধরার আভরণও হয়ে উঠেছে। অপরিচিত মানুষের কাছে পোশাকই তার জাতিগত গোষ্ঠী, সামাজিক মর্যাদা এবং এমনকি ভাষার কথা জানান দিত। গিলিগান মনে করেন, তীব্র ঠান্ডার যুগে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪০ হাজার থেকে ২০ হাজার বছর আগে পোশাক ইউরেশিয়ায় সামাজিক আবশ্যক হিসেবে দেখা দেয়। প্রাচীন সেই কালের মানুষ শুধু চামড়া দিয়েই পোশাক বানাত না। পশম এবং উদ্ভিদজাত তন্তু থেকেও বস্ত্র বানানোর কৌশল রপ্ত করেছিল। এমন বিদ্যা হয়তো খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ হাজার বছর পূর্বে মানুষের অর্জন করার সম্ভাবনাও রয়েছে। 

বস্ত্রের উদ্ভবের পদ্ধতি বা সময়কাল সম্পর্কে ঠিকভাবে কিছু জানা যায় না। কিন্তু নিয়ান্ডারথাল মানুষ সুতা তৈরি করতে পারত। চেক প্রজাতন্ত্রের মোরাভিয়া থেকে পাওয়া চীনা মাটির ছাপ থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ হাজার বছর আগেই হোমো স্যাপিয়েন্সরা বয়ন করা পোশাক-আশাক ব্যবহার করত। 

হাড়ের সূচ, ব্রিটিশ মিউজিয়াম।

আবার ভেনাসের মূর্তিগুলোর কথায় ফিরে আসছি। এসব মূর্তি প্রাচীন জগতের পোশাক-আশাক নিয়ে বিস্তর তথ্য তুলে ধরেছে। ভিলেনউফের ভেনাসের দেহ বস্ত্রাবৃত ছিল। অন্যান্য ভেনাসের পরনে ছিল চামড়াজাত পোশাক। কোনো কোনো মূর্তিতে পুরো পোশাকের পাশাপাশি মস্তকাবৃত রয়েছে, দেখা গেছে। এসব মূর্তি উজ্জ্বল লাল, নীল ও সবুজ রঙে রাঙানো ছিল। অর্থাৎ সেই প্রাচীনকালে কাপড়চোপড় শুধু প্রয়োজনেই ব্যবহার হতো না, বরং তাতের রংও করা হতো, এমনটিই ধারণা। এ ধারণাকে পোক্ত করেছে ৩০ হাজার বছর আগের জর্জিয়ায় পাওয়া সুতা। এসব সুতা ধূসর, ফিরোজা এবং গোলাপি রঙের ছিল। নোয়েল বলেন, এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক দুনিয়া সম্পর্কে গোটা ধারণাই পাল্টে গেছে। 

এসব গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রস্তর যুগের মানুষকে নিয়ে এতকালের গড়ে ওঠা ধারণাগুলো বড় ধরনের ঝাঁকি খায়। নোয়েল বলেন, পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বের হয়ে এল, সুদূর অতীতের মানুষের মধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা ছিল। ছিল তাদের দূরদর্শিতা এবং নিজ অর্জিত জ্ঞানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে দেওয়ার বিদ্যা। প্রযুক্তি এবং দক্ষতার সফল মিলনের মধ্য দিয়ে পোশাক বা বস্ত্র তৈরির বিদ্যা গড়ে ওঠে। একই সাথে রং করা এবং নান্দনিক ভাবনাকে তারা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিয়ে গেছে। জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার এভাবেই গড়ে উঠেছিল। 

সভ্যতা চাকার ওপর ঘোরে বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু এ চাকাও পোশাক বানানোর প্রযুক্তির হাত ধরে গড়িয়ে এসেছে। কোনো কোনো গবেষক বলেন, পোশাক তৈরির দক্ষতা প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অধিকৃত ফিলিস্তিন নামের যে ভূখণ্ডে ইসরায়েল নাম জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ভূখণ্ডে খ্রিষ্টপূর্ব ১২ হাজার বছর আগে গোলাকার পাথরের বস্তুগুলো সম্ভবত সুতা কাটার কাজে লাগানো হতো। এই প্রযুক্তির হাত ধরেই খ্রিষ্টপূর্ব ৬ হাজার বছর আগে প্রথম চাকা উদ্ভাবনের পথকে দেখায়। 

হাড় কাঁপানো হিমেল আবহাওয়ার হাত থেকে প্রাণরক্ষার উপায় হিসেবে পোশাককে গায়ে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল প্রাচীনকালের মানুষ। সময় এ পোশাককে নিজ পরিচয়ের প্রতীক করে তোলে। ছিদ্রযুক্ত সুইয়ের আবিষ্কারই ছিল সত্যিকার পরিবর্তনের সূচনাকারী। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাশন ভাবনার শিকড় বিস্তার লাভ করতে থাকে। প্রত্ন-গবেষণায় উঠে আসা নিত্যনতুন তথ্য-আলামত সাক্ষ্য দিচ্ছে, কীভাবে প্রয়োজন, সৃজনশীলতা ও সামাজিক পরিচয়ের রসায়নে মানুষ ফ্যাশনের জন্ম দেয়। এ এমন এক গল্প, যা অন্তহীন, এখনো চলছে।  

 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / ভেনাস / পোশাক / ফ্যাশন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে
  • সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার
  • এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না
  • নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর
  • যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রস্তাবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি!
  • যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

Most Read

1
অর্থনীতি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে

2
অর্থনীতি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার

3
অর্থনীতি

এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

4
বাংলাদেশ

নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর

5
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রস্তাবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি!

6
অর্থনীতি

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net