Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 02, 2025
নিরামিষাশী: হান কাং

ইজেল

অনুবাদ: আন্দালিব রাশদী
13 October, 2024, 01:30 pm
Last modified: 13 October, 2024, 01:29 pm

Related News

  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • গোধূলিবেলায়
  • দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক সংকটে নোবেলজয়ী হান কাং ‘মর্মাহত’
  • এআই যুক্ত নতুন ফিচার আনছে মাইক্রোসফট, নকল করা যাবে কণ্ঠস্বরও
  • যন্ত্র বনাম সাহিত্যিক: অনুবাদ যুদ্ধের শেষ সীমান্ত

নিরামিষাশী: হান কাং

অনুবাদ: আন্দালিব রাশদী
13 October, 2024, 01:30 pm
Last modified: 13 October, 2024, 01:29 pm

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

[হান কাং ২০২৪ সালের  নোবেল সাহিত্য পুরস্কার  পেয়েছেন। ২০১৬ সালের ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পেয়েছিলেন। তার জন্ম ২৭ নভেম্বর ১৯৭০, দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াঙ্গজু শহরে। তার বাবা হ্যান সেউং -উনও একজন ঔপন্যাসিক, তবে লিখে সংসার চালানোর মতো সামর্থ্য তিনি অর্জন করেননি। হান কাং কবিতা দিয়ে শুরু করলেও কথাসাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। 'দ্য ভেজেটারিয়ান' তাকে এনে দিয়েছে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজসহ অনেক পুরস্কার। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'এ কনভিক্টস লাভ কনভালেসেন্স', 'হিউম্যান অ্যাক্টস', 'ফ্রুটস অব মাই ওমেন', 'গ্রিক'। 
'দ্য ভেজেটারিয়ান' পরাবাস্তববাদী দক্ষিণ কোরীয় উপন্যাস। উপন্যাসটির সূচনাপর্বের একাংশ অনূদিত হয়েছে ইজেলের পাঠকদের জন্য।]


কাহিনির কথক একজন মাঝারিগোছের কর্মচারী। নাম চেয়ং। তার স্ত্রী ইয়ং-হি তার কাছে বরাবরই সব দিক থেকে অপাঙ্ক্তেয় একজন নারী। তারপরও তার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে ব্রা ব্যবহারে অনীহা। কখনো ব্রা পরতে বাধ্য হলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই হুক থেকে স্ট্র্যাপ আলগা করে ফেলে। কাজটা ঠিকই করেছে এটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সে বলে, ব্রা যেভাবে তার স্তন চেপে ধরে রাখে, তা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া চেয়ং তো আর কখনো ব্রা পরেনি যে এর চাপ কেমন তা বুঝবে। পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। তারপর একদিন খুব ভোরে চেয়ং আবিষ্কার করে হাড়কাঁপানো শীতে রাতের হালকা-হালকা পোশাক পরে ইয়ং-হি রান্নাঘরে ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 

আমার স্ত্রী নিরামিষাশী হয়ে যাওয়ার আগে আমি সব সময়ই ভাবতাম সব দিক থেকেই সে সম্পূর্ণ অনুল্লেখ্য একজন মানুষ। খোলামেলাভাবে বলতে গেলে এটাই বলতে হয়, তার সঙ্গে যখন আমার প্রথম দেখা, আমি তার প্রতি একটুও আকর্ষণ বোধ করিনি। মাঝারি উচ্চতা, ববকাট চুল, তেমন বড়ও না ছোটও না; জন্ডিসগ্রস্ত গায়ের ত্বকে অসুস্থতা দৃশ্যমান; গালের হাড় বেশ স্পষ্ট দেখা যায়, তার দুর্বল ও হলদেটে অস্বাস্থ্যকর অবয়ব আমার যা জানার তা বলে দেয়। 

আমি যে টেবিলে অপেক্ষা করছিলাম, সে যখন এদিকটায় এগিয়ে আসে তার জুতার দিকে নজর না দিয়ে আমি পারিনি—যতটা সাদাসিধে কালো জুতা কল্পনা করা যায়, এটা ঠিক তা-ই। আর তার হাঁটার ভঙ্গি দ্রুতও নয় শ্লথও নয়; লম্বা পদক্ষেপ নয় আবার ছোট পা ফেলে এগোনোও নয়।

যা-ই হোক যদি বিশেষ কোনো আকর্ষণ না থাকে, আবার অপছন্দ করার বিশেষ কারণও না থাকে, তাহলে আমাদের দুজনের মধ্যে বিয়ে না হওয়ার কথা নয়। 

এই নারীর নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিত্বে আমি সতেজ কিছু পাইনি, মুগ্ধকরও কিছু নেই কিংবা বিশেষ পরিশীলিত কিছুও নেই। আর তাই সে আমার জন্য একবারে জলকাদার মতো জুতসই হয়ে উঠেছে। তাকে জয় করার জন্য কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক ভণিতার প্রয়োজন হয় না। 

ফ্যাশন ক্যাটালগে স্মার্ট পোজ দেওয়া নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা মানুষের সঙ্গে সে আমাকে তুলনা করতে পারে, এমন কোনো উদ্বেগ আমার নেই।

আমাদের সাক্ষাতের দিনগুলোতে আমার পৌঁছতে দেরি হলেও সে উত্তেজিত হয়নি। 

মধ্যকুড়িতে উঁকি দেওয়া আমার ভুঁড়ি, আমার হাড্ডিসার পা, হাতের নিচের অংশ শত চেষ্টার পরও যেন মাংস লাগে না, সেই সঙ্গে আমার শিশ্নের আকার নিয়ে আমার লালিত হীনম্মন্যতা—সবকিছু নিয়ে আমি নিশ্চিত থাকতে পারি এসব নিয়ে সে যতক্ষণ আছে, আমার অস্থিরতার কারণ নেই।

আমি বরাবরই জীবনের মধ্যপথ অনুসরণের জন্য ঝুঁকে আছি। আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার চেয়ে দু-তিন বছরের ছোটদের বস হতে চাইতাম। আমার বয়সীদের সঙ্গে না মিশে আমি তাদের রিং লিডারের ভূমিকা পালন করতে পারতাম; পরে আমি এমন একটা কলেজ বেছে নিলাম, যার ছাত্রবৃত্তির অর্থ আমার প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত। 

ছবি: সংগৃহীত

শেষ পর্যন্ত আমি চাকরির জন্য এমন একটা কোম্পানি বেছে নিলাম যে কোম্পানিটা ছোট আকারের। তার মানেই হচ্ছে আমার অনুল্লেখ্য দক্ষতাকে তারা মূল্য দেবে এবং আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের জন্য মাসকাবারিতে যথেষ্ট মাইনে দেবে।

কাজেই এটাই স্বাভাবিক যে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সাদামাটা নারীকে বিয়ে করব। আর যেসব নারী সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, দারুণ আবেদনময়ী, ধনী পরিবারের কন্যা—তাদের কেউ হলে আমার এই সচেতন সাজানো অস্তিত্বকে বাধাগ্রস্ত করত। 

আমার প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সে একেবারেই সাধারণ স্ত্রীতে পরিণত হলো। অরুচিকর চপলতা এড়িয়ে সে দিনের কাজ চালিয়ে যেতে লাগল।

প্রতিদিন ভোর ছয়টায় সে ঘুম থেকে ওঠে, ভাত রান্না করে ও স্যুপ বানায়, সঙ্গে সাধারণত খানিকটা মাছ থাকে। তার সেই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে যেনতেন পার্টটাইম কাজ করে তার নিজের পরিবারের আয়ের সঙ্গে কিছুটা যোগ করত। যে কম্পিউটার গ্রাফিকস কলেজে সে এক বছর পড়েছে, সেখানে সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে শেষ চাকরি করেছে, আর কার্টুন আর কমিক স্ট্রিপ প্রকাশনার হয়ে কমিক বাবলে কথোপকথন বসানোর যে কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছে, তা বাসায় থেকেই করতে পারত।

আমার স্ত্রী কম কথা বলা একজন নারী। আমার কাছে তার কোনো কিছু চাওয়া একটি দুর্লভ ঘটনা। আমি যত দেরিতেই বাসায় ফিরি না কেন, এটা নিয়ে কখনো ফ্যাসাদ বাধাত না। এমনকি কখনো যদি আমাদের দুজনের ছুটি একই দিনে হতো, সে কখনো বলেনি, চলো একসঙ্গে কোথাও ঘুরে আসি। আমি যখন টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়ে আলস্যে বিকালটা পার করতাম, সে দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে পড়ে থাকত। বই পড়ে সময় কাটানোর সম্ভাবনাই বেশি। এটাই আসলে তার একমাত্র শখ। বই পড়া কেন তার এত প্রিয়, এর কারণ উদ্ঘাটন করা না গেলেও সে এতে নিজেকে পুরো ডুবিয়ে রাখতে পারে। বই পড়া আমার কাছে এত নিরস ও বিরক্তিকর যে প্রচ্ছদের ভেতরে কী আছে, পাতা উল্টে তা-ও আমার দেখতে ইচ্ছে করে না। কেবল খাবার সময় সে দরজা খোলে এবং নিঃশব্দে খাবার তৈরি করতে এগিয়ে যায়। 

এ ধরনের স্ত্রী আর এ ধরনের জীবনশৈলী এটা নিশ্চিত করে যে আমার দিনগুলো উত্তেজনাপূর্ণ হবে। আসলে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্য দিকে যেসব নারীর ফোন সারা দিনই বাজে, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর ফোন, সে রকম একজন যদি আমার স্ত্রী হতো, যাদের ন্যাকামিতে তাদের স্বামীরা বিরক্ত, বিশেষ করে সেই স্বামীদের যাদের ঝগড়া ও চিৎকার করতে হয়, আমার সে রকম নয়, তার কাছে আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কারণ, সে নিজেকে এসব থেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।

কেবল একটা ব্যাপারে আমার স্ত্রীকে অস্বাভাবিক মনে হয়ে থাকে, তা হচ্ছে ব্রা পরতে পছন্দ না করা। আমি তখন বয়ঃসন্ধি পেরিয়ে আসা তরুণ, আমার স্ত্রী ও আমি তখন ডেটিং করছি, আমার হাত যখন তার পিঠে রাখি, আমি তার সোয়েটারের নিচে ব্রার স্ট্র্যাপ অনুভব করলাম না আর এর মানে কী যখন বুঝতে পারলাম, আমার শরীর তখন বেশ জেগে উঠেছে।

ব্রা না পরে সে আসলেই আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে কি না, তা বোঝার জন্য আমি তার চোখের দিকে দু-এক মিনিট তাকিয়ে থেকে মনোভাব বোঝার চেষ্টা করলাম। আমার এই পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ফলাফল হচ্ছে, ব্রা না পরে সে আমাকে কোনো ধরনের সিগন্যালই দেয়নি। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এটা কি তার অলসতা নাকি ডাহা উদ্বেগহীনতা? আমি এর মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝিনি। এটা এমনও নয় যে তার একজোড়া সুন্দর সুগঠিত স্তন রয়েছে, যা ব্রা ছাড়া বেশ মানিয়ে যায়। আমি বরং তার জন্য চাইতাম সে পুরু প্যাড লাগানো ব্রা পরে আমার সঙ্গে ঘুরতে বের হোক, যেন পরিচিতজনের সামনে আমি মুখ বাঁচাতে পারি।

এমনকি গ্রীষ্মকালে আমি তাকে কিছু সময়ের জন্য ব্রা পরতে রাজি করাই, বাসা থেকে বেরোনোর এক মিনিট পরই ব্রার হুক খুলে ফেলে। এই হুক খোলা ব্রা-ই বরং তার পাতলা হালকা রংয়ের শার্টের নিচে আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে, কিন্তু এ নিয়ে তার এতটুকুও উদ্বেগ নেই। আমি তাকে বকা দিতে চেষ্টা করি, এই গুমোট গরমে তাহলে ব্রার বদলে সেমিজ পরার নসিহত করি। সে এ কথা বলে তার কৃতকমের্র যৌক্তিকতা দেখানোর চেষ্টা করল: যেভাবে ব্রা তার স্তন চেপে ধরে, তা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, তা ছাড়া আরও বলল, তুমি তো আর কখনো নিজে ব্রা পরোনি, এটা যে কী রকম চাপ দেয়, তা তুমি বুঝবে না।

তার কথা বহু নারী ব্রা পরে না, তাদের কারোরই ব্রার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই। ব্রার ব্যাপারে তার অতি সংবেদনশীলতার কথা শুনতে গিয়ে আমি সন্দিহান হয়ে উঠি। আর অন্যান্য সব দিক থেকে আমাদের দাম্পত্য জীবন বেশ চলে যাচ্ছে।

আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আর যেহেতু কেউ কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসিনি, সে কারণেই ক্লান্ত কিংবা বিরক্ত হওয়ার মতো পর্যায় আমরা এড়িয়ে যেতে পেরেছি, তা না হলে দাম্পত্য জীবন একটি কাঠগড়ার বিচারের মতো মনে হতো। 

যতক্ষণ না আমাদের নিজেদের একটি নিরাপদ বাসস্থান হচ্ছে, আমরা বাচ্চা নেওয়ার কাজটা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কেবল গত শরতে আমাদের নিজেদের একটা থাকার জায়গা হয়েছে। কখনো আমি অবাক হয়ে ভেবেছি, আমি কি কখনো বাচ্চার কলকল কণ্ঠে ডাডাডাডা শুনতে পাব? তার মানে বাচ্চা আমাকে ডাকছে।

ফেব্রুয়ারির এক ভোরে আমার স্ত্রীকে দেখলাম রাতের পোশাকে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে, তার আগে আমি কখনো ভাবিনি আমাদের জীবনে কী ভয়াবহ একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

'তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ?'

আমি বাথরুমের আলো জ¦ালতে গিয়ে থমকে যাই। তখন ভোর চারটে হবে, প্রচণ্ড তৃষ্ণা নিয়ে জেগে উঠি—ডিনারে আমি আধা বোতল সজু পান করেছিলাম, তার মানে সচেতন অবস্থায় ফিরতে আমার স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লাগছিল। আমি জিজ্ঞেস করি, 'হ্যালো, তুমি কী করছ?'

এমনিতেই খুব ঠান্ডা কিন্তু আমার স্ত্রীকে যেভাবে দেখলাম, তা আরও বেশি শীতল করা। তাতে অ্যালকোহলজনিত ঝিমুনি দ্রুত কেটে যায়। সে ফ্রিজের সামনে নিশ্চল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখমণ্ডল আঁধারে ডুবে আছে, তাই তার অভিব্যক্তি আমি বুঝে উঠতে পারিনি, কিন্তু যেসব অভিব্যক্তির সম্ভাবনার কথা আমার মনে পড়ছে, সব আমাকে আরও বেশি আতঙ্কিত করে তোলে। তার পুরু স্বাভাবিক কালো চুল ফুলেফেঁপে উস্কুখুস্কু হয়ে আছে, তার পরনে বরাবরের মতো গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা সাদা নাইট-ড্রেস।

এমন শীতের রাতে আমার স্ত্রী সাধারণত দ্রুত কার্ডিগান গায়ে চাপিয়ে মখমলের চটির খোঁজ করত। কতক্ষণ ধরে সে এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, নিশ্চল, খালি পায়ে গ্রীষ্মকালের রাত পোশাকে! রডের মতো ঋজু হয়ে আছে, আমার বারবার করা প্রশ্নের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। 

তার মুখ আমার ঠিক উল্টো দিকে ঘোরানো, অস্বাভাবিকভাবে সে দাঁড়িয়ে আছে, যেন একধরনের প্রেতাত্মা; ভূমির ওপর দাঁড়ানো। তাহলে হচ্ছেটা কী? সে যদি আমার কথা শুনে থাকে, তাহলে কি সে স্লিপওয়াক করছে—ঘুমের ঘোরে বেরিয়ে এসে এখানে ঘুমোচ্ছে। আমি তার দিকে এগিয়ে যাই, ঘাড় ঘুরিয়ে তার চেহারাটা একবার দেখার চেষ্টা করি। 

'তুমি এভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? কী হচ্ছে?'

আমি যখন তার কাঁধে হাত দিই, তার এতটুকুও প্রতিক্রিয়া না হওয়ায় আমি অবাক হই। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে আমি খুব স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছি, আর এসব সত্যিই ঘটছে। আমি শোবার ঘর থেকে বেরোনোর পর থেকে সবকিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছি—সে কি করছে জিজ্ঞেস করেছি, তার দিকে এগিয়ে গেছি। সম্পূর্ণ সাড়াহীনভাবে যেন সে নিজস্ব পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে—এভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। 

কদাচিৎ এমন ঘটেছে। মধ্যরাতের টিভি নাটকে সে এমনভাবে ডুবে আছে যে আমি যে ঘরের ভেতরে ঢুকেছি টেরই পায়নি কিন্তু ভোর চারটায় ঘন কালো রান্নাঘরে ফ্রিজের সাদা দরজার পাণ্ডুর আভায় সম্পূর্ণ মনোযোগ ডুবিয়ে রাখার মতো কী আছে?

'এই শুনছ?'

অন্ধকার থেকে তার শরীর সাঁতরে আমার দিকে এগোয়। আমি তার চোখের দিকে তাকাই। উজ্জ্বল, তবে উদ্বিগ্ন নয়। ধীরে ধীরে তার ঠোঁট আলগা হয়, 'আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।'

তার স্বর বিস্ময়কর রকম স্পষ্ট।

'একটা স্বপ্ন? কি বলছ? এখন কটা বাজে তোমার ধারণা আছে?'

ঘুরতেই তার শরীরটা আমার মুখোমুখি হলো, তারপর ধীরে ধীরে খোলা দরজা গলে শোবার ঘরে চলে গেল। সে ভেতরে গিয়ে পা বাড়িয়ে আলতো করে দরজাটা ঠেলে দিল। আমি অন্ধকার রান্নাঘরে একা রয়ে গেলাম। অসহায়ের মতো দেখলাম তার ফিরে যাওয়া দেহকাঠামো হাঁ করা দরজা গিলে ফেলেছে। 

আমি আলো জে¦লে বাথরুমে যাই। এই হিমশীতল আবহাওয়া বেশ কদিন ধরেই চলছে, চারদিকে লাগাতার ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড; আমি মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে গোসল করেছি, কাজেই প্লাস্টিকের স্লিপার তখনো শীতল ও সিক্ত। নির্মম মৌসুমের নৈঃসঙ্গ কেবল অনুভব করাতে শুরু করেছে, গোসলখানায় শাওয়ারের ওপরের দিকে ভেনটিলেশন ফ্যানের কালো ফাটল দিয়ে, মেঝে ও দেয়ালের সাদা টাইলস চুইয়ে নৈঃসঙ্গ ভেতরে প্রবেশ করছে। 

আমি যখন শোবার ঘরে ঢুকি, ততক্ষণে আমার স্ত্রী শুয়ে পড়েছে, তার পা বুকের সঙ্গে গুটানো, নির্জনতার ভার এতই বেশি যে আমার মনে হয়েছে সেই রুমে কেবল আমিই আছি। এটা অবশ্যই আমার কল্পনা। আমি আমার নিশ্বাস ধরে রেখে একবারে স্থির হয়ে নিশ্চুপ টান টান দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার স্ত্রী যেখানে শুয়ে আছে সেখানকার নিশ্বাসের ক্ষীণতম শব্দও আমি তখন শুনতে পাচ্ছি। তারপরও কেউ একজন ঘুমিয়ে আছে, তার নিয়মিত গভীর নিশ্বাসের শব্দ তাতে নেই। আমি তার কাছে পৌঁছে যেতে পারি, আমার হাত তার উষ্ণ ত্বকের মোকাবেলা করতে পারে। কিন্তু কোনো কারণে আমি তাকে স্পর্শ করতে পারছিলাম না। শব্দ করে আমি তার কাছে যেতেও চাচ্ছিলাম না। 

পরদিন সকালে চোখ খোলার ঠিক কয়েক মুহূর্ত পরই যখন বাস্তবতা তার স্বাভাবিক শুদ্ধ অবস্থানে পৌঁছেনি, আমি লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে, সাদা পর্দার ফাঁক দিয়ে শীতের রোদ্দুর যতটা ঢুকছিল, আমি অন্যমনস্ক হয়ে সে রোদের উষ্ণতা পরিমাপ করছিলাম। আমার এই বিমূর্ত কাজের মাঝখানে, আমি দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালাম, সময়টা দেখার সঙ্গে লাফিয়ে উঠলাম, লাথি মেরে দরজা খুলে দ্রুত রুমের বাইরে চলে এলাম। আমার স্ত্রী ফ্রিজের সামনে। 'তুমি কি পাগল হয়েছে? আমাকে ডাকোনি কেন? কটা বাজে তোমার কোনো ধারণা...।'

বাক্যের মাঝখানে পায়ের নিচে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া একটা কিছু আমাকে থামিয়ে দিল। আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সে গুটিসুটি মেরে আছে, এখনো প্রচণ্ড শীতে তার পরনে রাতের পাতলা পোশাক, তার আলুথালু জটলাগা চুল মুখের ওপর দলা বেঁধে পড়ে আছে।

তার চারপাশে রান্নাঘরের মেঝে প্লাস্টিক ব্যাগ আর বায়ুনিরোধক কন্টেইনারে ঢাকা পড়ে গেছে; এগুলো এমন এলোমেলোভাবে ছড়ানো যে পায়ে না মাড়িয়ে যে কোথাও পা ফেলবে, সে রকম কোনো জায়গা নেই। পাতলা ফালি করে কেটে সাবু বানানো গরুর মাংস, শূকরের পেটের হাড়বিহীন মাংস, কালো গরুর পায়ের দুদিককার মাংস, বায়ুশূন্য ব্যাগে সামুদ্রিক স্কুইড, বহু আগে আমার শাশুড়ির গ্রাম থেকে পাঠানো ইল মাছের টুকরো, হলুদ সুতোয় বাঁধা শুকনো ব্যাঙ, এখনো খোলা হয়নি এমন প্যাকেটভর্তি মাংসের বরফজমা ডাম্পলিং, শনাক্ত করা যাচ্ছে না এমন জিনিসপত্রের অগুণতি পুঁটলি—সব ফ্রিজের গভীর ভেতর থেকে টেনে বের করা হয়েছে। খসখস শব্দ হচ্ছে। 

আমার স্ত্রী তার পাশে রাখা কালো ময়লার ব্যাগে একটি-একটি করে এগুলো ভরছে। আমি আর মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। চিৎকার করে বলি, 'তুমি কি পাগলের কাণ্ড শুরু করে দিলে?' সে ময়লার ব্যাগে মাংসের পুঁটলি ভরেই চলেছে, গত রাতেও যে রকম ছিল—আমার যে অস্তিত্ব আছে, মনে হচ্ছে এ সম্পর্কে সে ওয়াকিবহালই নয়। গরু ও শূকরের মাংস, অন্তত দুই লাখ ওয়ান মূল্যের নোনাপানির ইল মাছ।

'তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি এত সব খাবার জিনিস ফেলে দিচ্ছ কেন?' আমি দ্রুত প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্য দিয়ে তার হাতের কবজি চেপে ধরলাম। প্রচণ্ড হ্যাঁচকা টান দিতেই সে আমার ওপর পড়ে যাওয়ায় আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। আমিও কয়েক মুহূর্তের জন্য তোতলাতে শুরু করি; কিন্তু আমার ক্রোধ তাকে পরাস্ত করার মতো শক্তি এনে দিল। 

আমার হাতের চাপে লাল হয়ে যাওয়া কবজি ঘষতে ঘষতে আগের মতো একই রকম শান্ত স্বরে বলল, 'আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।' 

আবার সেই একই কথা। আমার সঙ্গে যখন সে কথা বলছে, তার অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, তখন আমার মোবাইল ফোন বেজে উঠল।

'ধ্যাৎ!'

আমি কোটের পকেটের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে থাকি। গতকাল মোবাইল ফোনসহ কোটটা সোফার ওপর ছুড়ে ফেলেছিলাম।

শেষ পর্যন্ত ভেতরের পকেটে আমার অবাধ্য ফোনটাকে ছুঁতে সমর্থ হই। ফোন তুলে নিয়ে বলি, 'আমি খুব দুঃখিত। খুব জরুরি একটা পারিবারিক বিষয় নিয়ে আটকে পড়েছি। খুব দুঃখিত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি পৌঁছাচ্ছি। আমি এখনই ছেড়ে দিচ্ছি...না, না আমি সম্ভবত তোমাকে ওটা করতে দিতাম না। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। আমি খুবই দুঃখিত। এখন আর কথা বলতে পারছি না।' 

আমি ফোন বন্ধ করে দ্রুত বাথরুমে ঢুকলাম। তাড়াতাড়ি শেভ করতে গিয়ে দুই জায়গায় কেটে ফেললাম। 

'তুমি তো আমার শার্টও ইস্তিরি করনি?' 

আমার প্রশ্নের কোনো জবাব নেই, আমি মুখে পানি ছিটিয়ে লন্ড্রির কাপড়ের ঝুড়ির ভেতর গতকালের শার্টটা খুঁজলাম। ভাগ্যিস এর ওপর তেমন ভাঁজ পড়েনি। গলার চারপাশে স্কার্ফের মতো করে টাই ঝোলানো, মোজা পরা, আমার নোটবুক ও মানিব্যাগ তুলে নেওয়াসহ আমার তৈরি হওয়া পর্যন্ত আমার স্ত্রী একবারও রান্নাঘর থেকে বাইরে আসার প্রয়োজন বোধ করেনি। আমাদের বিয়ে পাঁচ বছর হয়েছে, আজই প্রথম সে আমার নিত্যকার জিনিসপত্রগুলো এগিয়ে দেয়নি, আমাকে বিদায়ও জানায়নি।

'তুমি মানসিক রোগী হয়ে গেছ। তোমার জ্ঞান পুরোপুরি লোপ পেয়েছে।'

আমি সদ্য কেনা আঁটোসাঁটো ও অস্বস্তিকর ধরনের জুতোতে জোর করে পা গলিয়ে দিয়ে সামনের দরজা খুলে দ্রুত বেরিয়ে যাই। লিফট সর্বোচ্চ তলা পর্যন্ত যাচ্ছে কি না, দেখে নিলাম। সেখান থেকে তিন সিঁড়ি নিচে নেমে এলাম। কেবল একবারই আমি এখনই ছেড়ে দিচ্ছে এমন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে লাফিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। যদি দেখার সুযোগ হতো, দেখতে পেতাম টানেলের ভেতর অন্ধকার দরজায় আমার প্রতিবিম্ব। আমি আমার চুলের ভেতর আঙুল চালাই, টাই ঠিকঠাক করি, শার্টের ভাঁজ অপসারণ করতে চেষ্টা করি। আমার স্ত্রীর অস্বাভাবিক শান্ত চেহারা, চেহারার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ দৃঢ় কণ্ঠ আবার আমার মনে ভেসে ওঠে।

তখন সে দুবার বলেছে, 'আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।' 

আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের জানালার বাইরে অন্ধকার টানেলে তার চেহারা ভেসে উঠছে এবং সরে যাচ্ছে—এই চেহারা আমার অপরিচিত—মনে হচ্ছে আমি প্রথমবারের মতো দেখছি। আমার হাতে সময় আছে আর ৩০ মিনিট, এর মধ্যে আমার মক্কেলের কাছে আমার দেরির একটা বানোয়াট কারণ তুলে ধরে আজকের মিটিংয়ের একটা খসড়া প্রস্তাবও পেশ করতে হবে। আমার আজব স্ত্রীর এমন আজব আচরণ নিয়ে ভাবার কোনো সময় নেই।

আমি নিজেকে বললাম, যেভাবেই হোক আমাকে আজ আগেভাগে অফিস থেকে বের হতে হবে। (কিছু মনে করবেন না। নতুন পদে বসার পর থেকে আমি এক দিনও মধ্যরাতের আগে বের হতে পারিনি) আর আমার স্ত্রীর মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে শক্ত করে দাঁড় করাতে হবে। 

আমার স্ত্রী ডাইনিং টেবিলে লেটুস আর সয়াবিন বাটা, সামুদ্রিক আগাছার স্যুপ—তাতে গরুর মাংস কিংবা ভেনাস-ঝিনুক অনুপস্থিত, আর কিমচি। 

'এ কী নারকীয় কাণ্ড! তুমি কোন হাস্যকর স্বপ্ন দেখলে আর ফ্রিজের কাছে গিয়ে সব মাংস ছুড়ে ফেলে দিলে? ধারণা আছে কত টাকার মাংস?'

আমি চেয়ার থেকে উঠে ফ্রিজার খুলি। বস্তুত পুরোটাই খালি। রয়েছে কেবল মিসো পাউডার, চিলি পাউডার, বরফজমা তাজা কাঁচা লঙ্কা আর কুচি-কুচি করে কাটা রসুনের একটি প্যাকেট। 

'আমাকে শুধু ডিম ভাজি করে দাও। আজ আমি খুব ক্লান্ত। ঠিকভাবে দুপুরের খাওয়াও হয়নি।' 

'আমি ডিমগুলোও ফেলে দিয়েছি।'

'কী বললে?'

'আমি দুধও ছেড়ে দিয়েছি।' 

'এ তো অবিশ্বাস্য। তুমি কি আমাকে মাংস খেতে নিষেধ করছ?'

'ওসব আমি ফ্রিজে রাখতে দিতে চাই না। এটা ঠিক হবে না।' 

সে এমন আত্মকেন্দ্রিক কেমন করে হলো? আমি তার আনত চোখের দিকে তাকাই। স্বার্থপরের মতো সে যা ইচ্ছে তা-ই করবে, তার পছন্দের বাইরে অনেক কিছু থাকতে পারে—এটা সে মানবে না। পুরো ব্যাপারটাই অবাক করে দেয়। সে যে এমন অযৌক্তিক হবে তা কে ভেবেছিল?

'তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো এখন থেকে এ-বাড়িতে আর মাংস আসবে না?'

'হ্যাঁ, তুমি তো বাসায় কেবল নাশতাই কর। লাঞ্চ আর ডিনারে আমার ধারণা মাংস ভালোই খাও। ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, তুমি এক বেলা মাংস না খেলে মরে যাবে।' 

তার জবাব খুবই পদ্ধতিগত, তার কথা শুনে মনে হচ্ছে তার এই হাস্যকর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ যুক্তিসম্মত এবং যথার্থ। 

চমৎকার! আমার ব্যাপারটা তুমি ফয়সালা করে ফেলেছ? আর তোমার নিজের কী হবে? তুমি দাবি করছ এখন থেকে আর মাংস খাবে না?'

সে মাথা নাড়ে।

'সত্যিই নাকি? কদ্দিন পর্যন্ত?'

'আমি মনে করি সারা জীবন।'

আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি, যদিও একই সঙ্গে এটাও ভাবি, নিরামিষ খাবার আগে যেমন ছিল, এখনো এমন দুর্লভ কিছু নয়। বিভিন্ন কারণে মানুষ নিরামিষাশী হয়ে পড়ছে: যেমন বিশেষ কোনো অ্যালার্জির প্রতি তাদের জন্মগত প্রবণতা বদলাতে, কিংবা মাংস না খাওয়াটা পরিবেশবান্ধব কাজ বলে বিবেচিত।

অবশ্যই বৌদ্ধ ভান্তেরা প্রাণী হত্যায় অংশগ্রহণ করবে না—এই প্রতিশ্রুতি থেকে মাংস না খাওয়ার ব্যাপারে তাদের একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আবার মনে দাগ কাটার মতো সুন্দরী মেয়েরাও মাংস তেমন একটা গ্রহণ করে না। 

আমি মনে করি কেবল যেসব যৌক্তিক কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলানো যেতে পারে, তা হচ্ছে ওজন কমানো, কোনো শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা করা, প্রেতাত্মার রাহু থেকে মুক্ত হওয়া, বদ হজমজনিত ঘুমের ব্যাঘাত কাটিয়ে ওঠা, এ ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে স্বামীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে স্ত্রীর ডাহা একগুঁয়েমি, যেমন আমার স্ত্রী করেছে।

এমন যদি বলা হয়, মাংসের কারণে আমার স্ত্রীর কিছুটা হলেও বমির উদ্রেক হয় আমি এটা মেনে নিতে পারতাম; কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, আমাদের বিয়ের পর থেকেই সে নিজেকে একজন দক্ষ রাঁধুনি প্রমাণ করতে পেরেছে। 

তার হাতে তৈরি খাবার সব সময়ই আমাকে মুগ্ধ করেছে। এক হাতে সাঁড়াশি অন্য হাতে বড় কাঁচি—সে বুকের পাঁজরের মাংস কেটে কেটে গনগনে কড়াইতে ছাড়ত, কামড়-প্রমাণ টুকরো বানাতে তার অনুশীলন ও হাতের নড়াচড়া দক্ষতার ছাপ বহন করে। 

লবণাক্ত আদা ও সুস্বাদু শর্করার সিরাপে চুবিয়ে রাখা শূকরের পেটের নোনা মাংস তার হাতে সুঘ্রাণ ও শর্করাদগ্ধ হয়ে পরিবেশিত হতো। 

আর যে বিশেষ রান্নার জন্য তার সবচেয়ে বেশি খ্যাতি, তা হচ্ছে কালো গোলমরিচ আর তিলের তেলে ভাজা ওয়েফারের মতো সøাইস করা গরুর মাংস, যা আঠালো চালের গুঁড়োতে বেশি বেশি করে চুবিয়ে রান্না করা—চালের পিঠা কিংবা প্যানকেকে যেমন উদারভাবে আঠালো এই রসদটি ঢালা হয়। তারপর বুদ্বুদ ওঠা ঝোলে ছেড়ে দেয়। শিমের অঙ্কুর, গরুর কিমা এবং ভেজানো চাল তিলের তেলে ভেজে সে বিশেষ খাবার তৈরি করত। সে মুরগি ও হাঁসের গাঢ় স্যুপ বানাত—তাতে বড় আলুর টুকরো, মসলাদার ঝোল এবং বিভিন্ন ধরনের ঝিনুক মিশিয়ে যে সুস্বাদু খাবারটি তৈরি করত, আমি এক বসায় তিন বাটি সাবাড় করতাম। আর আমার স্ত্রী এখন আমাকে যা খেতে দিয়েছে, এটাকে আর যা-ই হোক খাবার বলা যায় না। 

চেয়ার একটু পেছনে টেনে কোনাচে অবস্থায় বসে আমার স্ত্রী কয়েক চামচ সিউইড স্যুপ খেল, আমি নিশ্চিত এটাতে কেবল পানির স্বাদ ছাড়া আর কিছুই নেই। একটি লেটুসপাতার ওপর একটুখানি ভাত এবং সয়াবিনের ভর্তা রেখে লেটুসপাতায় সবটা ঢেকে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে চিবোতে শুরু করল। 

আমি তাকে বুঝতে পারিনি। 

তখনই আমার মনে হলো, এই মহিলা কেন এমন করছে, তার কোনো সূত্রই তো আমার জানা নেই। 

অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করল, 'খাচ্ছ না?' 

মধ্যবয়সী কোনো মহিলা তার ছেলেকে যেমনভাবে জিজ্ঞেস করে, আমার স্ত্রী তাই করল। আমি নিশ্চুপ বসে রইলাম, খাবারের নামে এসব মুখে তোলার আগ্রহ আমার নেই। একটুখানি কিমচি মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলাম। মনে হলো বছরের পর বছর ধরে চিবিয়েই যাচ্ছি।

বসন্ত চলে এল, আমার স্ত্রী তখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল না। সে তার মুখের কথা রেখেছে, কখনো ছোট্ট এক টুকরো মাংস তার ঠোঁট অতিক্রম করতে দেখিনি—তবে আমি এসব নিয়ে অভিযোগ করা বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছি।

যখন কারও এমন আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে, তখন পেছনে বসে যা ঘটছে, তা ঘটতে দেওয়া ছাড়া আর কারও কিছু করার থাকে না। সে ক্রমেই চিকন থেকে চিকন হচ্ছে, তার গালের হাড় বাজেরকমভাবে বেরিয়ে এসেছে। মেকআপ না করলে তার গায়ের রং হাসপাতালের রোগীদের মতোই মনে হয়। 

ওজন কমানোর জন্য অন্য কোনো নারীর মতো যদি মাংস খাওয়া ছেড়ে দিত, তাহলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ থাকত না। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি তার বেলায় এটা কেবল নিরামিষাশী হওয়া নয়, তার চেয়ে বেশি। সে যে স্বপ্নের কথা বলেছে, এটা সেই স্বপ্নই, সবকিছুর গোড়াতেই সেই স্বপ্ন।

এদিকে সত্যি বলতে কী—সে ঘুমোনোও বন্ধ করে দিয়েছে। 

আমার স্ত্রীকে বিশেষভাবে মনোযোগী বলে কেউ বর্ণনা করবে না—আগে আমি যখন মধ্যরাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতাম, দেখতাম সে ঘুমিয়েই আছে। 

কিন্তু এখন যখন মধ্যরাতে ফিরে আসি, হাত-মুখ ধুই, বিছানা ঠিক করি, ঘুমোবার জন্য শুয়ে পড়ি, আমার সঙ্গে যোগ দিতে সে তখন আর শোবার ঘরে আসে না। সে তখন কোনো বই পড়ছে না। ইন্টারনেটে চ্যাট করছে না। রাতের কেবল টিভি দেখছে না। একটা কাজের কথাই আমার মনে হয়, যা নিয়ে সে ব্যস্ত থাকতে পারে, তা হচ্ছে কার্টুনের মুখে বাক্য বসানো। কিন্তু সে জন্য তো এতক্ষণ লাগার কথা নয়। 

ভোর পাঁচটার আগে সে বিছানায় আসে না। যদি তখনো আসে, পরের একটি ঘণ্টা সে আদৌ ঘুমায় কি না, আমি নিশ্চিত নই। তার মুখমণ্ডল বসে গেছে, চুলে জট লাগছে। লাল, ছোট হয়ে আসা চোখে আমাকে নাশতার টেবিলে দেখে। সে নিজের চামচই তেমন মুখে তোলে না। কাজেই আসলে কী খায় কে জানে। 

কিন্তু যে বিষয়টি আমাকে বেশি যাতনা দেয়, তা হচ্ছে, আমার স্ত্রীর সক্রিয়ভাবে যৌনসঙ্গম এড়িয়ে চলা। অতীতে সাধারণত আমার শারীরিক চাহিদা মেটাতে সে সহায়ক ছিল। এমনও ঘটেছে, কখনো সে নিজ থেকেই এ কাজের জন্য এগিয়ে আসত। এ নিয়ে এখন তার কোনো আদিখ্যেতা নেই। আমার হাত তার কাঁধ একটুখানি রলে  সে আস্তে করে সরে যায়। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি একদিন তার মুখোমুখি হলাম। 

'আসল সমস্যাটা কোথায় শুনি?'

'আমি ক্লান্ত।'

'বেশ তো, তার মানে তোমার কিছু মাংস খাওয়া দরকার। সে কারণেই তুমি শরীরে কোনো শক্তি পাও না, তাই না? তুমি তো আগে এ রকম খাবারে অভ্যস্ত ছিলে না।'

'আসলে...।'

'কী?'

'এটা ঘ্রাণ।'

'ঘ্রাণ?'

'মাংসের ঘ্রাণ। তোমার শরীর থেকে মাংসের ঘ্রাণ বের হয়।'

এ কেমন হাস্যকর কথা বলছ।

'তুমি কি দেখনি এইমাত্র আমি গোসল করে এসেছি? তাহলে গন্ধটা কোত্থেকে আসছে—হুহ্?'

অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে জবাব দিল, 'এক জায়গা থেকেই, যেখান থেকে তোমার ঘ্রাণ আসে।'

Related Topics

টপ নিউজ

হান কাং / অনুবাদ / উপন্যাস / ভেজেটারিয়ান / নিরামিষাশী / নোবেলজয়ী / সাহিত্যে নোবেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে
  • দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত
  • আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা
  • মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল
  • বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

Related News

  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • গোধূলিবেলায়
  • দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক সংকটে নোবেলজয়ী হান কাং ‘মর্মাহত’
  • এআই যুক্ত নতুন ফিচার আনছে মাইক্রোসফট, নকল করা যাবে কণ্ঠস্বরও
  • যন্ত্র বনাম সাহিত্যিক: অনুবাদ যুদ্ধের শেষ সীমান্ত

Most Read

1
অর্থনীতি

কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে

2
বাংলাদেশ

দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত

3
অর্থনীতি

আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে

4
অর্থনীতি

বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

5
বাংলাদেশ

মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল

6
অর্থনীতি

বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net