আলু প্রধান খাদ্য! আলু আন্দোলন, কারা বেশি আলু উৎপাদন করে

আইরিশ পটেটো ফ্যামিন
১৮৪৫ থেকে ১৮৫২ আইরিশ মন্বন্তরের সবচেয়ে খারাপ বছর ছিল ১৮৪৭, এই বছরটাকে বলা হয় 'কালো ৪৭'। এই দুর্ভিক্ষকালে দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ১৮৪৫ থেকে ১৮৫৫-এর মধ্যে ২১ লক্ষ ক্ষুধাপীড়িত মানুষ জন্মভূমি আয়ারল্যান্ড ছেড়ে দেশান্তরী হয়েছিল। দুর্ভিক্ষের প্রাথমিক কারণ ছিল আলুর মড়ক। ১৮৪০-এর দশকে আলুর রোগগ্রস্ততা আয়ারল্যান্ডের বাইরে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানেও লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হয়। আলুর মড়কের কারণ 'ফাইটোপেথরা ইনফেস্টানস' নামক ব্যাধি।
সেকালে তো বটেই, এখনো এক একর জমির আলুতে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের সাংবাৎসরিক আহারের সংস্থান হয়ে থাকে। মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলে শস্য আইন বাতিল এবং শস্য কেনাবেচায় উচ্চতর কর ধার্য হওয়ায় এমনিতেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়েছিল। দুর্ভিক্ষকালে একদিকে আলুর মড়ক, বাজার ধস এবং অন্যদিকে সরকারি অব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। এমনকি ১৮৪৭ সালেও নিজেদের মরণাপন্ন মানুষকে না খাইয়ে আয়ারল্যান্ড থেকে মটর, শিম, মাছ, মধু, খরখোশ রপ্তানি অব্যাহত রাখা হয়। আলুর আকালে আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ কমে যায়। খাবারের সন্ধানে যারা দেশ ছাড়ে, তাদের অনেকের মৃত্যু হয় মাঝপথে।
এটাও সত্যি, আলু ঐতিহ্যগতভাবে আইরিশদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খাবার ছিল না। কেবল সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে আইরিশদের বাড়ির পেছন দিকের সবজিবাগানে আলু প্রবেশ করে। কিন্তু আলুর উৎপাদনশীলতা ও স্বাদ আইরিশদের মন জয় করতে বেশি সময় নেয়নি। দ্রুত এটা বিকল্প প্রধান খাবারে পরিণত হয়। শস্যই প্রধান খাবার হিসেবে রয়ে যায়। কিন্তু উৎপাদনে কম খরচ, কম জমিনে বেশি পরিমাণ উৎপাদন এবং বিভিন্নভাবে আলু খাবার অভিজ্ঞতায় আলু আইরিশদের জীবনে কোনো কোনো অঞ্চলে প্রধান খাবার হিসেবেই আবির্ভূত হয়।
এই আলু দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা আয়ারল্যান্ডের জন্য বড় একটি শিক্ষা রেখে যায়। ১৭৮২-১৭৮৩ সালে যখন খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় এবং দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যায়, আইরিশ জনগণ উদ্যোগী হয়ে খাদ্য রপ্তানির সকল বন্দর বন্ধ করে দেয়। তাতে দ্রুত আলুসহ অন্যান্য সামগ্রীর দরপতন ঘটে। রপ্তানিকারকদের শক্তিশালী লবির মুখে সরকার নতি স্বীকার করেনি।
১৯৪০-এর বাংলার মন্বন্তরের দায় যেমন ব্রিটিশ সরকারের, আইরিশ দুর্ভিক্ষকে ব্রিটিশ সরকারের আরোপিত গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বহু বছর পর ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আইরিশদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নিউ ফাউন্ডল্যান্ড পটেটো ফ্যামিন
আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি আটলান্টিক মহাসাগরের অপর প্রান্তে নিউফাউন্ডল্যান্ড। মাঝখানে মহাসাগর থাকলেও একই অক্ষরেখায় অবস্থান। এই দ্বীপটি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পুরোপুরি আলুনির্ভর অঞ্চলে পরিণত হয়। আয়ারল্যান্ডের আলুর মড়ক ১৮৪৫-এর সেপ্টেম্বরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের দক্ষিণ সমুদ্র উপকূলের আলুর জমিনে প্রবেশ করে এবং দ্রুত দ্বীপের আলু জমিনে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৬ থেকে ১৯৪৮ প্রায় তিন বছর দুর্ভিক্ষে কাটে। তবে লোকসংখ্যা কম হওয়ায় এবং দ্বীপের অধিবাসীরা সামুদ্রিক মাছ ধরা অব্যাহত রাখতে পারায় আয়ারল্যান্ডের নাগরিকদের মতো তাদের ব্যাপক মৃত্যু ঘটেনি এবং বিপুল সংখ্যায় দেশান্তরিত হবার মতো অবস্থা হয়নি। এ সময় কোনো কোনো চার্চের প্রধান অবশ্য বলেছেন, মানুষের যে নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে, তা সংশোধনের জন্য ঈশ্বর এই দুর্ভিক্ষ পাঠিয়েছেন।
আলু আন্দোলন: আলুর দালাল নিপাত যাক
২০০৭ সালে গ্রিসের মাউন্ট অলিম্পিয়াস পর্বতের পাদদেশে প্রথম আহ্বান করা হলো নেভ্রোকপির আলু উৎপাদনকারী চাষিদের। তারা মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের খপ্পরে না পড়ে এখানেই সরাসরি পাইকারি দরে আলু বিক্রয় করবে। তারপর আহ্বান ছড়িয়ে পড়ল গোটা গ্রিসে- আমরা আলুর দালাল চাই না। ধীরে ধীরে তা আন্দোলনে পরিণত হলো। সাথে যুক্ত হলো আরও একটি দাবি। গ্রিস পর্যাপ্ত আলু ফলায়, মিসর থেকে আলু আমদানি করা চলবে না। রাজনীতিবিদেরা বিপাকে পড়লেন, আলু বেচাকেনার দালালিতে তারাও তো আছেন। কিন্তু জনতা তাদের ওপর এতোটাই ক্ষিপ্ত যে তাদের কৌশল পাল্টাতে হলো। ২০১২ নাগাদ রাজনীতিবিদেরাও তাদের মেনিফেস্টোতে নিয়ে এলেন আলুর দালাল চাই না। মূলত আলুচাষিদের গণজাগরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ফারমার্স মার্কেট-কৃষকদের বাজার। তবে আন্দোলনটি বহু বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আলু বাছাই, প্যাকেজিং এবং কোল্ডস্টোরেজের মালিকরাই একসময় দালালিটাও করত। টাকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাছাই, প্যাকেজিং, স্টোরিংয়ের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। আলুচাষিরাও তাদের সমবায় সমিতিগুলোকে জোরদার করে।
গ্রিসে আলুভিত্তিক একটি রাজনৈতিক শক্তির অভ্যুদয় ঘটেছে, এটাই পটেটো পাওয়ার। আলুচাষিদের ফোরাম এখন রাষ্ট্রের সাথে এবং চীনা কনটেইনার জাহাজের কর্তাদের সাথে সরাসরি দর-কষাকষি করছে। গ্রিসের এই তৃণমূল পর্যায়ের আলুভিত্তিক সামাজিক কৃষি সংগঠন প্রতিবেশী দেশগুলোতে গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশে কোল্ডস্টোরেজ দালাল এবং মালিকের এজেন্টরা যে বাজার অস্থিতিশীল করছে, তা স্বীকৃত; তাদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অসহায় হয়ে উঠছে। ভোক্তার ঐক্য ও আলুচাষির ঐক্যই সিন্ডিকেট ভেঙে দালালের উৎপাত ও শোষণ কমিয়ে আনতে পারে।
আলু উৎপাদনের শীর্ষে চীন

২০১০ সালে পৃথিবীতে মোট ৩৩৩.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে; ২০২১-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০২১-এর হিসেবে শীর্ষ উৎপাদনকারী ১১টি দেশ:
চীন: ৯৪.৩৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন
ভারত: ৫৪.২৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন
ইউক্রেন: ২১.৩৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন
যুক্তরাষ্ট্র: ১৮.৫৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন
রুশ ফেডারেশন: ১৮.৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন
জার্মানি: ১১.৩১ মিলিয়ন মেট্রিক টন
বাংলাদেশ: ৯.৮৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন
ফ্রান্স: ৮.৯৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন
পোল্যান্ড: ৭.০৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন
মিসর: ৬.৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন
নেদারল্যান্ডস: ৬.৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন
সবচেয়ে বড় আলু
নটিংহামশায়ারের সবজিচাষি পিটার গ্লেইজব্রুক ২০১১ সালে তার উৎপাদিত ৪.৯৮ কিলোগ্রাম ওজনের আলুকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠাতে সক্ষম হয়েছেন। গত বছর ২০২২ মার্চে নিউজিল্যান্ডের ডোনা ও কলিন ক্রেইগ ব্রাউন ৭.৯ কিলোগ্রাম ওজনের আলু উপস্থাপন করে পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ফেলার দাবি করেন। দাবি প্রতিষ্ঠা করতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি প্রয়োজন। তারা যথাসময়ে হাজির হয়। দাবিকৃত আলুর ডিএনএ টেস্ট করতে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হলো। ডিএনএ এই দম্পতির দাবিকে সম্মান জানাতে পারেনি। রিপোর্ট বলেছে, এটা আলু নয়, তবে মাটির নিচে জন্ম নেওয়া কন্দকাকৃতির ফল।
আলু যাদের প্রধান খাবার, তাদের মধ্যে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া, পোলান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যদিও আলু সবজিভুক্ত খাবার, তবুও ক্ষুধা নিবৃত্তিতে আলু ভাত বা রুটির মতোই সহায়ক। আইরিশ আলুর প্যানকেক বহুল আদৃত খাবার। আলু ও ভাত দুটোই শর্করা, তবুও অভ্যাসগতভাবে ভাতই আমাদের পছন্দ।
একালের আলু দুর্ঘটনা
নিক্ষিপ্ত আলুতে চোখ হারিয়ে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। এ বছরই মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের আদালত দুই আলু নিক্ষেপকারীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। গাড়ি চালিয়ে যাওয়া এক নাগরিককে ট্রেন্ট ফিলিপ গ্রিন এবং ব্র্যান্ডন মিকিকোই আলু ছুড়ে আহত করেছেন। সিসিটিভি তাদের অপকর্মের দৃশ্য ধারণ করেছে।
হাফিংটন পোস্ট-এর পুরোনো সংখ্যায় পাওয়া একটি সংবাদ: 'আলু ট্রাজেডি-কেবল মারিয়া বেঁচে আছে'। আলু রাখা ছিল একটি কাজাখ পরিবারের বাড়ির বেজমেন্টের সেলারে। মারিয়ার বাবা ৪২ বছর বয়সী মিখাইল সেলারে ঢুকলেন, তিনি বুঝতে পারেননি যে আলুতে পচন ধরেছে এবং সেখান থেকে গ্যাস বেরোচ্ছে। তিনি বের হচ্ছেন না দেখে মারিয়ার মা আনাস্তাসিয়া কী হয়েছে দেখতে সেলারে ঢুকলেন, অনেকক্ষণ হয়ে যায়, তিনিও ফিরতে দেরি করছেন দেখে মারিয়ার ১৮ বছর বয়সী ভাই জর্জি ভেতরে গেল, তারও ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে মারিয়ার দাদি ইরাইদা প্রতিবেশীদের ডাকলেন এবং ব্যাপারটা বললেন, কিন্তু তারা পৌঁছার আগেই তিনি সেলারের দরজা খোলা রেখে ভেতরে গেলেন এবং তিনিও ফিরলেন না। তখনো প্রতিবেশীরা আসেনি। ৮ বছর বয়সী মারিয়া খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিল, কিছুটা ভেতরেও ঢুকল। দেখল তার বাবা, মা, ভাই, ও দাদি মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। তারা যে মৃত, বুঝতে মারিয়ার সময় লেগেছে।
ততক্ষণে পুলিশসহ প্রতিবেশীরা হাজির।
মারিয়ারও তো পচা আলু থেকে উৎপাদিত বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাবার কথা ছিল। মরেনি কারণ দাদি সেলারের দরজাটা খুলে রেখে যাওয়ায় গ্যাস অনেকটাই বেরিয়ে গেছে।
ভলগা নদীর পারে কাজানের পাশে লাইশোভা নামের একটি ছোট শহরে আলুর বিষাক্ত গ্যাস মারিয়া চেলিশেভাকে একেবারে নিঃসঙ্গ করে দিয়ে গেছে।
পটেটো চিপস

পাশ্চাত্যের কথা থাক, প্রাচ্যের পটেটো চিপস মুখে তুলে নেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া রীতিমতো গবেষণার ব্যাপার। বাজারজাত প্যাকেটজাত চিপস না হলেও বাড়ির চুলোতে গরম তেলে ভাজা কিংবা সেদ্ধ করা চিপস অবশ্যই খেয়েছেন। আলু চিপস হচ্ছে 'ইউনিভার্সালি লাভড' স্ন্যাকসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ২০২২ সালে গোটা বিশ্বে চিপসের বাজার ছিল ৩৩.৩ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৩ থেকে ২০২৮ পর্যন্ত গড় ক্রমবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হলেও ২০২৮ সালে এই বাজারের আকার দাঁড়াবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। অপর একটি বাজার গবেষণা দেখিয়েছে, চক্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। তাতে ২০৩০ সালে বাজারের আকার দাঁড়াবে ৪৮.৫৮ বিলিয়ন ডলার। বাজারে যত ধরনের স্ন্যাকস রয়েছে, অর্থমূল্যে তার ৩৫ ভাগই পটেটো চিপসের দখলে।
১৮১৭ সালে প্রকাশিত উইলিয়াম কিচেনারের বেস্টসেলার গ্রন্থ 'দ্য কুকস ওরাকল'-এ সর্বপ্রথম বড় আলু কেটে কেমন করে চিপস বানাতে হবে তার রেসিপি প্রকাশ করেছিল। ১৮২৫ সালে ফরাসি রান্নাবান্নার একটি ইংরেজি ভাষান্তর বেরিয়েছিল, তাতেও আলুর ফালি কেটে তেল ও ঘিতে ভাজার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপি বই ম্যারি রেয়নল্ডসের 'ভার্জিনিয়া হাউস ওয়াইফ' ১৮২৪ সালে কিচেনারের রেসিপিই উপস্থাপন করেছে।
১৮৯৫ সালে ক্লিভল্যান্ডে চিপসের বাণিজ্যিক বিক্রয় শুরু। ১৯২০-এর দশকে হারমান লে তার গাড়িতে চিপস নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। লেস চিপস পাশ্চাত্যে খুবই জনপ্রিয়। ব্রিটিশরা বেশি রকম চিপসভক্ত হলেও চিপস আবিষ্কার সম্ভবত ফরাসিরাই করেছে। প্রাচীনতম চিপস ব্র্যান্ড মাইকসেল; ডি ডব্লিউ মাইকসেল বিংশ শতকের গোড়ার দিকে চিপস সাম্রাজ্য গড়ে তুলছিলেন।

ভদকা: অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত আলুর বড় অংশটাই ভদকার দখলে। মেথানল, এথানল, আইসোপ্রোপানল, টার্ট বিউটানল বানাতে আলু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডিস্টিলড স্পিরিট ভদকা, মুনশাইন, হোয়াইট লাইটিনিং ও অন্যান্য স্বচ্ছ পানীয়তে আলুর ব্যবহার রয়েছে। অনেক ধরনের দেশি মদে আলুর ব্যবহার হয়। রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশে ভদকা অত্যন্ত সমাদৃত পানীয়।

জ্যাকেট পটেটো: বড় সাইজের পটেটো বা জ্যাকেট পটেটোর একটি যদি সুস্বাদু ফিলার দিয়ে পরিবেশন করা যায়, একটিতেই পেট প্রায় ভরে যায়। ফিলার হিসেবে দেওয়া হয় বাটার, পনির, ক্রিম, ঝোল, বেকড বিন এমনকি মাংস বা কর্নড বিফ। সাধারণ ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা বারবিকিউ গ্রিলে জ্যাকেট পটেটো সেদ্ধ করা যায়। জ্যাকেট কারণ আলুর ত্বকটা আগে তুলে ফেলা হয় না।

ফিশ অ্যান্ড চিপস: ইউরোপে সবচেয়ে জনপ্রিয় গরম ফিশ অ্যান্ড চিপস। খাবারের মেনুতে যা কিছু আছে তার মধ্যে ফিশ অ্যান্ড চিপস অন্যতম প্রধান টেইক অ্যাওয়ে আইটেম। প্রথম ফিশ অ্যান্ড চিপস ১৮৬০ দশকে ব্রিটেনে চালু হয়। ১৯১০ সাল নাগাদ ব্রিটেনে ২৫ হাজার এবং ১৯৩০ দশকে ৬৫ হাজার দোকান (স্থায়ী কিংবা ভ্রাম্যমাণ) খোলা হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় নাগরিকদের খাবারের নিশ্চয়তা দেবার প্রশ্নে সরকার নিশ্চিত করেছিল যে তারা অন্তত ফিশ অ্যান্ড চিপস পাবেন। যুদ্ধের অনিশ্চয়তার মধ্যেও আলু ও মাছের সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।