Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
August 27, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, AUGUST 27, 2025
মৃত্যুর মিছিল

ইজেল

শওকত হোসেন
25 September, 2020, 11:20 pm
Last modified: 26 September, 2020, 05:36 pm

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

মৃত্যুর মিছিল

ধারাবাহিক স্পাই থ্রিলার: ‘নিশ্চিত নই আমি,’ বলল আনিকা। ‘কাছেই গাযিয়ানতেপ নামে বড়সড় একটা শহর আছে। প্লেনে করে ওখানকার এয়ারপোর্টে গিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা রিফিউজি ক্যাম্পে চলে যাও। মাত্র চার কিলোমিটার দূরে।’ ‘যাত্রার ব্যবস্থা করতে পারবে?’ জানতে চাইল তারিক। 
শওকত হোসেন
25 September, 2020, 11:20 pm
Last modified: 26 September, 2020, 05:36 pm

১০

মাত্র দুপুর গড়িয়েছে, তার মানে খাওয়ার সময়। দালানের লবিতে ব্যস্ততা। লোকজন শশব্যস্ত হয়ে যাওয়া-আসা করছে। আত্মবিশ্বাসের সাথে ভীড়ের ভেতর পথ করে আগে বাড়ল তারিক। যেন এখানেই কাজ করে, যেন গন্তব্য সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল।

হাঁটু সমান উঁচু কিয়স্কে কর্মচারী কিংবা ভেন্ডররা চটপট স্বয়ংক্রিয় রীডারে পরিচয়পত্র ছুঁইয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়ছে। এক লোককে চারটে কফি ক্যান্ডির বাক্স নিয়ে দ্রুত পায়ে এগোতে দেখে তার পিছু নিল ও। 

লোকটা আইডি কার্ড বাড়িয়ে দিতেই পলকের জন্যে বীপধ্বনি উঠল, তারপরই পলকে একটা এলিভেটরে উঠে পড়ল তারিক। উপরে উঠছে ওটা। ভেতরে অসংখ্য লোকজন: এশিয়, হিস্পানিক, আফ্রিকান-আমেরিকান। আরোও নানা পদের লোকজনও আছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছে। 

আজকাল এই ব্যাপারটা বাইরের দুনিয়ায় আর দেখা যায় না, ভাবল ও। উনত্রিশ নম্বর ফ্লোরে একবার থামল এলিভেটর, পিছলে খুলে গেল দরজাটা। চট করে বেরিয়ে এলো ও। 

কার্পেটমোড়া প্রশস্ত, বিলাসবহুল লবি। রিসিপশনিস্টের মাথার উপর দেয়ালে ঝলমলে হরফে বড় বড় করে লেখা রয়েছে: ন্যাশনাল নিউজ নেটওয়ার্ক (এনএনএন)। ছাদ থেকে তিনটা পেল্লায় সাইজের টিভি ঝুলছে, সবকটাতেই এনএনএন-এর হালনাগাদ খবর দেখাচ্ছে। বৃত্তাকার দেয়াল জুড়ে সাঁটানো এনএনএন সাংবাদিকদের সাতটা পোস্টার সাইজ ছবি, সেগুলোর ভেতর তিনটায় জ্যাক মিল্টনকে রণক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। ঘন শাদা দাড়ি এবং আপাত প্রফুল্ল নীল চোখে দেখছে সে।  
ওই চোখজোড়া ফুলে ঢোল হবে, নীল হয়ে যাবে, মনে মনে ভাবল তারিক। 

রিসিপশনের ডেস্কটা বাঁকানো। ওটার পেছনে সোনালি চুল আকর্ষণীয়া চেহারার একটা মেয়ে বসে আছে। মাথায় হেডসেট। ওর দিকে এগিয়ে গেল তারিক, শীতল নৈপুণ্য নিয়ে হাসিমুখে ওর দিকে তাকাল মেয়েটা। 'কোনো সাহায্য করতে পারি?' জানতে চাইল সে।

জবাবে মধুর হাসি উপহার দিল ও। সামান্য পদাতিক সৈন্য ও, ওকে আঘাত না দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টাই করবে তারিক। মেয়েটার পরনে উজ্জ্বল লাল রংয়ের পোশাক, ডান হাতের উল্টোপিঠে ছোট হলদে সূর্যমূখী ফলের টাট্টু।

'নিশ্চয়ই,' বলল ও। 

এটুকু বলেই চুপ করে থাকল ও। কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত দেখাল মেয়েটাকে। 'তা কিভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি, স্যার?'

'জ্যাক মিল্টনের সঙ্গে দেখা করতে চাই।'

'ও, আচ্ছা,' একটা কম্পিউটারের কীবোর্ডের উপর স্থিও হলো ওর আঙুলগুলো। 'অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?'

'নাহ।'

'আমি...মানে...'

হাসি অম্লান রেখেই সামনে ঝুঁকল তারিক। 'কি জানো, বিদেশে জ্যাকের সঙ্গে আলাপপরিচয়। আমি চাকরি করার সময়। কিঞ্চিৎ বিশ্রী পরিস্থিতি ছিল সেটা।'

'অ।'

মাথা ঝাঁকাল তারিক। 'অবস্থা খতরনাক হয়ে উঠছিল, কাজটা শেষ হওয়ার পর জ্যাক বলেছিল, "দোস্ত, শহরে এলেই আমার ওখানে যাবে কিন্তু, দেখা করবে।"'

লবি এলাকা জরিপ করার একটা ভাব করল তারিক। 'খাসা জায়গা। মরুভূমি আর পাহাড়পর্বতের চেয়ে হাজারগুন ভালো। তো, ওর সঙ্গে দেখা করা যাবে?'

'ওকে কি নাম বলব?' জানতে চাইল মেয়েটা। 

'ধন্যবাদ,' প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল তারিক। তারপর একটা আরমাদায়ক কাউচে বসে পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল তরুণী রিসিপশনিস্ট। ওকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখল ও। ওর ডেস্কের দুপাশে দুটো ভারী কাঁচের দরজা দেখা যাচ্ছে। এনএনএন-এর লোকজন ভেতরে আসছে, তারপর একটা কী-কার্ড ব্যবহার করে ওপাশে যাচ্ছে। 

ওর কাছে কোনো কী-কার্ড নেই। 

চিন্তারও কিছু নেই।

নিউ ইয়র্ক টাইমস -এর একটা কপি তুলে নিয়ে পড়ার ভান করতে লাগল ও। 

কয়েক মিনিট কেটে গেল। তরুণী বলে উঠল, 'স্যার?'

'হ্যাঁ, বলো?'

'জ্যাক মিল্টন এখানে নেই।'

'ওহ, কোথায় গেছে বলতে পারো?'

'মনে হয় না,' ওর প্রতি সহানুভূতির একটা ভাব করে বলল সে। ও উঠে বিদায় হয়ে যাবে বলেই মনে মনে আশা করছে মেয়েটা, বুঝতে পারল তারিক।  

দুঃখিত, ওটি হওয়ার নয়, ভাবল ও। 

'কুছ পরোয়া নেহি,' টাইমস রেখে বলল ও। 'ও ফিরে আসা অবধি অপেক্ষা করব আমি।'

'আজকে সে আসবে কিনা নিশ্চিত নই।'

'কোনো সমস্যা নেই। আমি অপেক্ষা করছি।'

'কিন্তু...তোমাকে তো চলে যেতে হবে।'

'তোমার উদ্বেগের জন্যে ধন্যবাদ,' বলল ও। 'কিন্তু এখানেই ভালো লাগছে আমার। কারণ কি, জানো?'

মাথা নাড়ল মেয়েটা। 

'এখানে হতচ্ছাড়া মরুভূমির ডাঁশ মাছি নেই,' বলে একটু দম নিল ও। 'ম্যা'ম।'

সময় কেটে যেতে লাগল। লোকজন আসছে, যাচ্ছে। ওদের সবাইকে একই কথা বলছে তারিক, 'মাফ করবে, জ্যাককে আমার কথা একটু বলবে? বলবে, আমি এখানে অপেক্ষা করছি?'

এনএনএন-এর কিছু লোক ওকে অগ্রাহ্য করে যাচেছ, অন্যরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিসিপশনিস্টের দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে ব্যাপারটা ঘটল।

ভারী গুঞ্জন তুলে খুলে গেল বাম দিকের দরজাটা। দুজন বিশালদেহী লোক বেরিয়ে এলো ওপাশ থেকে। ওদের দুজনের পায়ে কালো জুতো, পরনে গাঢ় নীল স্ল্যাক্স, শাদা শার্ট এবং গাঢ় নীল ব্লেযার। দুজনের কানে ইয়ারপীস গোজা। দুজনই বয়সে ওর  চেয়ে বছর দুই ছোট  হবে। 

লাল উর্দি নেই। এটা ভালো লক্ষণ, ভাবল তারিক। 

পত্রিকাটা ধীরে সুস্থে ভাজ করে কফি টেবিলে রাখল ও। 

উঠে দাঁড়াল। 

'হায় খোদা, তোমাদের কাউকেই তো জ্যাক মিল্টনের মতো লাগছে না,' বলল ও। 

'হ্যাঁ, প্রায়ই কথা শুনতে হয় আমাদের,' বামপাশের জন বলল কথাটা। 'তুমি ব্যাপারটা আমাদের জন্যে সহজ করে দেবে কিনা?'

'সহজ মানেটা যদি বলতে।'

'তুমি ঘুরে দাঁড়িয়ে সোজা কেটে পড়বে।'

রিসিপশনিস্টের উদ্দেশে হাসল তারিক। জবাবে দুর্বল হাসি দিল মেয়েটা।  

'সহজ কিছু কখনোই পছন্দ না আমার,' বলল ও। 'তো এখন কেন সেটা করতে যাব?'

১১

কিন্তু পরক্ষণেই আশপাশে প্রত্যক্ষদর্শী থাকায় ওদের জন্যে ব্যাপারটা সহজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ও। কাউচের কাছে থেকে সরে এলো ও, ওরা দুজন দুপাশ থেকে ওর বাহু জাপ্টে ধরার সুযোগ পেল। 

ওর হাত মুচড়ে পেছনে নিয়ে গেল, হাঁটতে শুরু করল। ওদের সঙ্গে তাল মেলাল ও, যদিও মেজাজ তেমন থাকলে  দুজনকেই মেঝেতে উল্টে ফেলে জনপ্রতি তিনটা করে ভাঙা হাড় উপহার দিতে পারত। 

ওদের ভাগ্য ভালো মুড নেই ওর। 

রিসিপশনিস্ট ওদের বেরুনোর জন্যে বাম দিকের দরজা খুলে দিল।  ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসা হলো ওকে। কার্পেট মোড়া একটা হলওয়ে হয়ে আগে বাড়ল ওরা। তীক্ষ্ন বাম মোড় নিয়ে একটা চিহ্নহীন ধাতব দরজা হয়ে বেরিয়ে এলো। হলওয়েতে এখন কার্পেট নেই। নগ্ন কংক্রীটের আস্তরণ কেবল। 

ডান দিকে এগোল ওরা, সাপ্লাই রূম পাশ কাটিয়ে ফাঁকা জায়গায় এসে হাজির হলো। একটা ছোট কিচেন, তারপর সার্ভিস এলিভেটরের মতো একটা কিছুর সামনে এসে পড়ল। এখনো ওর কব্জিতে শক্ত হয়ে এঁটে আছে ওদের হাত। বোতামে চাপ দিতেই গমগম করে দরজা খুলে গেল। ঠেলে ভেতরে ঢোকানো হলো ওকে। 

বোকার দল। 

কয়েক সেকেন্ডেই দুজনকেই এলিভেটরের ভেতর একটা পিণ্ড বানিয়ে ফেলতে পারে, নাকেমুখে গলগল করে রক্ত গড়াবে।  

কিন্তু এনএনএন কর্মীদের সামনে রীতিমতো ভদ্রলোকের প্রতিমূর্তি বনে আছে ও। এলিভেটরে ঢুকে পড়ল ও। পিছলে বন্ধ হয়ে গেল ওটার দরজা। 

'জ্যাক মিল্টন কোথায় জানা আছে তোমাদের?'

চুপ রইল ওরা।

এলিভেটরের ভেতরে কোনো বাটন নেই। সম্ভবত সোজা নিচের তলায় যাবে। 

'ঠিক জানো?'

ওদের একজন বলল, 'জ্যাক মিল্টনের সঙ্গে কেন দেখা করতে চাইছ?'

'ওর কাছে পাঁচ টাকা পাই আমি,' বলল ও। 

এলিভেটরের ভেতরের  আয়নায় ওদের চেহারা দেখতে পাচ্ছে। ওদের একজন মুখ ভেঙচাল। অন্য জন -- যত্ন করে ছাঁটা গোঁফ আর চেপে বসা কানঅলা -- তারিকের ডান হাত জোরসে উপর দিকে ঠেলে দিল। 'এটা পেশাদারী কাজ, ঠিকাছে? এখান থেকে বিদায় হও। আর আসবে না। সোজা জাহান্নামে চলে যাবে।'

'কিন্তু জ্যাক যে আমাকে আসতে বলেছিল।'

ফের ওর হাত মুচড়ে দিল লোকটা। ও অর্তনাদ না করায় তাকে হতাশ হয়েছে বলেই মনে হলো। 'তোমার কিন্তু সুন্দর পা, লম্বা চুল কিংবা সুডৌল বুক নেই, তো ভুলে যাও।'

থরথর করে কেঁপে উঠে থেমে গেল এলিভেটর। দরজা খুলে গেল। একটা লোডিং ডকে বেরিয়ে এলো ওরা। নগ্ন কংক্রীটের মেঝে, মাথার উপর ফ্লুরোসেন্ট বাতি জ্বলছে। গড়িয়ে উপরে উঠে যাওয়া দরজাঅলা উন্মুক্ত বে-তে এলো ওরা, সেটা থেকে একটা সংকীর্ণ গলিপথে, ট্র্যাশবিনের ছড়াছড়ি এখানে। জোরসে একটা ধাক্কা মারা হলো ওকে। উল্টে পড়ার ভঙ্গি করল তারিক। 

বাম পাশের লোকটা বলল, 'সেথ, কোনো দরকার ছিল না।'

সেথ বলল, 'আমার মেজাজ খিঁচড়ে দিচ্ছিল ব্যাটা। ওকে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা ফাজলামো করছি না।'

উঠে দাঁড়াল তারিক। হাত থেকে ধূলি ঝেড়ে হাসল। 'আরে, বুঝতে পারছি। তোমরা গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্বে আছো। জ্যাক মিল্টন আর অন্য লোকজনকে রক্ষার কাজে সামনের কাতারেই আছো তোমরা।'

'ঠিকই ধরেছ,' বলল দ্বিতীয় প্রহরী। 

চওড়া হাসি দিল ও। সামনে হাত বাড়িয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল। হালকা কুয়াশা ঝরছে, মিডটাউন ট্রাফিকের গুঞ্জন কানে আসছে। 'কিছু মনে রেখ না, ঠিকাছে?'

জিতে গেছে ভেবে পাল্টা হাসল লোকটা। সম্ভবত উদারতা দেখাতেই ওর সঙ্গে হাত মেলাল।  

ওই লোকের দিনের তিন নম্বর ভুল ছিল এটা। 

বাড়ানো হাতটা জাপ্টে ধরে হ্যাঁচকা টানে তাকে সামনে টানল তারিক। পরক্ষণে মুক্ত হাতে জোরসে একটা থাবড়া বসাল তার নাকের উপর। যন্ত্রণায় আর্তচিৎকার করে উঠল সে। এরপরই কংক্রীটের দেয়ালের উপর আছড়ে ফেলল তাকে। কষে লাথি হাঁকাল, অমনি পাজোড়া জমিন থেকে আলগা হয়ে গেল। তার কোটের সামনেটা জাপ্টে ধরে জমিনের দিকে ঠেলে দিল, যাতে হাত লাগাতে না পারে। 

চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেছে ওই লোকের সঙ্গীর। কোটের ভেতর থেকে কিছু একটা বের করার কোশেস করছে। খেয়াল হতেই পাঁই করে ঘুরল তারিক, পা দিয়ে আলগোছে তার গলা চেপে ধরল। চোখজোড়া কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার যোগাড় হলো তার। 

'তোমাকে আমার ভালো লেগেছে, তো ব্যাপারটা জলদি সারব আমি,' জোরের সঙ্গে প্রত্যেকটা শব্দ উচ্চারণ করল ও,  লোকটাকে চেপে ধরে রেখেই বলল ও। 'জ্যাক মিল্টন কোথায় আছে জানো?'

চোখ বুজল লোকটা, যেন ওকে দেখছে, এটা ভুলে যেতে চায়। ওকে অবশ্য দোষ দিতে পারল না তারিক। 'প্লিজ, দোস্ত, আমি কিভাবে জানব বলো? আমি স্রেফ সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করি।'

জোর আরো বাড়াল তারিক। 'কিন্তু হাওয়াই কথাবার্তা তো আছে। কথা ছড়ায়, তাই না?'

লাল হয়ে গেল লোকটার চেহারা। 'আরে...ওর মতো বজ্জাত আমার মতো কারো সাথে কথা বলতে আসে মনে করো? প্লিজ...'

চাপ আরো বাড়াতে যাচ্ছিল তারিক, কিন্তু হঠাৎ পেছনে 'থামো!' চিৎকার কানে এলো। ঘুরে তাকাল ও। 

আনিকা, একটা বেরেটো নাইন এমএম পিস্তল ওর হাতে। সোজা তারিকের দিকে তাক করে রেখেছে। এক লহমার জন্যে তারিকের মনে হলো, এটাই ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে এনে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কোনও ফন্দি ছিল...

পিস্তল নামাল আনিকা। স্বস্তির শ্বাস ফেলল তারিক। এমনটা ভাবা ঠিক হয়নি, ভাবল ও। আনিকা...অনেক কিছুই করেছে ও...আরও অনেক কিছু করবে, কিন্তু রবিন-রেবেকাকে কখনো এমন বাজে কোনো কাজে টেনে আনবে না। 

একজোড়া হাতকড়া বের করল ও। তারিকের দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দিল ওগুলো। 

'আগে বাড়ো,' তারিকের উদ্দেশে বলল সে। জমিনে লুটিয়ে পড়ে ককাতে থাকা পাহারাদারদের লক্ষ করে বলল, 'দুঃখিত, ছেলেরা। তোমাদের জবানবন্দী নিতে পরে আবার আসব আমরা।'

গলি পথ থেকে পিছলে বেরিয়ে এলো ওরা। 

ইউকোনে উঠে তারিকের হাতকড়া খুলে দিল সে। গাড়ি চালাতে শুরু করল। 'ওরা তোমাকে ওখানেই এনে ফেলবে কিভাবে বুঝলে?'

'কর্পোরেশনগুলো সবকিছু চুপচাপ সারতে চায়,' কব্জি ডলতে ডলতে বলল তারিক। 'তো স্বাভাবিকভাবেই ঝামেলাবাজদের জন্যে সদর দরজা দিয়ে বেরুনোর উপায় নেই।'

একটা মোড়ে পৌঁছে থামল ওদের গাড়ি। একটা বাইসাইকেল কুরিয়ার না থেমে সাঁই করে চলে গেল। 'কিন্তু পিস্তল আর হাতকড়া কেন?'

লাল বাতি সবুজে রূপান্তরিত হলো। ঝট করে সামনে বাড়ল আনিকা, শাদা ডেলিভারি ট্রাক আর হলদে ট্যাক্সি পাশ কাটাল। 'গার্ডরা যেন ধরে নেয় তোমাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে। পুলিসই সব সামাল দিচ্ছে ভাববে ওরা।'

'আরে, আমরা একসঙ্গে কাজ করছি না?' জানতে চাইল তারিক। 

'বেশি ঝামেলা করো না,' বলল সে। 'ওখানে অমন তামাশা করতে গেলে কেন?'

ভীষণ জোরে গাড়ি চালাচ্ছে ও, নিজেকে সামলে রাখতে মাথার উপরের বারটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে তারিক। 'জ্যাক যেন বুঝতে পারে আমরা ওর পিছু নিয়েছি। ওর কাছে ব্যাপারটা হাস্যকর ঠেকলে আমাদের খাটো করে দেখবে সে। উদ্বিগ্ন  হলে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। সেটা হলে ওকে কায়দামতো পেয়ে যাব আমরা।'

হাতের আবছা নড়াচড়া, পরক্ষণে মাঝের লেনে চলে এলো ওদের গাড়ি। কোনোমতে দুটো ক্যাবের সঙ্গে টক্কর এড়াল। প্রচণ্ড হর্নের শব্দ উঠল। 'কায়দা মতো পেলে?'

'একটা একটা করে, এক এক করে' বলল তারিক। 'আপাতত আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথা ভাবো।'

'কেন? এখন তোমার সঙ্গে আছি বলেই আমার বীর পুরুষের কোটা পুরণ হয়ে গেছে।'

'খোদা, বেশ বলেছ,' বলল তারিক। 'দয়া করে গ্রেট পাপার কথা উঠলে আমাকে নিয়ে রসিকতা করো না। এমনকি ওরও সাপোর্ট স্টাফ আছে, হুইস্কি আর টাইপরাইটার এনে দেওয়ার মতো কেউ। চলো, জ্যাকের তেমন কেউ আছে কিনা হদিস করা যাক।'

১২

উনপঞ্চাশ মিনিট পর। পুরো সময়টা টেলিফোনের পেছনে পার করে দিয়েছে আনিকা, কথা বলেছে, খোঁজখবর করেছে। এই মুহূর্তে নিউ ইয়র্কের নিউ রচেলে আছে ওরা। গত নয় বছর ধরে জ্যাক মিল্টনের ক্যামেরাম্যান ওস্তাদ ওয়াল্ট কুপারের ডেরা এখানে।  ইট আর শাদা ক্ল্যাপবোর্ডের একটা দোতলা বাড়িতে থাকে সে। 

ইউকোন থেকে নামল ওরা। 

'আমি আগে যাচ্ছি,' বলল আনিকা। 

'কেন?'

'কারণ এখানে আসার পথের হদিস আমিই পেয়েছি। যে পায় সেই জেরা করে।'

'ঠিক আছে,' বলল তারিক। 'কিন্তু অবস্থা বেগতিক হয়ে দাঁড়ালে আমার হাত ধরতে দ্বিধা করো না।'

'সেটা কেবল তোমার দুএকটা আঙুল মটকে দিতে মনে চাইলে।'

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন উঠোন। বেড়ার কাছে বাচ্চাদের দুটো বাইসাইকেল জড়াজড়ি করে পড়ে আছে।

সদর দরজার বেল বাজাল আনিকা। দরজা খুলল বছর তিরিশেক বয়সী এক মহিলা। ওয়াল্টের স্ত্রী লিসা। দেখতে শুনতে লোকে যাকে স্থূলাঙ্গিনি বলে। মাথায় কটা রঙ চুল, চেহারা আন্তরিকতার ছাপ। চেক ফ্লানেলে শার্ট আর জিন্স পরেছে। অনিকা তাকে এক সময় ওয়াল্টের সঙ্গে কাজ করার কথা জানাল। তারপর মোহনীয় একটা হাসি উপহার দিল, এই হাসি ফিরিয়ে দেওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না। নিমেষে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলে গেল।  

দেয়ালে যমজ মেয়েদের ছবি সাঁটা আরামদায়ক একটা লিভিং রুমে এসে বসল ওরা। সবচেয়ে নতুনটায় দেখা যাচ্ছে ওদের বয়স বছর দশেক হবে। বেশ কয়েকটা ছবিতে ক্যামেরাম্যান ওয়াল্টকে বিখ্যাত জ্যাকের সঙ্গে কর্মব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। ওরা বসার পর ভদ্রভাবেই আনিকাকে বাধা দিল লিসা।  

'দেশের বাইরে কোনো অ্যাসাইনমেন্টে দুর্ঘটনাবশত ওয়াল্ট কোনো সন্ত্রাসী সর্দারের ছবি তুলে ফেলেছে ভাবছ তোমরা?'

আনিকা বলল, 'ঠিক। ওয়াল্টকে সবসময় ভালো মানুষ হিসাবেই জানি আমি। সম্প্রতি জ্যাকের ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথা শোনা যাওয়ায় ওর কোনো কোনো ক্যামেররাম্যান এই ধারণাকে সমর্থন করে আলামত হাজির করতে শুরু করেছে।'

'তোমাদের ধারণা ওয়াল্টের কাছে আলামত আছে...কিসের আলামত?'

'গত বছর শেষদিকে বৈরুতে একটা গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের পর ছবি তোলে ওয়াল্ট। রেকর্ড করা বেশিরভাগ অংশই পরে প্রচারিত হয়নি। ওই ফুটেজই পরখ করতে চাইছি আমরা। গহ্বর আর আবর্জনা ঘিরে জমায়েত হওয়া জটলার রেকর্ডিং দেখতে চাই। ও এখন কোথায় আছে বললে সরাসরি ওর সঙ্গে আলাপ করা যেত।' 

'কিন্তু সরাসরি জ্যাকের কাছেই যাচ্ছ না কেন?' জানতে চাইল লিসা। 

'জ্যাক মিল্টন তো জ্যাক মিল্টন,' বলল আনিকা। 'নিজেকে ঠিক এসবে জড়াতে চাইবে না সে। আসলে তোমার স্বামীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারলেই অনেক বেশি কাজ হবে বলে মনে করি আমরা।'

'আচ্ছা,' বলল সে, এক হাতে বাম পায়ের উপর থেকে অদৃশ্য কিছু ঝাড়ল। 'তোমরা কি করতে চাও, বুঝতে পারছি। পানির মতো পরিষ্কার। জানি না আমার কাছ থেকে কেন ওয়াল্ট আর জ্যাকের খবর জানতে চাইছ, তবে আমি তা জানাচ্ছি না। তোমাদের আমার স্বামীর হদিস দিতে যাচ্ছি না।'

'ম্যা'ম,' বলল তারিক।

'আমাকে শেষ করতে দাও।'

'অবশ্যই।'

দুহাত এক করল লিসা। 'তোমরা কারা, কি কাজ করো, আমি জানি না। কিন্তু আমার স্বামী আর জ্যাক এবং ওর প্রযোজকরা...ওরা ভীষণ অনুগত, একাট্টা একটা দল, সবসময় একে অন্যের দিকে খেয়াল রাখে। জ্যাক একটা বাকোয়াজ, অহঙ্কারী লোক, সত্যি বলতে কি আশপাশে থাকলে একটা যন্ত্রণা। কিন্তু ওয়াল্টের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে সে। ওর দলে বাকি সবার সঙ্গেও।'

উঠে দাঁড়াল সে। 'দয়া করে বিদায় হও। আমাকে আর বিরক্ত করতে এসো না। আমি কিধরনের আনুগত্যের কথা বলছি তোমরা বুঝলে ভালো হতো।'

কথা বলতে চাইছিল আনিকা, কিন্তু তারিক বাদ সাধল। 'আমরা ভালো করেই বুঝতে পারছি, ম্যা'ম। তোমাকে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।'

আরো কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল ওর, কিন্তু জোর করে নিজেকে বিরত রাখল। এখানে এই লিভিংরুমে থাকা সত্ত্বেও কেন যেন ওর কানের ভেতর জর্জিয়ার সেই রেসপিরেটরের গুঞ্জন বেজে চলেছে। সদর দরজা গলে বেরিয়ে এলো ওরা। নতুন স্যুটের পকেট হাতড়ে একটুকরো কাগজ বের করল তারিক, স্যুটের কাপড়ের বর্ণনা লেখা আছে ওতে। ওটার উল্টোপিঠে নিজের ফোন নাম্বার লিখল তারিক। 

'এই যে,' বলল ও। 'আমার সেল নাম্বার। তোমার মত পাল্টালে...কিংবা কিছু মনে পড়লে, দয়া করে আমাকে ফোন করো।'

'ভেবো না,' বলল সে। 'করব না।'

কিন্তু কাগজটা চট করে ফেলে দিল না সে। লক্ষণটা ভালো বলেই মনে হলো তারিকের। 

 

সন্ধ্যায় একসঙ্গে ডিনার করল ওরা। ডেজার্টে দামী চকোলেট মুজ ভাগাভাগি করে খেল ওরা। তিনটা কামড় দেয়ার পর আনিকা বলল, 'কুপারের বাড়ি থেকে জলদি বের হয়ে আসতে অস্থির হয়েছিলে তুমি।'

'আমাদের উপর ক্ষেপে উঠুক সে, চাইনি,' বলল তারিক। 'আমিও ওর উপর ক্ষেপে উঠতে চাইনি।'

'আমাদের উপর ক্ষেপে ওঠার ব্যাপারটা বুঝলাম। পথেঘাটে সহযোগিতার জন্যে রাস্তা ছেড়ে দেয়া সবসময়ই ভালো। কিন্তু ওর উপর ক্ষেপে ওঠা? কি কারণে?'

'কারণ আনুগত্য সম্পর্কে বলা ওর কথাগুলো। আ...আমি, খারাপ কিছু বলে বসতে পারি ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম, জ্যাক মিল্টনের কানে চলে যাওয়ার মতো কিছু।'

'যেমন?'

'যেমন, আনুগত্য মানে রবিন আর রেবেকার জন্যে আমরা যা করছি। জর্জিয়ায় কষ্ট পোহাচ্ছে ওরা দুজন। এটাই আনুগত্য...ওকে বলতে চেয়েছিলাম কথাটার মানে ভালো করেই জানা আছে আমাদের।'

বিল পরখ করে নগদ টাকায় মেটাল তারিক। নগদ টাকা সহজে নাগালে বা হদিস করা ডযায় না। 

বেশ রাত হয়ে গেছে। হোটেলের গ্লাস এলিভেটরে চেপে বত্রিশ তলায় উঠে এলো ওরা। নতুন স্যুটের নিচে সিগ সওয়ার পিস্তলের অস্তিত্ব অনুভব করল তারিক। আনিকা দরজার তালা খোলার সময় ওর সঙ্গে রইল ও। ওর দিকে তাকিয়ে আনিকা বলল, 'আমি ঠিক আছি।'

'জানি, কিন্তু তবু নিশ্চিত হতে চাই।'

তো ওকে পাশ কাটিয়ে কামরায় ঢুকে পড়ল তারিক -- কিং সাইজ বেড এবং কোণে একটা চেরি কাঠের ডেস্ক নিয়ে হুবহু ওর কামরার মতোই। কোনাগুলো পরখ শেষে আনিকার দিকে ফিরল ও, বিছানার কিনারে বসে আছে সে। 

ব্লেযার খুলে ফেলেছে ও, দৃশ্যমান কোনও অস্ত্র নেই; তবে ধারেকাছে থাকার ব্যাপারে ও নিশ্চিত। 

চমৎকার ফিট করেছে ওর ব্লাউজটা, মেয়েটার দেহসৌষ্ঠবের তারিফ না করে পারল না ও। বহু ঘণ্টার প্রশিক্ষণের কল্যাণে সুঠাম, ভয়ঙ্কর। 

আগের চেয়ে ঢের বেশি শিথিল আর অনেক স্থির মনে হচ্ছে। ও কামরা তল্লাশি করার সময় চুলে ও কি করেছে বুঝতে পারল না তারিক। কিন্তু এখনকার চেহারা বেশ লাগছে ওর। 

চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে আলগোছে পায়ের উপর পা তুলে বসল আনিকা, পায়ের হাইহীলের দিকে নজর গেল তারিকের। খাটের রেলিং হাত রেখে মাথা ছোঁয়াল সে। 

'সব ঠিক আছে?' জানতে চাইল সে। 

ওর সামনে এসে দাঁড়াল তারিক। ওর মসৃণ গালে হাত ছোঁয়াতে দেখে নিজেই অবাক হলো তারিক।

'সব ঠিক আছে,' বলল তারিক। 

চোখ মুদল আনিকা। 'বুঝতেই পারো, তোমার প্রটেকশনের দরকার নেই আমার।'

এখনও মসৃণ ত্বকে তারিকের হাত,  মনে মনে ভাবল, কেমন হবে স্বাদটা। 

'পুরোপুরি বুঝতে পারছি,' বলল ও। 'ততক্ষণ পর্যন্ত...'

তারিকের আঙুলে নিজের গাল চেপে ধরল আনিকা। 

'ততক্ষন পর্যন্ত,' বলে চোখ মেলে তাকাল সে। 

কামরা থেকে বেরিয়ে এসে পেছনে দরজা আটকে দিল তারিক। 

১৩

পরদিন সকালে গোসল, শেভ সেরে পোশাক গায়ে চাপানোর পরপরই দরজায় টোকার আওয়াজ কানে এলো ওর। সিগ সাওয়ার পিস্তলটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল তারিক। 'কে?' জানতে চাইল।

'আমি আনিকা।'

'দাঁড়াও।'

কবাটে পিপহোল আছে বটে, কিন্তু অভিজ্ঞতা আর ট্রেনিংয়ের সুবাদে ওটার ব্যবহার না করার ব্যপারে ভালোভাবেই সজাগ ও। স্রেফ একটা আইসপিক দিয়ে যে কেউ সর্বনাশ করে বসতে পারে। এমনকি সিকিউরিটি চেইন লাগানো অবস্থায়ও পাল্লা যথেষ্ট ফাঁক করে ফুটো দিয়ে শটগানের ব্যারেল ঠেসে দিয়ে এক গুলিতে দুটুকরো করেও দিতে পারে ওরা। 

এর আগে দরজা খোলা থাকার সময় বাথরুমের একটা আয়না ব্যবহার করে হলওয়েতে নজর চালিয়েছে ও। তখন আনিকাকে একাই হাতে দুটো বাদামী কফি কাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। 

চেইন আলগা করে সিগ সাওয়ারটা কোমরের বেল্টে গুঁজে রাখল তারিক। ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দিল আনিকাকে। দেখে মনে হচ্ছে গতকালের জামাকাপড়ই পরে আছে মেয়েটা, কিন্তু অবাক ব্যাপার সামান্যতম ভাঁজও পড়েনি। সে ভেতরে ঢোকার মুহূর্র্তে এঁটে বসা স্কার্টের নিচে দীর্ঘ সুডৌল পাজোড়া জরিপ করল ও। হাঁটার সময় পায়ের গোছার পেশিগুলো কিলবিল করছে। 

একটা কাপ ওর হাতে তুলে দিয়ে পেছনে দরজাটা আটকে দিল আনিকা। স্যালুট দেয়ার ঢঙে কাপটা উঁচু করে ধরে বলল, 'ওয়াল্ট কুপারের হদিস জানি আমি, তারমানে জ্যাক মিল্টনের পাত্তা মিলবে।'

'কোথায়?' জানতে চাইল তারিক। 

'তুর্কী-সিরিয় সীমান্তে কার্কামিসের রিফিউজি ক্যাম্পে। জ্যাক খবরের ছবি তুলছে ওখানে। সঙ্গে গেছে ওর বিশ্বস্ত ক্যামেরাম্যান ওয়াল্ট কুপার।'

'ভালো দেখিয়েছ,' বলে সন্তোষের সঙ্গে কফির কাপে চুমুক দিল ও। ঠিক ওর পছন্দমতো ফরমাশ দেয়ায় মনে মনে আনিকার তারিফ করল। 'কোত্থেকে যোগাড় করলে এই খবর?' জানতে চাইল। 

কামরার চেরিউড টেবিল আর ওটার সঙ্গে মানানসই চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেল আনিকা। বসে তারপর বলল, 'ওর স্ত্রীর সঙ্গে লম্বা টেলিফোন আলাপ থেকে।'

এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসল তারিক। সেনাবাহিনীতে থাকতে গড়ে ওঠা অভ্যাসবশত বিছানা গুছিয়ে রেখেছে ও। আগের রাতে অনুভব করা কিঞ্চিৎ ঝলক এখনও হারিয়ে যায়নি, খেয়াল করল। 

নিশ্চিত ভুলে যাওয়া হয়নি সেটা। 

এদিক ওদিক তাকিয়ে আনিকার তারিক থেকে নজর সরিয়ে রাখার চেষ্টায় বোঝা যায় ভোলেনি সেও। 

'আমার তো ধারণা ছিল আমেরিকানদের উপর নজরদারি করো না তোমরা,' বলল তারিক। 

হেসে কফির কাপে ছোট্ট একটা চুমুক দিল আনিকা। 'তা অবশ্যই করি না।'

'তাই?'

'হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওদের ইমেইল পড়তে পারি, টেলিফোনে আড়িপাততে পারি, ওদের বিদেশ থেকে আসা চিঠি হাতিযে নিতে পারি, কিন্তু জীবনেও ওদের উপর নজরদারি করি না। তুমি জানো, এটা বেআইনি।'

'হ্যাঁ, আমাদের সঙ্গে কাটানো সময়ে আইনের প্রতি তোমার শ্রদ্ধা যে কত গভীর তাতো দেখেছি।

'অশ্রদ্ধার মানে তো এই না যে আমাকে সেটা থেকে দূরে থাকতে হবে।'

'বুঝলাম,' বলল তারিক। 'তা জ্যাক আর কুপার ওই রিফিউজি ক্যাম্পে কতদিন থাকবে?'

'নিশ্চিত নই আমি,' বলল আনিকা। 'কাছেই গাযিয়ানতেপ নামে বড়সড় একটা শহর আছে। প্লেনে করে ওখানকার এয়ারপোর্টে গিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা রিফিউজি ক্যাম্পে চলে যাও। মাত্র চার কিলোমিটার দূরে।'

'যাত্রার ব্যবস্থা করতে পারবে?' জানতে চাইল তারিক। 

'প্লেনের ব্যবস্থা তো অবশ্যই। জমিনে...সেটা বরং তুমিই সামাল দাও। অবস্থা বেগতিক হলে...'

'হ্যাঁ, হ্যাঁ, জানি, তুমি কি আঙ্কল স্যামের কিছু করার থাকবে না।'

'অবশ্য তোমার জন্যে ডিসপোজেবল কাভারের ব্যবস্থা করে দিতে পারব। চলবে?'

কাভার ছাড়া বিদেশের মাটিতে চলাফেরা করার মানে পুরোপুরি নিজের দায়িত্ব নিজের পথে চলা, ঝামেলার সময় কোথাও থেকে সাহায্য মিলবে না। কাভারসহ চলাফেরা করার মানে তোমার কাছে দলিলপত্র আর পাসপোর্ট আছে। এসব কাগজ জানাচ্ছে তুমি হলে মার্কিন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ধরনের কিছু। তখন সরকার যত ঝামেলাই হোক, তোমার পিছে থাকবে। 

ডিসপোজেবল কাভারও অনেকটা সেরকম। তবে মন্দ লোক (কিংবা তোমার উপর খাপ্পা থাকলে ভালো মানুষেরও) কড়া যাচাইয়ে সেটা ধসে পড়তে পারে। তখন তোমার পাসপোর্ট আর কাগজপত্রই কালো টাকা আর অশুভ শক্তির কাজ হিসাবে তোমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হবে, কোনও সরকারী অফিসিয়াল সিস্টেমের ফল নয়। 

তবু, নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো।

'ঠিক আছে, তাই করো,' বলল ও। 

গুড, কারণ আমার কাছে আর কোনও উপায়ও নেই,' বলল আনিকা। 'আরও একটা ব্যাপার রয়ে যাচ্ছে। তোমার কাছে কলম আছে?'

'আচ্ছা, তোমার ব্যক্তিগত নম্বর দিচ্ছ নাকি?'

সাইড ব্যাগ থেকে -- কখনওই ওটাকে পার্স বলে না তারিক -- একটা রুপালি কলম বের দিল আনিকা। টোপ গিলল না সে। 'প্রয়োজনের সময় কাজে লাগিয়ো ওটা,' বলল সে। 

কলমটা প্যান্টের পকেটে রেখে দিল তারিক। 'ঠিক আছে, ম্যা'ম।'

খাটের এক কিনারে এসে ব্যাগ তুলে নিয়ে প্যাক করতে শুরু করল তারিক। 

'জ্যাক মিল্টনের দেখা মিললে কি করবে ভেবেছ?' জানতে চাইল আনিকা। 

'ওর কাজকর্মের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেব,' বলল ও। খোলা সাইড পকেটগুলোর চেইন আটকাল। 

'ওটা বাদে,' আবার বলল আনিকা। 

'সেটা দেখার জন্যে তুমিও সঙ্গে চলো না কেন?'

আনিকা মাথা নাড়ল। 'আমার যাওয়ার উপায় নেই।'

'ভালো সিদ্ধান্ত,' বলল তারিক। 'তুরস্ক আর সিরিয়ার সীমান্ত এলাকা গোলমেলে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তোমার না যাওয়াই ভালো।'

ওর চোখজোড়া সরু হয়ে উঠল, যেন প্রায় বেড়ালের চোখ। যেমন তেমন বেড়াল নয়। 'তোমাকে জানিয়ে রাখছি, আজ বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউসে একটা ইন্টেলিজেন্স মিটিংয়ে যাচ্ছি আমি। তা না হলে তোমার পাশেই হয়তো থাকতাম।'

তারপরই ক্ষিপ্ত বিড়ালের মতো শেষ শব্দটা উচ্চারণ করল সে: 'তারিক।'

  • [চলবে]

Related Topics

টপ নিউজ

স্পাই থ্রিলার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয় থেকে পাওনা পরিশোধ করবে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো: গভর্নর
  • ‘আমার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের পূর্ব থেকেই তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল,’— শ্বশুরের বিচারপতি হওয়া নিয়ে সারজিস
  • হাসনাতকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলে ফেসবুক পোস্টে যা শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা
  • ‘জবাব সন্তোষজনক নয়’: তিন মাসের জন্য ফজলুর রহমানের দলীয় পদ স্থগিত করল বিএনপি
  • আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোক, আল্লাহ যেন আমৃত্যু সেখানে অটল রাখার তৌফিক দেন: দলীয় পদ স্থগিতের পর ফজলুর রহমান
  • ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নরকে বরখাস্ত করছেন ট্রাম্প, মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

Most Read

1
অর্থনীতি

প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয় থেকে পাওনা পরিশোধ করবে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো: গভর্নর

2
বাংলাদেশ

‘আমার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের পূর্ব থেকেই তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল,’— শ্বশুরের বিচারপতি হওয়া নিয়ে সারজিস

3
বাংলাদেশ

হাসনাতকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলে ফেসবুক পোস্টে যা শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা

4
বাংলাদেশ

‘জবাব সন্তোষজনক নয়’: তিন মাসের জন্য ফজলুর রহমানের দলীয় পদ স্থগিত করল বিএনপি

5
বাংলাদেশ

আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোক, আল্লাহ যেন আমৃত্যু সেখানে অটল রাখার তৌফিক দেন: দলীয় পদ স্থগিতের পর ফজলুর রহমান

6
আন্তর্জাতিক

ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নরকে বরখাস্ত করছেন ট্রাম্প, মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net