প্রেসিডেন্টের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ, কারফিউ জারি শ্রীলঙ্কায়

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করার পর বিগত ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাতেই রাজধানী কলম্বোসহ সংলগ্ন কয়েকটি ডিভিশনে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী কলম্বোতে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে।
পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট আমাল এদিরিমান্নে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর চারটি পুলিশ ডিভিশনে কারফিউ জারির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গোটাবায়ার বাসভবনের দিকে যাওয়ার সড়কটিতে একটি বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালায় বিক্ষোভকারীরা; তারও আগে কয়েকজন হেলমেট পরা মোটরসাইকেল আরোহী একটি প্রাচীর ভেঙে দেয় এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে ইট ছুঁড়ে মারে।
২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি অর্থনৈতিকভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশটি এখন কোনো কিছু আমদানি করতে পারছে না; কিনতে পারছে না জ্বালানি তেল, ওষুধ ও খাবার।
জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদিত হচ্ছে না বিদ্যুৎও; ফলে টানা ১৩ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয় সেখানে। এতে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সবাই।
এর আগে বুধবার শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ খাত নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন থেকে দিনে ১০ ঘণ্টা দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে সেখানে।
তাছাড়া বৃষ্টি না হওয়ায় দেশটির বেশিরভাগ জলাধারের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। যে কারণে জলবিদ্যুতেও ভাটা পড়েছে। শ্রীলঙ্কার মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে।
এক মুখপাত্র জানান, সরকার সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শীঘ্রই সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচি নিয়ে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা শুরু করবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকার সড়ক বাতিগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রী পবিত্রা ওয়ানিয়ারাচ্চি সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিজেলের ক্রমাগত ঘাটতি বিদ্যুৎ সংকট বাড়িয়ে তুলছে এবং শেয়ার মার্কেটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি তো রয়েছেই।
শনিবার ভারত থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্রেডিট লাইনের অধীনে ডিজেলের চালান আসার কথা রয়েছে। এটি চলমান সংকটের সমাধান করবে না স্বীকার করে নিলেও ওয়ানিয়ারাচ্চি বলেন, এর মাধ্যমে লোডশেডিংয়ের সময় কমাতে তারা কিছুটা সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে পাওয়ার কাটের কারণে ব্রোকারদের অনুরোধে কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) চলতি সপ্তাহের বাকি দিন দৈনিক লেনদেনের সময়সীমা সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টায় নামিয়েছে।
- সূত্র- এএফপি, রয়টার্স