মার্কিন নির্বাচন ২০২০: প্রেসিডেন্ট পদে লড়া আরও ১২১৪ প্রার্থীর কথা

২৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতি শাসিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এবং একমাত্র স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলই বেশি গণমাধ্যমের মনোযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণার অনুদান পায়, ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় স্বতন্ত্র বা অন্য কোনো প্রার্থীর জয়লাভের সুযোগ থাকেনা।
তবু সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায় থাকা সত্ত্বেও অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ১২১৬ জন।
স্বতন্ত্র পদপ্রার্থীদের এমনই তিনজনের সাথে কথা বলেছে বিবিসি। তাদের একজন কনসার্টের পিয়ানো বাদক, আরেকজন প্রযুক্তিবিদ এবং অন্যজন ক্রিপ্টো বিলিওনিয়ার।
জেড সিমনস একজন পিয়ানো বাদক, সাবেক মডেল ও যাজক এবং মোটিভেশান বক্তা।
তিনি জানান, 'বর্তমান সময়ে প্রচলিত এবং স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে যাওয়ার অবকাশ নেই। আমি একজন নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীর সন্তান। আমার বাবা আমাকে যেভাবে বড় করেছেন, অন্যায় অবিচার দেখলে নিজেই তা প্রতিরোধে জন্য কাজ করার শিক্ষা পেয়েছি আমি।'

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সকলের সমান রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করাই তার লক্ষ্য। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের যেই নিয়ম তৈরি হয়েছে তার সমালোচনা করেন তিনি। তিনি রক্ষণশীল নাকি প্রগতিশীল জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ' আমি পূর্বে যাজকের দায়িত্ব পালন করেছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি রক্ষণশীল।
সিমনসের নাম শুধু ওকলোহামা ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ব্যালটের থাকবে। এই নিয়মকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা বলে মনে করছেন তিনি। এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার জন্য নির্বাচনে তার অস্তিত্ব জানান দেয়াই সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে করছেন তিনি।
ব্রক পিয়ার্স ইতোপূর্বে শিশু অভিনেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ায় তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনি জানান, ' আমি মনে করি ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে আমরা সন্দিহান। আমরা কেমন জীবন চাই বা ২০৩০ সাল নাগাদ কী করতে চাই, আমরা কী করার চেষ্টা করছি তা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা ও পরিকল্পনা নেই। লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ এবং কী করতে চাই তা নিয়ে আমার নিজস্ব পরিকল্পনা আছে।'

গত চার বছর ধরে পিয়র্সের সংগঠন পুয়ের্তো রিকোতে মানব সেবামূলক কাজ করছে। মহামারির শুরুতে সামনের সারির কর্মীদের পিপিই দেওয়ার জন্য তিনি কয়েক মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহের কাজ করেন।
আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য কী হওয়া উচিৎ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুধু উন্নয়নের খাতিরে উন্নয়নের কাজ বন্ধ করতে হবে। সুস্থ ও সুখী জীবন ও স্বাধীনতাই হবে উন্নয়নের মানদণ্ড। '
নাভাজো সম্প্রদায়ের মার্ক চার্লস পেশায় একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। পাশাপাশি তিনি একজন আদিবাসী অধিকার ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন কর্মী। ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেনকে উপযুক্ত প্রার্থী মনে করেন না এমন নাগরিকদের জন্য বিকল্প প্রার্থী হয়ে ওঠাই তার লক্ষ্য।

তিনি বলেন, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগে থেকেই এই ভূমি আদিবাসীদের ছিল। তারা এখনো এখানে বাস করছেন। আমি এখানে থাকতে পেরে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং তাদেরকে যথাযথ সম্মান দেয়ার ব্যবস্থা করতে চাই।
আমার নির্বাচনী প্রচারণার মূল কথা হলো, সংবিধানে উল্লিখিত জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে জাতিগঠন করতে চাইলে, যেখানে জনগণের সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষকে যুক্ত করে আমাদের কিছু মৌলিক কাজ করতে হবে। শুধু মুখে বলে আশা করে বসে থাকলেই চলবে না। এই জাতিগঠনের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করা বর্ণবাদ, লিঙ্গ বৈষম্য ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ শুরু করতে হবে।