ডিসেম্বর প্রান্তিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ৫৬% বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ জনগণের জন্য আর্থিক সেবার সহজ প্রবাহের ফলে ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ৫৬ শতাংশ বেড়ে ২৪,০২৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের একই সময়ে ঋণ বিতরণ ছিল ১৫,৪০৭ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। আর টাকা জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
এদিকে, আগের বছরের তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা করা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ যথাক্রমে ১৫.৪০ শতাংশ এবং ২১.১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্রমাগত সম্প্রসারণের কারণে অনেক গ্রামীণ ব্যক্তি, যারা আগে ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিলেন, তারা সহজে ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। এটি ঋণের প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল মোমেন বলেন, "এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছিল গ্রামীণ জনগণকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য। আগে আমরা গ্রামীণ অঞ্চলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতাম। তবে এখন আমরা সরাসরি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করছি।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ব্র্যাক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার আউটলেট তৈরি করেছে। সেখানে প্রতি গ্রাহককে গড়ে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয় এবং সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ২ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা ও ঋণ বিতরণ
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে আমানত ছিল ৪১,৯৫৫ কোটি টাকা। তবে, লোন-টু-ডিপোজিট অনুপাত এখনও তুলনামূলকভাবে কম, ৫৭.২৭ শতাংশ, কারণ বেশিরভাগ ব্যাংকই এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি।
যদিও ব্যাংকগুলো তাদের মোট আমানতের ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে, তবুও এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে ঋণ দেওয়ার অনুপাত অনেকটাই কম।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক ২১ হাজার ২৪৮টি আউটলেটের মাধ্যমে ১৬ হাজার ২১ জন এজেন্টের সাহায্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিয়েছিল। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬ লাখ ১০ হাজার ৪০৫। এর মধ্যে ৮৫.৬০ শতাংশ ছিল গ্রামীণ গ্রাহক এবং ৪৯.৭৭ শতাংশ ছিল নারী হিসাবধারী।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল। ৭০ লাখ ৫৪ হাজার ১৪৮টি হিসাব নিয়ে তাদের বাজার শেয়ার ছিল ২৯.৩০ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়া ২৯ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক ২০.৯২ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ৪.১৮ শতাংশ এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৪.১৭ শতাংশ বাজার শেয়ার নিয়ে পরবর্তী অবস্থানে ছিল।
আমানত সংগ্রহের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার মোট ৮০.০৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এরমধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৩৯.০৩ শতাংশ শেয়ার নিয়ে শীর্ষে ছিল। ডাচ-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংক পরবর্তী অবস্থানে ছিল।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক আধিপত্য বিস্তার করেছে। মোট ঋণের ৬৭.২২ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ১৫২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে এই খাতে মোট ঋণের ৯৪.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল, নিরাপদ বিকল্প ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা। সাধারণত ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া যায় না এরকম গ্রামাঞ্চলে এবং দূরবর্তী এলাকার মানুষদের জন্য নিরাপদভাবে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য।